সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
একাদশে ভর্তি ১৫-২৫ জুলাই ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আশঙ্কা কেটে গেছে বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

গোমস্তাপুরে কুরবানির জন্য প্রস্তুত ৪৫ হাজার পশু, ব্যস্ত খামারিরা

Paris
Update : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

গোমস্তাপুর সংবাদদাতা

মুসলমানদের জন্য বছরে দুটি ধর্মীয় উৎসব রয়েছে। একটি পবিত্র ঈদুল ফিতর আরেকটি পবিত্র ঈদুল আযহা। একমাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলমানদের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর আসে আল্লাহর রহমত নিয়ে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দুই মাস দশ দিন পরে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলমানদের কাছে এসে হাজির হয় পবিত্র ঈদুল আযহা। দুটি ঈদ কে ঘিরেই চলে মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দ। উৎসবে মেতে উঠে ছোট বড় সবাই। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আযহার আগমন লগ্নে মুসলমানদের মধ্যে শুরু হয় কোরবানির পশু ক্রয়ের প্রতিযোগিতা। অনেকে আবার বিশাল সাইজের পশু কোরবানি দিয়ে অস্তিত্ব প্রকাশ করে। কোরবানির সময়ে অনেক গরিব মানুষ কোরবানি দিতে না পেরে ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাংস পাবার আশায়। সারাদেশের মতো গোমস্তাপুর উপজেলায় চলছে কোরবানির ঈদ নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা। আর দুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আযহার শুভক্ষণ আসবে মুসলমানদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার পশু। তন্মধ্যে ১৯৯৫৪ টি ষাঁড় গরু, ৬৭৯৮ টি বলদ গরু, ৭১২৬ টি গাভী, ৬৮ টি মহিষ, ৬৯৬৬ টি ছাগল, ৩৫৭৯ টি ভেড়া ও গাড়ল। সব মিলিয়ে ৪৪৪৬১ টি। তবে এই পশু গুলোর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৬৫ টি পশু গোমস্তাপুর উপজেলায় কোরবানির জন্য বরাদ্দ। বাকি পশুগুলো স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী ও খামারিদের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে সমস্ত পশুগুলো বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলো উচ্চ দাম পাবার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

গোমস্তাপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র গোমস্তাপুর ইউনিয়ন থেকেই প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার গরু বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব পশুগুলো লালন পালন করে বিক্রয়ের জন্য উপযোগী করে তোলা হয়েছে। গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রায় ৮০ /৯০টি ফার্ম রয়েছে। এইসব ফার্ম গুলোতে দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশী জাতের গরুও লালন পালন করা হয়। উল্লেখযোগ্য ফার্মগুলোর মধ্যে রয়েছে আশীর্বাদ ডেইরি খামার, সরকার ডেইরি ফার্ম, মাসুদ ডেইরি ফার্ম, মমতাজ ডেইরি ফার্ম, চাপাই এগ্রো ডেইরি ফার্ম ও মোটাতাজাকরণ,  মুসাব্বির ডেইরি ফার্ম ও নুহু ডেইরি ফার্ম উল্লেখযোগ্য। এসব ফার্মে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে গরুসহ বিভিন্ন পশুকে লালন পালন করা হয়। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নেওয়া হয়। এক একটি ফার্মে কম করে ২০ টি থেকে  প্রায় আশিটি গরু থাকে।

এ প্রসঙ্গে কথা হলে আশীর্বাদ ডেইরি ফার্ম, রহনপুরের মালিক শ্রী মনোতোষ চক্রবর্তী বলেন, আমার ফার্মে  ৬৫ টি গরু রয়েছে।  তাদের মধ্যে  ৮ টি ষাঁড়  বিক্রয়ের জন্য তৈরী করেছি। একেকটি ষাঁড়  গরুতে প্রায় ৮ থেকে ১৫ মন মাংস হতে পারে। দাম আশা করছি ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা  পর্যন্ত।  গরুগুলো কে আমি ঘাষ ও দানাদার খাবার খাইয়ে প্রস্তুত  করেছি। মোটাতাজাকরণ এর জন্য কোন পদ্ধতি  গ্রহণ করিনি। আমি নিজেই আমার  খামারের  গরুগুলোর দেখাশোনা করে থাকি। আশা করছি উপযুক্ত  মুল্য দিয়েই গরুগুলো  বিক্রয় করতে পারবো।

এদিকে কোরবানিকে সামনে রেখে কসাইদের মধ্যে প্রচুর ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে আবার তাদের পশু কুরবানী দেওয়ার জন্য আগে থেকে কসাইদের বুকিং দিয়ে রাখেন। ফলে গোমস্তাপুর উপজেলায় যে সমস্ত কসাইগণ পশু জবাইয়ের কাজ করে থাকেন তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জনের পশু কুরবানী দেওয়ার জন্য বুকিং হয়ে গেছেন। কসাইদের মধ্যে অনেকে এলাকা ছেড়ে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই অধিক লাভের আশা। এলাকায় কুরবানী দেওয়ার জন্য কসাইদের কমপক্ষে গরু প্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। ঢাকায় এক একটি গরু কোরবানি করার জন্য কসাইদের ১০০০০ থেকে ১২০০০ টাকা প্রদান করতে হয়। এত অর্থ দিয়ে কোরবানির গরু জবাই করার জন্য অনেকে আবার কসাই চেয়েও পান্না। ফলে তাদেরকে নিজেদের পশু নিজেদেরকে কোরবানি দিতে হয়।

কোরবানির পশু জবাই করা নিয়ে কসাইদের ব্যস্ততা নিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলার কয়েকজন কসাইয়ের সাথে আমাদের কথা হয়। কসাই কালাম, খোরশেদ ও মনিরুল জানায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমরা একটু ব্যস্ত সময় পার করি। অনেক সৌখিন মানুষ নিজেরা নিজেদের পশু কোরবানির জন্য জবাই না করে আমাদেরকে দিয়ে করায়। এ সময়টা আমরা কাজে লাগাই। প্রকারভেদে আমরা বিভিন্ন ছাগলে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত নিয়ে থাকি। তাছাড়া গরু প্রতি আমরা প্রকারভেদে ৫০০০ থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত নিয়ে থাকি। একেক জন কসাই ঈদের দিন ও ঈদ পরবর্তী দুইদিন কোরবানির পশু জবাই করে তা প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য তৈরি থাকে। আমরা একেকজন কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি গরু ও কয়েকটি ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে দিই।

এছাড়া পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামারদের মধ্যেও বেড়েছে ব্যস্ততা। কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য যে সমস্ত ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন হয় সেগুলো কোরবানির ঈদের আগেই  শান দিয়ে রাখার জন্য কামারদের নিকট যেতে হয়। এই উপজেলায় যে সমস্ত কামার অস্ত্র স্থান দেওয়ার কাজ করেন তাদের কারো ফুরসত নেই এখন। দিনরাত কাজ চলছে তাদের। টুংটাং শব্দে চলছে পশু জবাইয়ের অস্ত্র যেমন হাসুয়া, বটি,, রামদা, কোপ্তা, ইত্যাদি শান দেওয়ার কাজ। এ প্রসঙ্গে কথা হয় রামপুর কলোনি মোটরসুখল কামারের সাথে। তিনি বলেন, আমার এখন প্রচুর ব্যস্ত সময় কাটছে। প্রতিবছর এই সময়টাতে আমি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করে থাকি। গত বছর প্রায় ৩৫ হাজার টাকা আয় করেছিলাম। এবছরও কাজ রয়েছে তবে একটু কম মনে হচ্ছে। দেখা যাক কোরবানির ঈদের আগের দিন পর্যন্ত কত টাকা আয় করতে পারি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ডাক্তার কাউসার আলী জানান, কোরবানির জন্য যে সমস্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে বর্তমানে তাদের মধ্যে কোন রোগ বালাই নেই। তবে কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ইনজেকশন প্রয়োগ করে এবং কৃমিনাশক ইনজেকশন অথবা ট্যাবলেট প্রয়োগ করে পশুকে উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে সকল ছুটি বাতিল করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোরবানির সময় কাছে আসার কারণে কোরবানির জন্য উপযোগী গরু বা ছাগলকে একটু কম খাওয়া দাওয়ার জন্য সকলকে পরামর্শ  দেয়া হচ্ছে।  এছাড়া সচেতনতার জন্য গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও রহনপুর পৌরসভায় খামারি ও যারা  বাসায় গরু লালন পালন করেন  তাদের কে প্রতিনিয়ত আমার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। কোরবানির পশু যেন সঠিক নিয়মে জবাই করা হয় যেমন রক্ত বের হয়ে দম চলে যাওয়ার পর চামড়া ছিলার কাজ শুরু করার জন্য কসাইদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোরবানির পশুর রক্ত ও বর্জ্য যাতে যত্রতত্র ফেলে না দেয় বরং পুতে ফেলা হয়  সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris