সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবারের ভোটে পুরাতন অধিকাংশ বিজয়ী কাউন্সিলরদের জন্য আগামীতে বড় চ্যালেঞ্জ?

Paris
Update : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার

এবারের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হবার দৃশ্যপট বা ভোটযুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে গেছে সকল প্রার্থীকেই। এমন মন্তব্য নির্বাচনকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক বিচার বিশ্লেষকসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও স্থানীয়দের। এবারের ভোটে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০টি ওয়ার্ডে পুরাতনদের মধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন ২৪ জন আর নতুন মুখ এসেছেন ৬ জন। তবে পুরাতন যারা পুনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশর ক্ষেত্রেই ‘নাকের ডগা’র উপর দিয়ে পরাজয় হাতছানি দিয়ে গেছে। আর এটা হবার কারণ হলো, নাগরিকসেবার বিষয়টিকে অবহেলা করা। এবারের নির্বাচনে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে ভোটের ব্যবধান ছিল গেলবারের চাইতে একবারে কম। অল্পভোটের ব্যবধানে বিজয় বড় একটি চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত বলে মন্তব্য সচেতন ব্যক্তিদের। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পাঁচ বছরসহ কয়েকটার্ম দায়িত্ব পালন করার পরেও বিজয়ের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সময়ের চাইতে এবার ভোট ব্যবধানের নিম্নমূখীতা, নতুন প্রার্থীদের সাথে ভোটযুদ্ধে ‘তীরে এসে তরি ঢোবাবস্থা, আনুপাতিক হারে কমসংখ্যক ভোট পাওয়ার প্রবণতার বিষয়গুলো স্পষ্টতই বুঝিয়ে দেয় যে, নাগরিক সেবারমানে কমতির বিষয়টি।

এবারের নির্বাচনের ভোটের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২৩নং ওয়ার্ডে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী নতুন একজন প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৫৬ ভোট ব্যবধানে। গেলবার তিনি ভোট পেয়েছিলেন ২২৫৬টি। ঐসময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মইফুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১৮৮১ ভোট। পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে নতুন মুখের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মেহেদি হাসান রনি পেয়েছে ২১৩৩টি ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বির ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫২টি। আর পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও মাহতাবের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩৩৩টি। ২২নং ওয়ার্ডে আব্দুল হামিদ সরকার টেকোন একাধিকবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পরেও এবারের নির্বাচনে মাত্র ১৮২ ভোট ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে অনেকেই বলছেন বিজয়ের পরেও ব্যর্থতা।  এদিকে, তৌহিদুল হক সুমন ১৯নং ওয়ার্ডে দ্বিয়ীতবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও গেলবারের চাইতে অর্ধেকের বেশিতে নেমে এসেছে ভোট ব্যবধানের সংখ্যা। বিএনপি থেকে বহিস্কৃত একজন প্রার্থীর সাথে তাকে লড়তে হয়েছে আদাজল খেয়ে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সুমন পেয়েছিল ৮৯০৮ ভোট। সেবার তিনি নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নূরুজ্জামান টিটোকে হারিয়েছিলেন ২০২৮ ভোট ব্যবধানে। কিন্তু পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকার পর ভোট ব্যবধান বৃদ্ধির পরিবর্তে হয়েছে নিম্নগামী। এবারের নির্বাচনে ঐ একই প্রার্থীকে তিনি পরাজিত করেছেন মাত্র ৯৮৩ ভোটে। পাঁচ বছর পরে সুমনের ভোট কমেছে ৩৩৬৭টি। বিষয়টিকে অনেকেই বলছেন অশুভ সংকেত। ২৮নং ওয়ার্ডে আশরাফুল হোসেন বাচ্চু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন ৮১৮ ভোট ব্যবধানে। পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকার পর ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন ৮৬৪ ভোট ব্যবধানে। ভোট ব্যবধান বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৬টি। এদিকে ৫নং ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন ৩৩৪২টি ভোট পেয়ে। পাঁচ বছর পর এবার তিনি ২০৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার ভোট বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১২৬২টি ভোট। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ড থেকে নুরুজ্জামান টুকু বিজয়ী হয়েছিলেন ১৭৪০ ভোট ব্যবধানে। এবারের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে সেই ভোট ব্যবধান হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ১০৮৯ ভোটে। গেলবারের চাইতে  প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাও কমেছে ৬১৪টি। রাসিকের ১৫ নং ওয়ার্ডে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গেলবার নির্বাচনে আব্দুস সোবহান লিটন ১৬৭১ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ১২০ ভোটের ব্যবধানে। গেলবার ১৬নং ওয়ার্ডে বেলাল আহম্মেদ ১০৪৫ ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও এবারের নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে ভোট ব্যবধান  হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ৬০৪ ভোটে। এরকম আরো ওয়ার্ডে বিজয়ীদের ভোটের ব্যবধান ছিলো পরাজিতদের চেয়ে একবারে কম।

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, এবার অনেক ওয়ার্ডে নতুন প্রার্থীরা বেশ ভাল করেছে। আর পুরাতনদের ভোট হ্রাসের কারণ হতে পারে জনগণের সাথে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি। এছাড়াও অনেক প্রার্থী ও সমর্থকরাও লিটন ভাইয়ের জন্য নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন। ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার এবারো বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে সকলের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে, জনগণের সুখ-দুঃখের সময় পাশে থাকার চেষ্টা করতে হবে, সকলকে সম্মানের চোখে দেখতে হবে। এছাড়াও স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বজনপ্রীতি পরিহার করে ওয়ার্ডবাসির কষ্টের সময় তাদেরকে যথাসম্ভব সাহায্য সহোযোগিতা করতে পারলে নির্বাচনকালীন সময়ে ভোট ব্যাংক নিয়ে কোন ধরণের দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন পড়বে না কোন প্রার্থীর বলেই আমি মনে করি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২৭ ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধ হয়েছে শ^াসরুদ্ধকর। যেসকল ওয়ার্ডে খুব কম ভোট ব্যবধানে দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন তারা জয়লাভ করলেও এটা তাদের ব্যর্থতারও একাটি অংশ। কারণ বিগত পাঁচ বছরে রাসিক মেয়রের নগরজুড়ে চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের ফলশ্রুতিতেই অধিকাংশ ওযার্ডে দলীয় প্রার্থীরা যতসামান্য ভোট ব্যবধানে হলেও জয় রাভ করেছে। কিন্তু, যেটা হওয়া উচিত ছিল নিজ নিজ যোগ্যতায়। জয়ের ক্ষেত্রে ভোট ব্যবধানের নিম্নমুখিতার বিষয়টি এখন বিজয়ীদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জও বটে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris