শাহানুর রহমান রানা
রাজশাহী মহানগরী ছাড়াও শহরের আশেপাশের উপজেলাগুলোতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের দৌরাত্ম আর ঝুঁকি সম্পর্কে সবারই জানা। শহরাঞ্চলে এর দৌড়াৎ আরো বেশি। সড়কে দূর্ঘটনার প্রধান ও অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এই ইজিবাইক ও অটোরিক্সার বেপরোয়া চলাচল বলে মন্তব্য অনেকের। দূর্ঘটনার আরো কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলার প্রবণতা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, প্রশিক্ষণবিহীন চালকের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং। এসব যান একদিকে যেমন ঝুঁকি, ঠিক অন্যদিকে, লেড অ্যাসিড ব্যাটারির কারণে পরিবেশবান্ধব নয়।
৩০ মে মঙ্গলবার সকাল ৮:২০ মিনিটে নগরীর শালবাগানস্থ পাওয়ারহাউস মোড়ে এসে দাড়ায় একটি ইজিবাইক। গাড়িটিতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল বারো জন। কোথায় থেকে এলেন এতো যাত্রী নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে চালক জানান, গোদাগাড়ি থেকে আসলাম। এতো যাত্রী নিয়ে কিভাবে এলেন এতো দূর জানতে চাইলে, প্রশ্ন শেষ করার আগেই বিপরীত থেকে ভেঁসে এলো আরো দুজন ছিল; অর্থ্যাৎ ঐ ইজিবাইকে সর্বমোট যাত্রীর সংখ্যা ছিল চৌদ্দ জন ! দুজন যাত্রীকে নগরীর বহরমপুর মোড়ে নামিয়ে অবশিষ্ট বারোজন শ্রমিককে নিজ নিজ কর্মস্থলে নামানোর জন্য যাচ্ছিল ছোটবনগ্রাম এলাকা হয়ে ভদ্রা আবসিক এলাকার দিকে বলে জানান ইজিবাইক চালক। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ কিংবা প্রশাসনের বাঁধার মুখে পরেননি প্রশ্ন ছুড়ে দিলে ঝটপট স্থান ত্যাগ করে যাবার কালে বলেন, সবকিছু ম্যানেজ করি ভাই! যাত্রী ও চালকদের জীবনের স্বার্থে মহাসড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল বন্ধ করার জন্য, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অবৈধ থ্রি হুইলার ও ইজিবাইক চিহ্নিত করে সেসব অপসারণ করতে আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু পরে আরেকটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের আদেশে মহাসড়ক ছাড়া অন্য সব সড়কে এসব ব্যাটারিচালিত যান চলার বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত ও আপীল বিভাগের সেই আদেশ উপেক্ষা করে চরম ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে অহরহ চলছে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার ও ইজিবাইক। শুধু চলছেই না, নিয়মনীতি ভঙ্গ করে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইকগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগুলো দেখেও কেনো দেখেনা সেটি এখন প্রশ্ন সচেতন মহলের। উল্লেখ্য, সর্বোচ্চ আদালতের সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান ও ইজিবাইক অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা ও অপসারণের আদেশ দেওয়া হয়েছিল সে আবেদনটি করেছিলেন বিদেশে থেকে এমন যান আমদানি করা এক নতুন ব্যবসায়ী। এখন যেসব ব্যাটারিচালিত যান চলছে সেগুলো লেড অ্যাসিড ব্যাটারির, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বলা হচ্ছে, এগুলো ২০২৫ সাল নাগাদ শেষ হয়ে যাবে এবং এমন সব যানই তখন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তিতে চলে যাবে এবং তখন এসব পরিবহন পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে। নগর ট্রাফিক বিভাগের ‘ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই)’ সাইদুর রহমান এবিষয়ে বলেন, সরকারি ভাবে এগুলো নিষিদ্ধবাহন। এছাড়াও মহাসড়কে এভাবে চলার কোন এখতিয়ার নেই তাদের। সেটি সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। আমাদের চোখে পরলে আটক করে মামলা সাপেক্ষে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় চালান দেবার নিয়ম আছে। আমরাসহ দেশের সাধারণ মানুষও এদেরকে নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এছাড়াও শহরে সৃষ্ট ট্রাফিক জ্যামের অন্যতম করাণও এই গাড়িগুলো।