সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
একাদশে ভর্তি ১৫-২৫ জুলাই ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আশঙ্কা কেটে গেছে বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

মা-ছেলে মিলেই গাজীপুর নগরীর সব উন্নয়ন কাজ করবেন জায়েদা

Paris
Update : শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩

এফএনএস
গাজীপুর সিটির উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতায় মা-ছেলে একত্রে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সদ্য বিজয়ী মেয়র জায়েদা খাতুন। তিনি বলেন, গাজীপুরবাসী আমাকে বিজয়ী করেছে-এ ঋণ শোধ করবো এলাকার কাজের মাধ্যমে। এটা আমি একা করতে পারব না। আমার ছেলেকে সাথে নিয়ে ছেলের বাকি কাজগুলো করব। মেয়র পদে বিজয়ের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ছয়দানা এলাকায় বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ৬১ বছর বয়সী জায়েদা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ও গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ‘দেয়াল ঘড়ি’ মার্কা নিয়ে জয় পাওয়া জায়েদা গাজীপুর সিটির ভোট সুষ্ঠু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আমার বিজয়টাকে গাজীপুর নগরীর মানুষ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে নিরপরাধ। আমার ছেলের সত্য প্রমাণ করার জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন শহরের উন্নয়নমূলক যে কাজগুলো করবো তা আমার ছেলেসহ সকলের সহযোগিতা নিয়েই করবো। এমনকি এসব কাজে প্রয়োজনে তিনি নির্বাচনে তার নিকটতম প্রার্থী আজমত উল্লার পরামর্শ ও সহযোগিতা নেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাকে মানুষ কিরকম ভালোবাসে তার প্রমাণ করার জন্যেও তিনি এবারের ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বলে জানান জায়েদা। এ সময় সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার মা আমার শিক্ষকের মতো, আমার সকল কাজে উনি পরামর্শ দিয়েছেন, দেখভাল করেছেন। আজ আমি মেয়রে নেই কিন্তু উনি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় মায়ের কাজে যতরকমের সহযোগিতা দরকার আমি তার পাশে থেকে করব। বিগত সময়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার যে অভিজ্ঞতা আছে তা কাজে লাগিয়ে আমি আমার মাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে আমি প্রস্তুত।
এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মেয়র হতে চলছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন, যিনি হবেন এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র। গত বৃহস্পতিবার দিনভর ইভিএমে অনুষ্ঠিত গোলযোগহীন ভোটগ্রহণের পর মাঝরাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের ঘোষিত ফলে দেখা যায়, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রাথী জায়েদা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর চেয়ে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। খাতাপত্রে জায়েদা বিজয়ী হলেও এই ভোট ছিল মূলত জাহাঙ্গীর ও আজমতের দ্বৈরথ, যার শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচন থেকে। টঙ্গী পৌরসভার ১৮ বছরের চেয়ারম্যান আজমত সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্দলীয় প্রতীকের সেই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরও। ভোটের আগে নাটকীয়ভাবে অন্তর্ধান হওয়ার পর ফিরে এসে জাহাঙ্গীর বিরস বদনে আজমতকে সমর্থনের ঘোষণা দিলেও তাতে দলীয় প্রার্থীর জয় আসেনি। লাখো ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরেছিলেন আজমত। সিটি করপোরেশন আইন সংশোধনের পর ২০১৮ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আজমতকে হটিয়ে দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে মেয়র হন তিনি। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে জাহাঙ্গীরের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। এক বছরের বেশি সময় পর ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। তবে ভোটের সময় এলে আবার ১০ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। আওয়ামী লীগ আজমতকে মনোনয়ন দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাহাঙ্গীর। তবে খেলাপি ঋণের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। এরপর আবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসা জাহাঙ্গীর পরিস্থিতি আঁচ করে মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কিনে রেখেছিলেন। আর নিজে প্রার্থী হতে না পারার পর গৃহিনী মাকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে যান। অনেকটা ‘ডামি প্রার্থী’ মায়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে প্রচার-প্রচারণা মূলত জাহাঙ্গীরই চালান। আর বয়সে প্রবীণ হলেও রাজনীতিতে নবিন জায়েদা খাতুনও বলেন, তার এই লড়াই ছেলের জন্য। আগের নির্বাচনে বিএনপি নেতার কাছে হারলেও এবার বিএনপিবিহীন নির্বাচন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজমতের জন্য বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছিলেন অনেকে। ষাটের দশকের শেষভাগ থেকে ছাত্রলীগে যুক্ত আজমত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পর শ্রমিক আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আজমত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। ফলে তার জয়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারে নামেন দলীয় নেতারা। একদল অভিনয়শিল্পীকেও দেখা যায় নৌকার পক্ষে প্রচারে নামতে। জাহাঙ্গীরের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কেউ কেউ নামলেও তাকে আমলে নিচ্ছিলেন না আজমত। তার দাবি ছিল, বিতর্কিত ও অপকর্মকারীরাই কেবল জাহাঙ্গীরের পক্ষে। গত বৃহস্পতিবার নিজের ভোট দেওয়ার পরও সন্তোষ জানিয়ে নিজের জয়ের আশা প্রকাশ করেছিলেন আজমত। দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমি বলতে চাই, আজকে জয় এখানে নৌকারই হবে। দিনভর দেখা গেলেও রাতে যখন গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্থাপিত ফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা হচ্ছিল, তখন সেখানে দেখা যায়নি আজমতকে। তিনি তার টঙ্গীর বাড়িতেই ছিলেন বলে তার সমর্থকরা জানায়। অন্যদিকে মাকে নিয়ে ভোট দেওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেছিলেন, ভোটারদের নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে, তার এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। সন্ধ্যার পর সমর্থকদের নিয়ে বঙ্গতাজ মিলনায়তনে অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর, যেখানে ফল ঘোষণার শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন। মাঝে তিনি ফল ঘোষণার দেরি দেখে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অসন্তোষও প্রকাশ করেন। চূড়ান্ত ফলে জায়েদা খাতুনকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টেবিল ঘড়ির প্রধান এজেন্ট জাহাঙ্গীর বলেন, গাজীপুরে নৌকা জিতছে, আর ব্যক্তি হারছে। তিনি বলেন, গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমার বাঁচা মরার মতো একটা নির্বাচন ছিল। আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- এই শহরের ওপর তোমার ওপর অত্যাচার হয়েছে। আমি মা হয়ে ঘরে বসে থাকতে পারি না। আমি এই নির্বাচনটা করতে চাই। আমার মা বলেছে- যে ব্যক্তি তোমার ক্ষতি করেছে, তার বিরুদ্ধে আমি দাঁড়িয়েছি। সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার মায়ের জয় হয়েছে। গাজীপুরের ভোটারদের জয় হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও জাহাঙ্গীর বলেন, আমি বলেছিলাম, আমি কখনও আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাইনি, যাব না; নৌকার বিরুদ্ধে যাইনি, যাব না। আমি বলেছিলাম, নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার ভালবাসা-শ্রদ্ধার জায়গা। এখানে যেন কেউ আঘাত না করে। মিডিয়ার বন্ধুদের বলব আল্লার ওয়াস্তে আমাকে আর আমার পরিবারকে নিয়ে দয়া করে আর মিথ্যা কথা লিইখেন না, বইলেন না। ভোটের আগে জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, মা মেয়র হলে তিনি তার পাশে থেকে সিটি করপোরেশনের কাজে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। আমি যেহেতু এই সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি, এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি, সেসব থেকে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। মা নির্বাচিত হলে আমি সার্বিকভাবে তার কাজে সহযোগিতা করব। প্রশাসনিকভাবে মা-ই প্রধান থাকবেন। কিন্তু সার্বিকভাবে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাকে যত রকমের সহযোগিতা করা যায়, তা আমি করব। ৬১ বছর বয়সী জায়েদা গৃহিনী হয়ে এই পর্যন্ত জীবন কাটিয়ে দিলেও তাকে ‘সংগ্রামী’ নারী বলে অভিহিত করেন ছেলে জাহাঙ্গীর। জায়েদার স্বামী মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জের বান্দাখোলা এলাকায়। বিয়ের ১০ থেকে ১২ বছর পরে বড় মেয়ে জারমিন আক্তারকে নিয়ে তারা চলে আসেন কালীগঞ্জের কানাইয়া এলাকায়। সেখানে এক খণ্ড জমি কিনে করেন বাড়ি। সেখানেই জাহাঙ্গীর আলম ও ছোট ভাই আল আমিনের জন্ম। ভোটে মায়ের জয়ের পর জাহাঙ্গীর বলেন, চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমার জন্ম হয়েছে। কোনো সন্ত্রাসী, অপকর্মের সাথে আমি আপোশ করি নাই। ১২ লাখ ভোটারের সহযোগিতা চাই। এই শহরে প্রায় তিন হাজার ইন্ডাস্ট্রি আছে, প্রায় ১৭০ দেশের ক্রেতা, ২৪ লাখ গার্মেন্টসের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। এই শহর ভালো থাকলে দেশের অর্থনীতি ভালো থাকবে। অর্থনীতি ভালো থাকার জন্য আমার মাকে সহযোগিতা করব। জাহাঙ্গীর ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি; পরে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। তবে তার নাম বড় পরিসরে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে, যখন তিনি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজমত উল্লার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে। দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার পর সেবার নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। ভোটের ঠিক আগে আগে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান তিনি। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম থেকে যায়। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সেই নির্বাচনে আজমত হারেন ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে। জাহাঙ্গীর তখন বলেছিলেন, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করেছে তার দল। পাঁচ বছর পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীরকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে ২ লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। সেই নির্বাচনের পর থেকে রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে জাহাঙ্গীরের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তারপর বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। সেই ‘ক্ষমা’র শর্ত ভঙ্গ করে দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, তাকে ‘গুম’ করা হতে পারে। এরপর খেলাপি ঋণের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে আপিল করেও কাজ না হওয়ার পর তিনি মাকে নিয়ে নির্বাচনে নামেন। এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে তলবও করে। তবে ভোটের ফল ঘোষণার পর জাহাঙ্গীর বলেন, আমি আওয়ামী লীগেরই তৈরি, আওয়ামী লীগ আমার রক্তের সঙ্গে আছে।
ফলাফল মেনে নিয়েছেন আজমত : নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। নৌকার প্রার্থী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিছুকিছু ক্রটি ছিল, ইভিএমের কারণে, অনেকে ভোট দিতে পারেনি। আমার রেজাল্ট যা হয়েছে, আমি রেজাল্ট মেনে নিয়েছি। এবং যিনি বিজয়ী হয়েছেন আমি তাকে অভিনন্দন জানাই। গতকাল শুক্রবার দিনভর গাজীপুর সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিমের ভোট গ্রহণের পর রাতে ফলাফল দেয় নির্বাচন কমিশন। বেসরকারি ফলাফলে আজমত উল্লা খান স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুনের কাছে ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন। জায়েদা খাতুন সিটির বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা। জাহাঙ্গীর নিজেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় সমর্থন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ হলেও ‘ঋণখেলাপী প্রতিষ্ঠানের’ জামিনদার হওয়ায় প্রার্থিতা টিকেনি। পরে মায়ের ‘ছায়াসঙ্গী’ হয়ে নির্বাচনে প্রচার চালিয়ে টেবিল ঘড়ির বিজয় নিশ্চিত করেন। জায়েদা খাতুন বিজয়ী হওয়ার পর তার ছেলে জাহাঙ্গীর এক প্রতিক্রিয়ায় সিটি করপোরেশনের কাজকে ভালভাবে এগিয়ে নিতে আজমত উল্লা খানের সহযোগিতা চেয়েছেন। জাহাঙ্গীরের সহযোগিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলেন, যদি চায় এটা তো তার ব্যাপার। দেখা যাক, উনি কী ধরনের সহযোগিতা চান। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লা খান বলেন, আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম; দলীয় কিছু বিষয় আছে। একটু চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, এটা বসে আমরা পর্যালোচনা করব। পর্যালোচনার পর আমি আমার মতামত দেব। এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রশ্নও রাখেন, আমি আগেও বলেছি যে, যেটা প্রপাগান্ডা ছিল; আমি নির্বাচনের রায় মেনে নিয়েছি। এটা যদি অন্য কারও বিপক্ষে যেতেন তিনি কি মেনে নিতেন? এখন তিনি (জাহাঙ্গীর) বলবেন, সুষ্ঠু। কিন্তু আমি একটা নীতি অনুসরণ করে চলি। আমি একটা নৈতিকতা মনে চলি। সুতরাং নির্বাচন আমার বিপক্ষে গেলেই আমি এর বিপক্ষে বলব এটা সঠিক না। এ থেকে দেশবাসীকে বেরিয়ে আসতে হবে, যোগ করেন নৌকার প্রার্থী।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris