সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
একাদশে ভর্তি ১৫-২৫ জুলাই ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আশঙ্কা কেটে গেছে বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

সৌদি আরবে নিহত বাংলাদেশিদের পরিচয় শনাক্ত

Paris
Update : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩

এফএনএস
সৌদি আরবের আসির প্রদেশে বাস উল্টে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এর মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি ওমরাহ যাত্রী ছিল। জেদ্দা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার পথে বাসটি গভীর খাদে পড়ে যায় বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ বাংলাদেশি হলেন- নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার শাহীদুল ইসলাম; কুমিল্লার মুরাদনগরের মামুন মিয়া ও রাসেল মোল্লা; নোয়াখালীর মো. হেলাল; লক্ষ্মীপুরের সবুজ হোসাইন; কক্সবাজারের মো. আসিফ ও মোহাম্মদ হোসেন; গাজীপুরের টঙ্গীর মো. ইমাম হোসাইন রনি; চাঁদপুরের রুকু মিয়া; কক্সবাজার মহেশখালীর সিফাত উল্লাহ, কুমিল্লার গিয়াস হামিদ, যশোরের মোহাম্মদ নাজমুল ও রনি। জানা গেছে, বাসে বাংলাদেশি যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৫ জন এবং এদের মধ্যে ১৭ জন আহতাবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে। ১৩ জন নিহত ছাড়াও এখনও পর্যন্ত আরও ৫ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছে। চিকিৎসাধীন বাংলাদেশিরা হলেন- চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের সালাহউদ্দিন, ভোলার আল আমিন ও বুরহান উদ্দিন, লক্ষ্মীপুরের মিনহাজ ও রিয়াজ, চাঁদপুর কচুয়ার জুয়েল, মাগুরার আফ্রিদি মোল্লা ও মিজানুর রহমান, নোয়াখালীর মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, কুমিল্লার ইয়ার হোসাইন ও জাহিদুল ইসলাম ও যশোরের মোশাররফ হোসাইন। এ ছাড়া চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন আবদুল হাই, রানা, সেলিম, দেলোয়ার হোসাইন, হোসাইন আলী ও কুদ্দস। সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওমরাহযাত্রীদের বহনকারী ওই বাস ইয়েমেন সীমান্তবর্তী আসির প্রদেশের আকাবা শার এলাকার একটি সেতুর সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে বাসটি উলটে যায় ও একপর্যায়ে সেটিতে আগুন ধরে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বাসের আরোহীরা ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাচ্ছিলেন। বাসের ব্রেক কাজ না করায় একটি সেতুর ওপর উল্টে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় ওই বাসে ৪৭ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ৩৫ জন বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবুজ হোসাইনের গ্রামের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে সবুজের বাবা-মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ থামছেই না। গতকাল বুধবার ভোরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ রায়পুর গ্রামের বাড়িতে গেলে সবুজের বাবা-মাসহ স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবুজ দক্ষিণ রায়পুর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী মো. হারুনের ছেলে। তারা চার ভাইবোন। এরমধ্যে সবুজ পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। সবুজের বাবা হারুন জানান, তিনি মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। আর্থিকভাবে তেমন একটা সচ্ছল নন তারা। তিন বছর আগে বড় ছেলে সবুজকে ধারদেনা করে সৌদি আরব পাঠান। সেখানে সবুজ একটি খাবার হোটেলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তার পাঠানো টাকায় পরিবারে সচ্ছলতা ফিরতে শুরু করে। সবুজ সহসায় দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। হারুন আরও জানান, রোববার ওমরাহ করতে বাসের টিকিট কাটেন সবুজ। বিষয়টি তিনি বাড়িতে মা পারুল বেগমকেও জানিয়েছেন। হজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার আগেও মোবাইল ফোনে বাড়িতে কথা বলেছিলেন। কিন্তু পথে দুর্ঘটনায় সবুজ নিখোঁজ হন। পরে সবুজের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।
এদিকে বাস দুর্ঘটনায় নিহত কুমিল্লার মামুনের বাবা আউয়াল মিয়া বলেন, দুই মাসে ৫০ হাজার টাকা পাঠান বাড়িতে। বাকি দুই মাসের টাকা জমান ওমরাহ হজ করার জন্য। ওমরায় রওনা হওয়ার আগে আমাকে কল দিয়ে দোয়া চায়। যদি জানতাম আমার ছেলে লাশ হবে। আমি কি যাইতে দিতাম? আমার ছেলের লাশ সরকার যেন আমাদের দেখার সুযোগ দেন। আমি আমার ছেলের লাশ চাই। মামুনের মামি তাছলিমা বেগম বলেন, মামুনের মামা ইয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব থাকেন। তিনিই মামুনকে নিয়েছেন। পরে মামুনের আরেক ভাই হারিছকে নেন। এরপর মামুন তার ভাগনে জাহিদুলকে সৌদি আরব নেন। জাহিদুল ও মামুন এক সঙ্গে কাজ করতেন ইয়ার হোসেনের কাছে। তিন জনই ১২ দিনের ছুটি নেন ওমরা করার জন্য। তিনি আরও বলেন, তারা তিনজন এক সঙ্গে ওই বাসে যাচ্ছিলেন। ইয়ার হোসেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। কথা বলার মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় পুরো বাসে আগুন ধরে যায়। ওই সময় ইয়ার হোসেন ও জাহিদুল বের হতে পারলেও মামুন বের হতে পারেননি। ইয়ার হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে ভর্তি। সেখান থেকে তিনি তার স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে জানিয়েছেন, পুরো বাস পুড়ে গেলে মামুনসহ বাকিরা আর বের হতে পারেনি। পরে হাসপাতালের হিমাগারে সংরক্ষিত একটি লাশ মামুনের বলে শনাক্ত হয়। জাহিদুল ও হারিছ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মামুনের মা মমতাজ বেগম বলেন, আমার ছেলে কতবার কাগজপত্র ঠিক করেছে। আবার সেগুলো বাদ হয়ে যায়। পরে আবার কাগজপত্র ঠিক করে বিদেশ গেছে। এত বাধার পরেও বিদেশ গিয়ে আমার ছেলে আজ নাই। আমার কিচ্ছু চাই না শুধু ছেলের মুখটা একবার দেখতে চাই। মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি বলেন, একই পরিবারের তিনজন দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছেন। একজন মারা গেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। এ ছাড়া রাসেল মোল্লা নামে আরও একজন মারা গেছেন। নিহতদের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা গিয়াস উদ্দীনের নিহতের বিষয় নিশ্চিত করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর শোক: এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এক শোক বার্তায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর শোক: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যুতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল বুধবার এক শোক বার্তায় নিহতদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের আসির প্রদেশে অভিবাসী ওমরাহ যাত্রী বহনকারী একটি বাস উলটে আগুন ধরে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৪ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) আরিফুজ্জামানসহ দুজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার সংবাদ শোনার পর থেকেই তাদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছেন। তিনি আরও বলেন, নিহতদের পরিবারকে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে সরকারি বিধি অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris