সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
একাদশে ভর্তি ১৫-২৫ জুলাই ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আশঙ্কা কেটে গেছে বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

তরমুজ বিক্রিতে ওজনের নিয়ম বাতিল চান ক্রেতারা

Paris
Update : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩

শাহানুর রহমান রানা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিগত কয়েকবছরে দেশজুড়ে তরমুজের উৎপাদন ছিল উর্দ্ধমূখি। উৎপাদনে উর্দ্ধমূখিতা থাকলেও পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে দাম কমেনি যতসামান্যও। রোজার পূর্বে খুচরা বাজারে যে দামে বিক্রি হয়েছিল রোজাতেও রয়ে গেছে সেই ধারাবাহিকতাই। ঈদকে সামনে রেখে রোজার মাসে সংসারের সার্বিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়াতে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি রসালো এই মৌসুমি ফলটির চাহিদা ও যোগান পর্যাপ্ত থাকলেও চড়া দাম আর কেজি দরে বিক্রি হবার কারণে সাধারণ ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার অনেকটাই বাইরে বলে মন্তব্য করেন ক্রেতারা। মাঠ থেকে পাইকারি ব্যবসায়িরা শতকরা বা সংখ্যার হিসেবে তরমুজ কিনলেও রাজশাহীসহ এর আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাজারে ওজন করেই তরমুজ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদেরকে। দাম কমানোর পাশাপাশি পিচ বা সংখ্যা (ওজনের পন্থা ব্যতীত) হিসেবে তরমুজ বিক্রির নিয়ম চালুকরার দাবি তোলেন সাধারণ ক্রেতারা। ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের মাঝারি আকৃতির একটি তরমুজ কিনতে গেলেও ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে প্রায় ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। যেটি কিনা এই রমজান ও ঈদ বাজারে অনেক কষ্টকর বলে মন্তব্য মধ্যবিত্ত ও সাধারণ ক্রেতাদের। রোজার মধ্যে আবারো একদফা তরমুজের দাম বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
কৃষি সমাপ্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গেল ২০২২ অর্থবছরে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের ফল চাষের মধ্যে উৎপাদনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তরমুজ। দেশে এ ফলটির ২০২০ অর্থবছরে উৎপাদন ছিল ১৪.৫৩ লাখ টন। ২০২১ সালে মোট উৎপাদন ছিল ১৭.৭৯ লাখ টন। যা পরের অর্থবছর অর্থ্যাৎ ২০২২ সালে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ২৫.০১ লাখ টনে। বিগত তিন বছরে সারাদেশে তরমুজ উৎপাদনের ধারাবাহিক বৃদ্ধির সফলতা এবারের চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য কৃষি সমাপ্রসারণ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টদের। গেল ২০২২ অর্থবছরে প্রতি হেক্টর জমিতে তরমুজের ফলন হয়েছিল ৩৯.৬ লাখ টন। নগরীর তরমুজ ব্যবসায়িরা জানান, বরিশাল, যশোর, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ থেকে তরমুজ আছে রাজশাহী শহরের বাজারগুলোতে। এছাড়াও পাশ^বর্তী জেলা নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলাতেও আবাদ হয় মৌসুমী এই ফলটি।
এদিকে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন দৈনিক আমাদের রাজশাহীকে জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলাতে ৩৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল ৮২৫ মেট্রিক টন। যা পরের অর্থবছর ২০২১-২২ বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছিল ৯৪০১ মেট্রিক টনে। ২০-২১ অর্থবছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফলন হয়েছিল ১০ মে.টন। তার পরের বছরে দুইশগুণ ফলন বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছিল ২০০ মে.টনে। পাশর্^বর্তী জেলা নাটোরে ২০-২১ অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। পরের বছর নাটোরে উৎপাদনের মার্জিন বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় ৪৯ হাজার ৩০০ মেট্রিক টনে। অন্যদিকে, রাজশাহী জেলাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে তরমুজের উৎপাদন হয়েছিল ৫৪০ মেট্রিক টন। পরের বছরের উৎপাদন ছিল ৬৬০ মে.টনের মতো। রাজশাহী অঞ্চলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪৬৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের সর্বমোট আবাদ হয়েছিল ৫৯ হাজার ২৯১ মেট্রিক টন। তরমুজ আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরে তরমুজের ফলন পূর্বের চাইতে অনেক বেশি হবে বলে আশা করছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
নগরীর খুচরা ব্যবসায়িরা জানান, ‘তরমুজের আড়ৎদারেরা (পাইকাররা) সংখ্যা বা ঠিকা হিসেবে তরমুজ কিনলেও তাদের কাজ থেকে আমাদেরকে মণ বা ওজন দরে তরমুজ কিনতে হয়। তাও আবার প্রতি মণে পাইকাররা সর্বোচ্চ এক কেজি করে ঢলন দেয়। যার কারণে খুচরা ব্যবসা থেকে লাভের পরিমাণটা আসে যতসামান্য। তরমুজ যদি ওজন ব্যতীত সংখ্যার হিসেবে বিক্রি করতে হয় তবে সেখানে ক্ষতির সম্মুখিন হবার মতো একটি ভীতি থাকে বলে মন্তব্য ব্যবসায়িদের। তবে, পাইকার ব্যবসায়িরা যদি খুচরা ব্যবসায়িদের কাছে সংখ্যার হিসেবে তরমুজ বিক্রি করে তাহলে খুচরা ক্রেতারাও সেই সুযোগ পাবেন বলে মন্তব্য খুচরা বিক্রেতাদের। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা ফল ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি শাহিন হোসেন কালু বলেন, তরমুজের ক্যারিং খরচ (ট্রাক ভাড়া) আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া খুচরা ক্রেতার আমাদের কাছ থেকে তরমুজ কিনে নেবার কয়েকদিন পরে এসে পাঁচ-সাতটা নষ্ট তরমুজ ফেরত দিয়ে পরিবর্তন করে নেয়। যেটা আমাদের আর্থিক ক্ষতি। বরিশাল থেকে আসা তরমুজ শেষ হয়ে যাবার পর খুলনা থেকে আসা তমেুজ অবদি যে যে সময়টুকু থাকবে তখন হয়তো দাম বাড়ার একটি সম্ভাবনা আছে। পিচ হিসেবে তরমুজ বিক্রি করা খুব কষ্টকর। কারণ কৃষকের কাছ থেকে যখন আমরা তরমুজ কিনি তখন ছোট বড় নষ্ট তরমুজ একসাথে কিনতে হয়। কিন্তু ক্রেতারা তো নষ্ট ও ছোট তরমুজ টাকা দিয়ে কিনবে না।
চিকিৎসকদের মতে, তরমুজে এন্টি অক্সিডেন্ট ও কেরোচিন থাকে; যা মস্তিষ্কের জন্য ভাল। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করে তরমুজ। কোষ্টকাঠিন্য দূর ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে সুস্বাদু এই রসালো ফলটি। এছাড়াও তরমুজের বীজে জিংক, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এতে ৯২ শতাংশ পানি, ছয় শতাংশ চিনি ও অন্যান্য উপাদান আছে দুই শতাংশ। রমজান মাসে ইফতারের সময় শরীরের পানি শূণ্যতা দূরীকরণ তরমুজের প্রতি আগ্রহ সকল শ্রেনী ক্রেতাদের। কিন্তু অত্যন্ত চড়া দামের কারণে মৌসুমী ও রসালো এই ফলটি কিনতে পারছেনা সাধারণ ও নিম্নবিত্ত ক্রেতারা বলে জানান তারা। সাহের বাজারে তরমুজ কিনতে আসা ক্রেতা আকতার হোসেন, আলমগীর ও শালবাগান বাজারের ক্রেতা লালু হোসেন, জাকিয়া খাতুন সহ আরো অনেকেই তরমুজের দাম ও বিক্রির পন্থা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, রমজান মাসে তরমুজ সহ অন্যান্য ফলের চাহিদা বৃদ্ধি বিধায় ‘ওজন ও পিচ করে বিক্রি করলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যনিম্নবিত্তরাও কেনার সুযোগ পেত। গেল বছরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শেষদিকে এসে নগরী ও এর উপকন্ঠের বাজারগুলোতে তরমুজ পিচ বা সংখ্যা (ওজনের পন্থা ব্যতীত) হিসেবে বিক্রির নিয়ম চালু করা সময়ের দাবি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris