পবিত্র মাহে রমাজানের আজ পঞ্চম দিবস। মহান আল্লাহর রহমত বর্ষণের প্রথম দশক অতিক্রম করছি আমরা। এই দশ দিনে সমগ্র মানব মণ্ডলীসহ বিশ্ব চরাচর আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে সুরা আল-ইমরানের ১০২ আয়াতে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে তাকওয়ার যথার্থ দাবি পূরণ করে ভয় কর। পবিত্র মাহে রমজান হচ্ছে এই তাকওয়া অনুশীলনের এক বাস্তব কর্মসূচি। তাকওয়া বা পরহেজগারী অর্জনের সুযোগ ও চেষ্টা যুগে যুগে বিদ্যামান ছিলো। তাই অন্যান্য আসমানী কিতাবের অনুসারীদের উপরও সিয়াম সাধনা ফরজ ছিলো।
পবিত্র কুরআনেই মহান আল্লাহ একথা আমাদের জানিয়েছেন। সুরা বাকারার ১৮৩ আয়াতে বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও রোজা ফরজ করা হয়েছিল। অন্যান্য উম্মতের উপর রোজার ধরণ-ধারণ কেমন ছিল তা অবশ্য জানা নেই। হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম সিয়াম পালন করতেন। তিনি একদিন পর এক দিন রোজা রাখতেন। ইহুদীরা ১০ই মুহররম রোজা থাকে। এই দিনে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন এবং আলাøহ ফিরাউনকে নীল দরিয়ার পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন, ধ্বংস করেছেন। অতীতে বহু-জাতি রোজা পালন করেছে। পারশ্য, রোমান, গ্রীক, ব্যাবিলনীয়, হিন্দু ও পুরাতন মিসরীয়রা রোজা রাখতো।
ক্যাথলিক গীর্জা রোজার কোন নির্দেশ ও নীতিমালা জারি করেনি। তবে উপবাসের মাধ্যমে কিছু গুনাহ মাফ হয় এবং তা এক প্রকারের তওবা হিসেবে গণ্য হয়। রোমান গীর্জা মাঝে মধ্যে দিনের এক বেলা খাবার গ্রহণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আংশিক রোজার উপদেশ দিয়ে থাকে। প্রাচীনকালে খ্রিস্টানরা বুধবার, শুক্রবার ও শনিবার রোজা পালন করতো। তারা তাদের উপর আপতিত বিপদ মুক্তির জন্য রোজা রাখতো। মুসা নবীর অনুকরণে তারা ৪০দিন রোজা পালন করতো। প্রাচীন হিব্রু জাতি শোক কিংবা বিপদগ্রস্ত হলে রোজা রাখতো। বিপদ কেটে গেলে আবার আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া স্বরূপ রোজা রাখতো। হিব্রু ক্যালেন্ডারে আজও ক্ষমা দিবসে ইহুদীদের রোজা রাখার নিয়ম আছে।
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বছরে কয়েক দিন একাধারে রোজা রাখতো। তাদের মতে রোজা বা উপবাসব্রত আত্মাকে বিশুদ্ধ করার উত্তম পদ্ধতি। দার্শনিক পিথাগোরাসের মতে রোজা চিন্তার সহায়ক। তিনি বছরে ৪০ দিন রোজা রাখতেন। সক্রেটিস ও আফলাতুনও ১০ দিন রোজা রাখতেন। প্রাচীন সিরীয়রা প্রতি ৭ম দিবসে রোজা রাখত। আর মঙ্গোলিয়ানরা রোজা রাখতো প্রতি ১০ম দিবসে। অনুরূপভাবে বৌদ্ধ, হিন্দু,তারকাপূজারী ও আধ্যাত্ম বাদিদেরও উপবাস সাধনের নিয়ম রয়েছে।
তারা বিশেষ কিছু খাবার পরিহার করে আত্মাকে উন্নত করার চেষ্টা করে। তাদের ধারণা দেহকে দুর্বল করার মাধ্যমে আত্মা শক্তিশালী হয়। আত্মাকে সবল করার জন্য তাদের এই উপবাস প্রথার আবিষ্কার হয়েছে। মূল কথা হলো সর্বযুগেই সকল জাতি ও ধর্মে রোজা পালনের বিধান ছিলো। তবে মুসলিম সমাজের সিয়াম পালন অন্য ধর্মের উপবাস ব্রত পালনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।