মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অগ্নিঝরা মার্চ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : ২৪ মার্চ, ১৯৭১। অগ্নিঝরা মার্চের এই দিনে ক্ষোভে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ। একদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পরামর্শক দল প্রহসনের আলোচনা চালাচ্ছে, অন্যদিকে নির্বিচারে গণহত্যার জন্য ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সামরিক জান্তা। বাঙালী ভাবতেও পারেনি মাত্র একদিন পর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ বিভীষিকাময় রাত। ২৫ মার্চ ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে পাক হানাদার বাহিনীরা। এদিকে আলোচনার নামে প্রহসনে ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু পাক সামরিক জান্তার উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই।

আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোন সমাধান না হলে বাঙালী নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে।’ চট্টগ্রামে যখন বাঙালীদের হত্যার জন্য অস্ত্র নামানো হচ্ছে, তখন ঢাকায় ইয়াহিয়ার পরামর্শকরা বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সামরিক জান্তার পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন এম এম আহম্মদ, বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান। সকালে ও সন্ধ্যায় দু’দফা বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, ইয়াহিয়ার কাছে দাবি জানালে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। ‘বল এখন প্রেসিডেন্টের কোর্টে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

একাত্তরের এই দিন করাচী থেকে সোয়াত নামক একটি জাহাজ আসে। এতে ৫ হাজার ৬৩০ টন অস্ত্র আনা হয়। অস্ত্র নামাতে গিয়ে বাঙালী শ্রমিকরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাক হানাদার সামরিক অফিসারদের মুখের ওপর শ্রমিকরা অস্ত্র নামাতে অস্বীকৃতি জানায়। অবরোধ করে রাখে জাহাজটিকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতাকামী শ্রমিক।

একাত্তরের এই দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ভবনে বিভিন্ন সময়ে সমাগত মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোন সমাধান না হলে বাঙালীরা নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে। আমরা সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।

একাত্তরের ২৪ মার্চ বুধবার থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা একে একে ঢাকা ত্যাগ করতে শুরু করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট ছোট পার্লামেন্টারি দলের সব নেতাই এ দিন কারাচীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ভুট্টোর সফরসঙ্গী ১৩ জনের ৭ জনই এদিন ঢাকা ত্যাগ করেন। ২৩ মার্চ রাত হতে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসেরপার্শ্ববর্তী বোতলগাড়ি, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়।

এতে এক শ’ নিহত এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়। গত দিনের মতো এদিনও সারা বাংলাদেশে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিল পতপত করে। ইস্ট বেঙ্গল পাকিস্তান রাইফেলসের যশোর ট্রাংক রোডের অফিসেও এদিন উড়ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এদিকে ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে পাকিস্তান থেকে খান আবদুল কাইয়ুম খান ঢাকায় আসেন। কাইয়ুম ঢাকা আসার পরই ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন।

বৈঠক শেষে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে তিনি সর্বদা নমনীয় ও আন্তরিক মনোভাব পোষণ করেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান বাস্তবিকই শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। কিন্তু এমন আলোচনার আড়ালে যে বিভীষিকাময় গণহত্যার ষড়যন্ত্র সামরিক জান্তা করছিল, তা বাঙালী জাতির কাছে ছিল ধারণারও বাইরে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংকটে বিআরটি প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ
এফএনএস এক্সক্লুসিভ: অর্থ সংকটে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু ওই প্রকল্প ধীরগতির নির্মাণকাজে ব্যাপক জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। প্রকল্প নির্মাণকাজে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দিতে পারছে না প্রকল্পের দুই চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদারদের অর্থ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পটি চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড পৃথকভাবে বাস্তবায়ন করছে। নিয়মানুযায়ী ঠিকাদার একটা নির্দিষ্ট অংশের কাজ নিজের টাকায় বাস্তবায়ন করবে। তারপর সে অনুযায়ী বিল দাখিল করলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তা পরিশোধ করবে। কিন্তু চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুযায়ী ওই টাকার সংস্থান করতে পারছে না। ফলে তা প্রকল্পের নির্মাণ কাজে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

সূত্র জানায়, ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট : গাজীপুর-এয়ারপোর্ট বিআরটি’ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। কিন্তু ধীরগতির কারণে ব্যয় ও মেয়াদ দুই-ই বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা আর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে এলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রায় ৭৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এখনো চার ভাগের এক ভাগ কাজ বাকি।

এমন অবস্থায় আরেক দফা প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী প্রকল্পটির মেয়াদ আরো দেড় বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পটি আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। একই সঙ্গে আরো ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে টওকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।

সূত্র আরো জানায়, বিআরটিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত বিআরটি প্রকল্পের একমাত্র বড় সমস্যা ঠিকাদারদের অর্থ সংকট। ওই কারণেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দুটি শুরু থেকেই ধীরগতিতে কাজ করেছে। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে।

সেতু বিভাগের অধীনে প্রকল্পের এলিভেটেড অংশের কাজ করছে জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। ইতিমধ্যে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দাতা সংস্থাগুলোর অনুমতি নিয়ে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের জমা দেয়া গ্যারান্টির টাকা থেকে অগ্রিম পরিশোধ শুরু করেছে। ফলে তাদের কাজে গতি এসেছে। আর সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত ঠিকাদার চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডকেও একইভাবে অগ্রিম অর্থ পরিশোধের জন্য দাতা সংস্থাগুলো অনুমতি দিয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris