মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশ আমাদের

Paris
Update : রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : হুমায়ুন আজাদ ‘বাঙলা ভাষা’ কবিতায় লিখেছেন, ‘শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, বাংলা ভাষা, তুমি-আমি-দুর্বিনীত দাসদাসী-/একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।’ ১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয়, কিন্তু তিনি কোন রূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

১৭ নভেম্বর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভায় আজিজ আহমদ, তমদ্দুন মজলিসের আবুল কাশেম, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করেন এবং সেটি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রেও কোন সাড়া দেননি।

ভাষা সমস্যার প্রস্তাবিত সমাধানের জন্য পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়। ১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তবে এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্যকর ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়। যেখানে তারা বাংলাকে আরবী অক্ষরের মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করেছিলেন।

ভাষাবিদ গোলাম সারোয়ার চৌধুরীর লেখায় বলা হয়েছে, ভাষা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এ জন্য, সব জাতীয় বা মাতৃভাষার উৎপত্তিই আসলে আঞ্চলিক ভাষা থেকে। রাজধানী কেন্দ্রিক আঞ্চলিক ভাষাই রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিকভাবে পরিপুষ্ট হয়ে প্রভাব ও প্রতিপত্তি অর্জন করে জাতীয়, মাতৃ বা রাষ্ট্রভাষায় পরিগণিত হয়। মোটামুটি সব বিশ্ব ভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে এ তত্ত্ব প্রায় নির্ভুল মনে হবে। লাতিন রোমকেন্দ্রিক, ইংরেজী লন্ডনকেন্দ্রিক এবং বাংলা কলকাতাকেন্দ্রিক ভাষা হিসেবে বিস্তার লাভ করেছে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার প্রকরণ, ব্যবহার ও উচ্চারণের এত বিপুল তফাত দেখে বছর দশেক আগে এ প্রশ্ন আমাকে বিচলিত করেছিল যে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা আসলেই বাংলাভাষার জাত কিনা। সাহিত্য বিশারদ আবদুল করিম, ড. এনামুল হক, আবুল ফজল প্রমুখসহ চট্টগ্রামবাসীর লেখা পড়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা বস্তুত বাংলা ভাষারই একটি অপভ্রংশ রূপ এবং আরাকানি রাজত্বের প্রভাবে এটি বিপুলভাবে সংকরায়িত হয়ে বাংলা ভাষার সঙ্গে প্রায় নিঃসম্পর্কিত একটি আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে গড়ে ওঠে।

তাই অন্য যে কোন জেলার লোকের মতো চট্টগ্রামের লোকের মাতৃভাষা বা জাতীয় ভাষা হচ্ছে বাংলা। চট্টগ্রামের কেউ শুধু আঞ্চলিক ভাষা জানলেও তার মাতৃভাষা ধর্তব্য হবে বাংলা বলে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, কাসেম সাহেব এই তমদ্দুন মজলিস নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তারা বাংলাকে কোর্ট বা আদালতের ভাষা করা দরকার এই মর্মে আন্দোলন করেছিলেন।
ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিবিদ অলি আহাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়ন বিজ্ঞানের অধ্যাপকদ্বয় আবুল কাসেম ও নূরুল হক ভুইয়া ধূমায়িত অসন্তোষকে সাংগঠনিক রূপদানের প্রচেষ্টায় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস গঠন করেন। এই সংগঠনই ভাষা আন্দোলনের গোড়াপত্তন করে।

তমদ্দুন মজলিস নিয়ে ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ তোয়াহা, তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমএলএ এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ১৯৫২ সালের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুব, ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. নীলিমা ইব্রাহিম, বদরুদ্দীন উমর, বশীর আল হেলাল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ভাষাসৈনিক এমআর মাহবুব, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও একুশের ইতিহাসে প্রথম’ গ্রন্থে উক্ত তথ্য তুলে ধরেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris