সোমবার

১৭ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১

এফএনএস : নিরাপদ ও আরামদায় যাত্রার জন্য রেল সবসময়ই জনপ্রিয় বাহন। তবে শুধু যাত্রী কিংবা মালামাল নয়, এবার রেলের বগিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবে জাদুঘরও। একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ রেলকোচের ভেতরে প্রস্তুত করা হয়েছে দেশের প্রথম ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর’। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। জানা গেছে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা বিজয় দিবসের আগে এটা উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে এর উদ্বোধন করা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশের বিস্তীর্ণ রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, জীবনাদর্শ, জাতির জন্য তার অনন্য ত্যাগ ও অবদানকে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ। বিভিন্ন ছবি, প্রতিকৃতি, ভিডিওসহ ডিজিটাল শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার কর্মজীবনকে মোট ১২টি ভাগে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে জাদুঘরে। জাদুঘরের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য। কোচের একপাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রয়েছেÑকিংবদন্তির প্রথম প্রহর, ধ্রুবতারার প্রথম কিরণ, নক্ষত্র হওয়ার পথে, বাংলার মাটি ও ভাষার বঙ্গবন্ধু, ধূমকেতু থেকে নক্ষত্র, মুক্তির স্বপ্নের সূচনা শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর জীবনচরিত।

এখানে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, রাজনীতির হাতেখড়ি, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করার মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা, ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন, ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের ইতিহাস।

অপর পাশের দেয়ালের ছয়টি ভাগে রয়েছেÑ দুর্বার পথচলা, নিপীড়িতের কাণ্ডারি, এক নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন, মুক্তি, সংগ্রাম আর স্বাধীনতার কথা, স্বপ্নগড়ার দিনগুলো, যে আলো নেভেনি আজও এমন শিরোনামে শিল্প প্রদর্শনী। এতে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও জাতির গৌরবোজ্জ্বল ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদানের তথ্যচিত্র। আলোকোজ্জ্বল, মনোমুগ্ধকর ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চমৎকারভাবে বঙ্গবন্ধুকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাদুঘরটিতে।

জাদুঘরে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে বিজয় স্তম্ভ ৭১-এর অবিকল রেপ্লিকাসহ ১৩টি টেবিলে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনালেখ্য। এতে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈত্রিক বাড়ি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তামাক পাইপ আর প্রিয় মুজিব কোট। এ ছাড়া মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের রেপ্লিকা রয়েছে সেখানে। দেয়ালজুড়ে টাঙানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও রাজনীতিক জীবনের ২৪টি দুর্লভ ছবি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালি জাতির কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার স্বাদ ও নতুন বাংলাদেশের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জাদুঘরটিতে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ চিত্রিত হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বাঙালির ইতিহাসের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রয়েছে জয় বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা সৃজনশীল একটি বুক শেল্ফ। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়া চীনসহ তার কর্মজীবনের ওপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’।

‘জয় বাংলা’ বুক শেল্ফে ৮০-১০০টি বইয়ের মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ বই। ‘যাদু মনি’ সম্বোধন করে মেয়ে হাসুকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিসহ তিনটি করে মোট ছয়টি চিঠি রয়েছে এখানে, যা বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে দর্শনার্থীদের। জাদুঘরটি দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। দর্শকের নজর কাড়তে ভেতরেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ফুলের বাগান। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের বহিরাবরণ সজ্জিত হয়েছে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের ওপর শিল্পীর আঁকা রঙিন ম্যুরাল চিত্রের মাধ্যমে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৮০ শতাংশ স্টেশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সহজেই বিস্তৃত রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি যেতে পারবে সবখানে। নির্ধারিত স্টেশনে দু-তিনদিন রেখে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। জাদুঘরটি কোনো স্টেশনে যাওয়ার আগে ওই এলাকায় এ নিয়ে চলবে প্রচারণা। যার মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে জাতির জনকের ইতিহাস। বছরভিত্তিক কর্মপরিকল্পনায় তা বাস্তবায়িত হবে দেশজুড়ে। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ পৌঁছে দেওয়াই এ জাদুঘর বানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য।

ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, মুজিববর্ষে আমরা নতুন কিছু করার কথা ভাবছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই এটা করা। সারাদেশের বেশিরভাগ রেল স্টেশন উপজেলা পর্যায়ে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানানোর জন্য এ উদ্যোগ। এজন্য ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বানানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এটি ছড়িয়ে যাবে সব জায়গায়। যখন যেখানে যাবে সেখানে আগে থেকে প্রচার করা হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris