আর কে রতন : দফায় দফায় মহামারী কোভিড-১৯ আঘাত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় প্রয়াসে সরকার বিভিন্ন মেয়াদ লকডাউন বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দেশের করোনার বিধিনিষেধে বন্ধ হয়ে ছিল সকল বিনোদন কেন্দ্র। এই মরণ ব্যাধির আতংকে থমকে গেছে পুরো পৃথিবী। অসহায় হয়ে পড়েছে নিন্ম্ন আয়ের এক শ্রেণীর জীবন। বর্তমানে লকডাউন শিথিল হয়ে পর্যায়ত্রমে খোলে দেওয়া হচ্ছে সবকিছু। কিন্তু এখনো স্বাভাবিক হয়নি অনেক কিছু। এতে অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। করোনায় বন্ধ থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত অনেক কষ্টে অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটছে বাংলা ঐতিহ্যবাহী যাত্রা-সার্কাস টিমের শিল্পী,কোলা কৌশলী ও প্রাণীদের। চরম বিড়ম্বনা থেকে বাদ পড়েনি এই শ্রেণীর মানুষগুলো।
করোনার কারণে সার্কাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার জন্য মাহুত আমিন আর্থিক দৈন্যতায় রীতিমতো বাধ্য হয়েই রাস্তায় রাস্তায় পথচারীদের কাছে থেকে ৫-১০ টাকা সাহায্য নিয়ে যা আয় হয় তাই দিয়ে সার্কাসে খেলা দেখানো এই বিশালদেহী প্রাণী ও আমার কোন রকম জীবন বাঁচাচ্ছি। তবে হাফিজুর রহমান বলেন সবকিছু খোলা হলে এবং আমাদের আগের মত প্রোগ্রাম চালু হলে এ কাজ করবেন না।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহীর-তানোর সড়কের কাশিম বাজার এলাকা রান্তাার দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে দেখা যায় এই হাতিটিকে। ওই সময় হাতিটির পিঠে বসেছিলেন মাহুত হাফিজুর রহমান। দেখা যায়, রাস্তাার বিভিন্ন যানবাহনের সামনে হাতিটি দাঁড়িয়ে বিশার লম্বা শুঁড় দিয়ে পথচারীদের নিকট সাহায্যে চাচ্ছে। এরপর যানবাহনে থাকা মানুষেরা যা পারছে তাই দিচ্ছে। অনেকেই হাসিমুখে হাতির শুঁড়ে গুঁজে দিচ্ছেন সাধ্যমতো অর্থ। আবার কেউ কেউ ভয়েই বের করে দিচ্ছেন পকেটের টাকা। আর হাতিটি শুঁড় দিয়ে টাকা নিয়ে তুলে দিচ্ছে তার পিঠে থাকা পরিচালকের হাতে।
ওই সময় পথচারী মোটরসাইকেল আরোহী সাংবাদিক সোহানুর রহমানের বলেন, আমি দেখলাম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যানবাহনের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছিল হাতিটি। সুন্দরভাবে আমার গাড়ীর সামনে তার শুঁড় এগিয়ে দিলো। হাতির দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে আমি একটি ১০ টাকার নোট গুঁজে দিলেন হাতির শুঁড়ের মধ্যে। তৎক্ষুনাৎ সে তার পিঠের ওপর বসে থাকা মাহুতকে টাকাটি তুলে দিলো এবং তার শুঁড় দিয়ে আমার মাথায় বুলিয়ে দেন। হাতিটির পরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সার্কাস দেখিয়ে টাকা রোজগার করে আমার সংসার ও হাতিটির পেট চলে।
কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন সব বন্ধ থাকায় হাতিটিকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাতিটিকে দিয়ে টাকা তুলছেন তিনি। সে বলেন, করোনার সময়ে কোথাও কোনো মেলা বা সার্কাস হচ্ছে না। সার্কাস না হলে কী করে চলবো? হাতিকে খাওয়াবো কী? আর আমিই বা খাবো কী? মানুষ খুশি হয়ে যা দেয়, তাই গ্রহণ করে হাতি। আর তা দিয়েই চলে আমাদের পেট।