শামীম রেজা, মচমইল : বারনই নদীতে পানি থাকলেও নেই নৌকা। দশটা নৌকার জায়গায় এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র একটা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মেশিন চালিত ভাড়ার নৌকা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে হারাতে বসেছে নৌকার যাত্রী সংখ্যা। একদিকে খরচ আর ভাড়া না উঠার কারনে নৌকায় ভাড়া মারতেও আগ্রহ নেই নৌকা মালিকদের। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ নৌকার ঘাটে গিয়ে চোখে পড়ে মাত্র একটা নৌকা। সেটাও বাগমারার কোন মানুষের না। নৌকাটা নিয়ে এসেছেন মান্দা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের (ফয়তাপুর) আব্দুস সাত্তার।
আব্দুস সাত্তারের জীবনে একটাই উপার্জনের মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। নৌকার ভাড়া দিয়ে চলে সংসারের খচরাদি। সেটা অনেক আগের কথা নৌকা দিয়ে যখন ভাড়া মারা শুরু করে তখন সামান্য ভাড়াই ছিল। নদী পথে এমনি তেই ভাড়া কম তার উপরে যাত্রীও পাওয়া যায় না। মাত্র ৫০ পয়সা থেকে শুরু। সে সময় সারা দিনে দেড়-দু’শ ভাড়া মারা ছিল কষ্টের। তখন উপজেলা জুড়ে সড়ক পথের অবস্থা এখনকার মতো ছিল না। নদী পথই ছিল প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। অনেক দূরের পথ ভবানীগঞ্জ থেকে ফতেপুর। সড়ক পথের পরিবর্তে নৌপথ ব্যবহার হতো।
সে সময় ১০ টি নৌকা নিয়ে লোকজন ভাড়া মারতে ভবানীগঞ্জ হাটে আসতো। সারাদিন হাটের জিনিসপত্র কেনা-বেচা করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন লোকজন। কালের বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হচ্ছে সব কিছুই। হারিয়ে গেছে আগের সেই চিরচেনা চিত্র। নদী থাকলেও নেই নৌকা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নদ-নদীতে এখন আর আগের মতো সারা বছর পানি থাকে না। মাত্র কয়েক মাস নদীতে পানি থাকে। সেই পানিতেই চলছে একটি মাত্র নৌকা। সপ্তাহের দুই দিন দেখা মেলে সেই নৌকার। বিশেষ করে শুক্রবার এবং সোমবার বসে ভবানীগঞ্জ হাট। সেই হাটে নৌকার নিয়ে আসেন আব্দুস সাত্তার।
আব্দুস সাত্তার বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারনে কদর কমেছে নৌকার। এক সময় নৌকায় ছিল চলাচলের প্রধান মাধ্যম। এখন আর নৌকাতে উঠতে চাই না মানুষ। খরচের কথা চিন্তা করে নৌকার ব্যবহার গ্রামাঞ্চলে কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, আগে ভবানীগঞ্জ হাটে ১০টি নৌকার প্রতিনিয়ত চলাচল করেছে। এখন শুধু আমি একাই আছি। আগের মতো লোকজন না হওয়ায় শুধু হাটের দিনে আসি। যা ভাড়া হয় তা দিয়ে কোন মতো কষ্ট করে চালায় সংসার। আগে ১০০ টাকা করে দিতে হতো ঘাটের ভাড়া। এবছর ঘাটের ভাড়া উঠাতে নিষেধ করেছে ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র।