স্টাফ রিপোর্টার : মাদক (গাঁজা) সেবনরত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) কলেজ পরিদর্শক দপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নূর-রায়হান (সুমন) এবং গাড়ি চালক আব্দুল হালিম (বাবন) কে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। গত রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা বিভাগ সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করে গতকাল সোমবার জেল হাজতে পেরণ করেছে।
নূর-রায়হান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার অন্তর্গত সন্তোষপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে। অপর আটক আব্দুল হালিম কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার গোলজারের ছেলে। রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুম মনির বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার সন্ধ্যায় গাঁজা সেবনরত অবস্থায় নূর-রায়হান ও আব্দুল হালিমকে আটক করা হয়েছে। ডোপ টেস্টে তাদের রেজাল্ট পজিটিভ হওয়ায় গতকাল সোমবার তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।
ওসি আরো জানান, বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামেবির একাধিক সূত্র জানায়, আটক নূর-রায়হান আগে থেকেই মাদকাসক্ত। একই ঘটনায় ৭-৮ মাস আগে দু’বার আটক হয়েছিলেন তিনি। সেসময় বিভিন্নভাবে তদবির করে থানা থেকেই ছাড়া পেয়ে যান।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অফিসের টাকা নয়-ছয় করা, হিসেব না দেয়া, নার্সিংয়ের প্রশ্নপত্র সেটার-মডারেটরের সম্মানীর টাকা শিক্ষকদের না দিয়ে আত্মসাৎ করা, রামেবির কর্মকর্তা-কর্মাচারি কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে যথা সময়ে ফেরত না দেয়া, দাপ্তরিক কাজে ফাঁকি দেয়াসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নিজ এলাকায় মারামরি করে পুলিশের হাতে আটক হন আলোচিত এ কর্মকর্তা।
কিন্তু সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাসুম হাবিবের সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকায় কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পায়না। তবে আটক চালক আব্দুল হালিম গত জানুয়ারিতে গাড়ি এ্যাকসিডেন্ট করে বিভাগীয় শাস্তির মুখে পড়েন।
সূত্র আরও জানায়, আটক দু’জন ছাড়াও রামেবির আরও ৩/৪জন কর্মচারি মাদকাসক্ত। শুধু তাই নয়, রামেবিতে কর্মরত একজন সুইপারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে। ওই সুইপারের চাকরির পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনেও মাদক মামলার বিষয়টি উঠে আসে। কিন্তু আটক নূর-রায়হান ওই প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে না এনে তার কাছে রেখে দেন।
এছাড়া বছর দুয়েক আগে একজন অফিস সহায়কের মাদক সেবনের টাকা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে ঝামেলা হলে নগরীর ৩নং ওয়ার্ডের এক নেতা অফিসের এসে কর্মকর্তা-কর্মচারির সাথে বসে তা সমঝোতা করে দেন। ২০১৯ সালে নগরীতে মাদক সেবন করে কয়েকজন মৃত্যুর আলোচিত ঘটনার সময় রামেবির এক অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার টাইপিস্টও ওই দলের সাথে মাদক সেবন করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে রামেবি প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানার পরও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি জানান, বিশ^বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের সার্থে সরকারি অন্যান্য চাকরির ন্যায় রামেবিতে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-চারির ডোপ টেস্ট করা প্রয়োজন।
রামেবির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমরা গতকালই চন্দ্রিমা থানার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ওই অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।