বুধবার

১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি

Paris
Update : বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

আর কে রতন : এক সময় বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়তো সারি সারি ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি বাড়ী। কালের বির্বতণে এবং মানুষের অর্থনীতির উন্নতি ঘটায় আজ কেউ আর মাটির বাড়ী নির্মাণ করছে না। ফলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মাটি দিয়ে তৈরী নক্সিগাঁথা দ্বিতল বাড়ী। বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীর গোদাগাড়ি ও তানোর উপজেলা, নওগাঁ জেলার মান্দা, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, ধামইরহাট এবং পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ধনী ও গরীব মানুষরা পূর্বে সুন্দর ডিজাইন করে মাটির বাড়ী নির্মাণ করতেন। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির দ্বিতল বাড়ি।

ঝড় বৃষ্টি হতে রক্ষার পাশাপাশি তৃপ্তিদায়ক ঠান্ডা শীতল বাস উপযোগী এ মাটির ঘর এখন আর তেমন নজরে পড়ে না। গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও শারিরিক পরিশ্রম করা গরিব পরিবারগুলো এখন তৈরি করছে ছোট্ট আকারে ফ্লাট বাড়ী। আবার কেউ কেউ উপরে তুলছেন টিনের চালা।

জানা যায়, অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল। গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল বা ব্যাট তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া হয়। মাটির বাড়ি অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষরা ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি।

উপজেলার কামারগাঁ গ্রামের দুলাল হালদার বলেন, মাটির তৈরি তার এই বাড়ি পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই এখনও তারা এই বাড়িগুলো ভাঙ্গেননি। গোদাগাড়ি উপজেলা আলোকছত্র গ্রামের আলহাজ্ব আনসার আলী বলেন, মাটি দিয়ে নির্মাণকৃত দ্বিতল বাড়ীতে গরমের সময় প্রচন্ড ঠান্ডা ও আমরাদায়ক এবং শীতের সময় বেশ গরম অনুভূত হয়। ফলে আমার দীর্ঘদিনের তৈরী মাটির দ্বিতল বাড়ী এখনও বিদ্যমান রেখেছি। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি। ফলে ঐতিহ্যবাহী মাটির দ্বিতল বাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris