রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি

যৌন হয়রানির শিকার রাজশাহীর সেই নার্সের বদলি আদেশ অবশেষে বাতিল

Paris
Update : সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে যৌন হয়রানির শিকার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেই সিনিয়র স্টাফ নার্সের বদলি আদেশ বাতিল করা হয়েছে। স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে রামেক হাসপাতাল থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করেছিলো নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার গত ১৮ মার্চ তাকে বদলির আদেশে দিয়েছিলেন। ওই আদেশে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাইয়েরও স্বাক্ষর ছিলো। কিন্তু বিষয়টি জানাজানির পর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে পরদিন ১৯ মার্চই আদেশটি বাতিল করা হয়।

সেই চিঠি গত শনিবার রাজশাহীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তার বদলির আদেশের ব্যাপারে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, বদলি এবং বদলি বাতিলের আদেশ দুইটি কপিই গত শনিবার তারা হাতে পেয়েছেন। আদেশের পর মাঝখানে সরকারি ছুটি থাকায় দুইটি চিঠি একসঙ্গে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন।

তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। রাজশাহীর ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপার্টমেন্টে ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে এসেছিলেন রামেক হাসপাতালে। অভিযোগ ওঠার পর তার কোর্স বাতিল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলাই কাল হয় ভুক্তভোগী সিনিয়র স্টাফ নার্সের। ‘স্বাভাবিক পরিবেশ’ বজায় রাখার স্বার্থে রামেক হাসপাতাল থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করেছিলো নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর।

যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাকেই বদলি করা হয়েছিলো। তাই বিষয়টি তার জন্যই ‘শাস্তিমূলক’ হয়েছে বলে দাবি করেন যৌন হয়রানির শিকার ওই নার্স। এর কারণে ভবিষ্যতে আর কোনো নার্সের সঙ্গে কোনো চিকিৎসক এমন অসদাচরণ করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাবেন না বলেও তিনি মনে করেন। তাহলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিচার চাওয়াটাই কী তার অপরাধ? এমন প্রশ্নও তুলেছিলেন। যৌন হয়রানির শিকার ওই নার্স বলেন, ঘটনার পর প্রথমে তিনি রামেক হাসপাতাল নার্সিং সুপারিনটেনডেন্টকে বিষয়টি জানান।

কিন্তু চেপে যেতে বলেন তিনি। বাধ্য হয়ে নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে জানান। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে এরপর অভিযুক্ত চিকিৎসক নিজের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু হাসপাতালের তদন্ত কমিটি চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে উল্টো তাকেই নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করে। তদন্ত শেষে ওই কমিটি কী প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা তাদের কাউকে দেখানো হয়নি। সেই প্রতিবেদন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে পাঠানোর পরই এই বদলির আদেশ হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন অভিযোগকারী নার্স। তাই ওই চিকিৎসকের শাস্তির ব্যাপারে ভুক্তভোগী নার্স এখন ব্যক্তিগতভাবে আইনি পথেই হাঁটবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, বিষয়টি জানাজানির পর এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে পরদিন ১৯ মার্চ আদেশটি বাতিল করা হয়। রামেক হাসপাতাল নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, চিকিৎসকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর ওই সিনিয়র নার্স প্রথমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই জানান। কিন্তু সেখান থেকে সাড়া না পাওয়ায় তিনি ঘটনাটি নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে জানান। এরপরই তারা সরব হন। ওই চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। এর পরও ওই নার্সকে বদলি করা হয়েছিল।

তবে আদেশটি বাতিল হওয়ায় তারা আপাতত সন্তুষ্ট। এখন পরবর্তী বিষয়গুলো ভুক্তভোগী নার্স পারিবারিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান রামেক হাসপাতাল নার্সিং অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি। এর আগে গত প্রায় ১০ মাস আগে চাকরি পেয়ে রামেক হাসপাতালেই যোগ দেন ওই নার্স। এরপর তিনি শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন। গত ১৮ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেদিনই কর্তব্যরত অবস্থায় চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান তাকে যৌন হয়রানি করেন। পরদিন একই কাণ্ড ঘটান এই চিকিৎসক।

ঘটনা জানাজানি হলে ২০ জানুয়ারি ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। ওই কমিটি ১০ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের একটি কপি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফরে পাঠানো হয়। এতে তাকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছিলো বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris