মঙ্গলবার

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেমতন্ন:

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

খুব খারাপ অবস্থা। বৌকে নিয়ে নার্সিংহোমে ছুটছি।আর বলেন কেন? এক বিয়ের নেমতন্ন ছিল। গাড়ি ভাড়া গিফ্ট সব মিলিয়ে কড়কড়ে দেড় হাজার বেরিয়ে গেল। এদিকে পেট তো মাত্র তিনটে। আমার নিজেরটা না হয় জালার মতো, বউটাও ঠিকঠাক টেনে দেবে। কিন্তু সমস্যা হলো ছেলেটাকে নিয়ে। ঐটুকু সাড়ে ছয় বছরের ছেলে কতো আর খাবে?…… অতএব এরজন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা।তা বলতে নেই পরিকল্পনার অভাব রাখি নি। সন্ধে থেকে কিছু খেতে দিইনি ছেলেকে।

নিজেরাও কিছু খাইনি দুপুর থেকে। বাড়িতে রীতিমত গোলটেবিল করে, না না, তিনকোনা টেবিল করে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, মাছ, মাংস গুলোই মেনলি অ্যাটাক করবো আমরা। ওসব পুরি, তরকারি স্যালাড ফ্রাই জাস্ট ইগ্নোর করব। ছেলেটাকেও বোঝানো হয়েছে বিরিয়ানি বা ফ্রাইড রাইস আর মাটনের জন্যে যেন অপেক্ষা করে। কিন্তু যতই হোক শিশু তো, তাই যদি ভূলে যায় কী খেতে হবে, তাই পইপই করে বলা হয়েছে মায়ের দিকে বা আমার দিকে যেন সবসময়ে নজর রাখে। চোখ বড়ো বড়ো করলে যেন সেই খাবার অ্যাভোয়েড করে। ট্যাক্সিতে যেতে যেতেও একবার বুঝিয়েছি। সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।যুদ্ধ শুরু হোলো।…… কিন্তু প্রথমেই ছন্দপতন। এরা মোগলাই বা চাইনিজের দিকে যায়ই নি।

সম্পূর্ণ ঘরোয়া বাঙালি রান্না সাদা ভাত, মাছের মুড়ো দিয়ে সোনামুগের ডাল, ইচর চিংড়ি, আলু-ভাজা, বেগুনি, কাতলা কালিয়া, কচি পাঠার মাংস, দই মিস্টি আর পান। পুরোপুরি আউট অব সিলেবাস।আমি আমার গিন্নী কিংকর্তব্যবিমূড়……….কিন্তু ছেলের দেখি সপ্রতিভতা একেবারে তুঙ্গে। পাতে ভাত ডাল ইঁচর পড়তেই পুরুর ওপর আলেকজান্ডারের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো। নিস্কিতি দেবার লক্ষনই নেই। মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না। এদিকে আমি ওর মায়ের দিকে তাকাচ্ছি চোখ পাকাচ্ছি, তা সেও দেখি সবভূলে ইঁচর চিংড়ি চিবোতে ব্যাস্ত।আমি এদিকে খাচ্ছি আর চোখ পাকাচ্ছি। মাঝেমাঝে খাঁচায় বন্ধ বাঘের মত মৃদু গর্জন ছাড়ছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। খানিক পরে ছেলে মুখ তুলে তাকাল আমি আশার আলো দেখলাম, যতটা পারলাম চোখ বড়োবড়ো করে পাকিয়ে তাকালাম।

এরপর আরও পাকালে মনিগুলো ঠেলে বেরিয়ে না আসে। ছেলে বলল জলটা দাও তো খুব ঝাল। জলটা এগিয়ে দিয়ে একবার কড়া চোখে তাকিয়ে কঠিন করে মাথা নেড়ে না বললাম। ছেলে কি বুঝলো কে জানে। এক গ্লাস জল চোখের ওপর কোতকোত করে খেয়ে নিল। এই সময় পাশ দিয়ে ডাল নিয়ে যাচ্ছিল একটা ছেলে। আমার ছেলে নাক মুছে তাকে বলল, আর একটু ডাল দাওতো হেব্বি হয়েছে।এখনও পঞ্চাশ টাকা তুলতে পারিনি বোধহয়। চোদ্দোশো পঞ্চাশ বাকি। আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। টেবিলের তলা দিয়ে পা চালিয়ে দিলাম। বেশী জোরে চালাইনি। সতর্ক করার জন্য আলতো করেই চালিয়েছিলাম।

কিন্তু কি হইতে কী হইয়া গেল কে যানে…….ডিস্টেন্স মেজারমেন্টের ভূলে পাটা ফস্কে গিয়ে ধাক্কা মারল টেবিলের একটা স্টান্ডে। স্টান্ডটা খুলে গিয়ে সব খাবার আর প্লেট নিয়ে কেতরে পড়ল একপাশে। বৌ কিছু বুঝতে না পেরে হঠাৎ একটা আওয়াজ করল, কোঁক, বাবাগো…….আসলে হয়েছে কি বৌয়ের গোড়ালির পাশে একটা ফোড়া হয়েছিল বেশকিছুদিন। পেকে এসেছিল। খুব ব্যাথা।……. ওই স্টান্ডটা পরবি তো পড় আর জায়গা পেলনা, ওই ফোড়ার উপরেই গিয়ে পড়তে হলো।চোদ্দোশো টাকা ডিউ পড়ে রইলো।এখন বৌকে নিয়ে ছুটছি নার্সিং হোমে…..


আরোও অন্যান্য খবর
Paris