বৃহস্পতিবার

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
মান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল রাসিক মেয়রের সাথে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাৎ সিরাজগঞ্জে হেরোইন বহনের দায়ে গোদাগাড়ীর ২ যুবকের যাবজ্জীবন নিজের নামে কোনো প্রকল্প চান না প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী নগরীতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে : মেয়র গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন সোহেল পবায় ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দের সাথে চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদের মতবিনিময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত তানোরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন ময়না মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

কেন এমন অবমাননা?

Paris
Update : রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

শাহানুর রহমান রানা : রাজশাহী মহানগরীর অধিকাংশ রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতে শোভা পেয়েছে সাজানো গোছানো পরিপাটি পরিবেশের চিত্র। শোভাবর্ধণের জন্য রাস্তার মধ্যভাগের আইল্যান্ড ও ফুটপাতগুলোকেও অলঙ্কিত করা হয়েছে গাছ, নামিদামি টাইলস্, কারুকাজ সজ্জিত রেলিংসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চৌরাস্তার মোড়গুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে শোভাবর্ধনকারী স্থাপনা, ম্যুরাল, ঝর্ণাধারা, বিভিন্ন রংয়ের অত্যাধুনিক লাইট আর মনুমেন্ট নির্মাণ করে। নগরীর বড় বড় মোড়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রেলগেটস্থ কামারুজ্জামান চত্বর, নওদাপাড়া আমচত্বর, সিটি বাইপাস মোড় সংলগ্ন ঐতিহ্য চত্বর, আলিফ-লাম-মীম এলাকায় বিমান চত্বর, ভদ্রা মোড়স্থ স্মৃতি অম্লান চত্বর, তালাইমারি মোড়, দড়িখরবনা মোড়সহ আরো রয়েছে একাধিক শোভা বর্ধনকারী বিশালাকার বেশকিছু চত্বর।

দেশের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়কাল, মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন ও স্বাধীনতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া সাপেক্ষে নগরীর অন্যান্য চত্বরের তুলনায় কামারুজ্জামান চত্বরটির গুরুত্ব খুব স্বাভাবিক কারণেই নগরবাসিসহ দেশবাসীর কাছে অনেক বেশি। কারণ, দেশের জাতীয় চার নেতার অন্যতম নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহোচর হিসেবে আমাদের এই নগরীর সস্তান শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান। তিনি নির্দ্ধিধায় রাজশাহী ও দেশবাসির গর্ব।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের স্মৃতি বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছ তুলে ধরার নিমিত্তে নগরীর রেলগেটস্থ এলাকায় ২০১১ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিলো কামারুজ্জামান মনুমেন্ট। মনুমেন্টির ঠিক পাদদেশে পাথর সদৃশ্য টাইলস্ দিয়ে তৈরি করা হয়েি লো কামারুজ্জানের একটি ম্যুরাল। স্থানটিকে কামারুজ্জামান চত্বর নামেই চেনেন মহানগরবাসি।

শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বরের শোভাবর্ধনের জন্য মনুমেন্টির উত্তর-পশ্চিম কোনে বাহারি রংয়ের লাইট, কৃত্রিম ঝর্ণাধারা আর নামিদামি টাইলস্ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল শোভা বর্ধক স্থান। স্থানটির সৌন্দর্য্য আরো বেশি বাড়িয়ে তোলার জন্য সেখানে লাগানো হয় বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। শোভাবর্ধক স্থানটির ভাবগাম্ভীর্য্য সকলের কাছে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরার নিমিত্তে স্থানটিতে ঝুলানো হয়েছিল শহীদ কামারুজ্জামানের বাঁধাইকৃত একটি ছবি। কাঁচ, মোটা লেমিনেটেড প্লাস্টিক, স্টীলের পাইপ আর বোর্ড দিয়ে তৈরি করা শহীদ কামারুজ্জামানের বাঁধাই করা ছবিটি উক্ত স্থানের নামের সাথে তারতম্য আরো বেশি ফুটিয়ে তুলেছে দর্মনার্থীদের কাছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সেটি আর পূর্বের ন্যায় অক্ষত নেই। কে বা কাহারা বেশ কয়েক মাস আগে সেটিকে নষ্ট করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

ছবিটির উপরের অংশে অর্থাৎ শহীদ কামারুজ্জামান-এর ঠিক কপালের মধ্যভাগে কে বা কারা কোন জ্বলন্ত গরম বস্তু দিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও ছবির নিম্নভাগেও অন্যকোন বস্তুদিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করার চেষ্টা করায় সেখানেও স্থায়ী দাগ সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধাই করা ছবিটির একাংশের প্লাস্টিকও ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এক কথায় ছবিটি এখন আর অক্ষত নেই। ছবিটিতে এই ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করাতে ছবির মৌলিকতা আর ভাবগার্ম্ভিয্য নষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যেই।দায়িত্বহীনতা আর প্রতিহিংসার ঘৌড়দৌড় এখানেই শেষ নয়। কামারুজ্জামান চত্বরের মধ্যভাগে মনুমেন্টের নিচের দিকে নির্মাণ করা কামারুজ্জামানের ছবি সম্বলিত প্রতিকৃতিতেও (ম্যুরাল) কে বা কারা ইট জাতীয় বস্তু দিয়ে ঠোঁটের নিম্নভাগ থেকে নাকের উপরিভাগ পর্যন্ত নষ্ট করার অপপ্রয়াসও চালিয়েছে। অপচেষ্টা চালানো হয়েছে সেটির সৌন্দর্যকে নষ্ট করার জন্যও।

অন্যদিকে, নগরীর বাস টার্মিনাল আর রেল স্টেশনের মধ্যভাগের চত্বরের পশ্চিম দিকে বেশ কয়েক বছর পূর্বে নিজ উদ্যোগে আ’লীগের এক নেতা নির্মাণ করেছিলেন শহীদ কামারুজ্জামানের ছবি সম্বলিত একটি প্রতিকৃতি। প্রথম দিকে স্থানটি অক্ষত থাকলেও সেটি এখন আর অক্ষত নেই। জাতীয় নেতার ছবিটিও এখন আর নেই স্থানটিতে। অবকাঠামো থাকলেও নেই ছবি। বিষয়টি সকলের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবেই প্রতিয়মান হচ্ছে। দেশের অন্যতম জাতীয় এক নেতার ম্যুরাল, মনুমেন্ট কিংবা ছবিকে কেন্দ্র করে এমন ধরনের আচরণ ও প্রতিহিংসা চালানো দেশ ও জাতীয় জন্য নির্দ্বিধায় লজ্জাজনক বলে মন্তব্য নগরীর সচেন মহলের।

নানা তথ্যভান্ডার থেকে পাওয়া সূত্রে জানা যায়, মহান ব্যক্তিত্ব এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নাটোর মহকুমার বাগাতিপাড়া থানার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জে। তাঁর দাদা গুলাই এর জমিদার হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার (১৮৪৮-১৯৩৬) ব্রিটিশ আমলে একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান প্রচন্ড শক্তি নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শহীদ এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান রাজশাহীর এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান৷ তিনি তার বাবার প্রথম সন্তান ছিলেন৷

কামারুজ্জামানের পিতা আবদুল হামিদ মিয়া (১৮৮৭-১৯৭৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক। তিনি রাজশাহীতে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন। এই পিতার গর্বিত ও বিশ্বনন্দিত সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামানও দাদা এবং পিতার আদর্শকে সামনে রেখে শৈশবেই সেই অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পিতা আবদুল হামিদ মিয়া ও মাতা জেবুন নেসার ১২টি ছেলেমেয়ের মধ্যে কামারুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান।

তাঁর জন্মের সময়ে দাদা হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার ছিলেন কলকাতায়। তিনি রাজশাহী এসে পৌত্রের নামকরণ করেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম হেনা যা তাঁর দাদি দিয়েছিলেন। হাসনা-হেনা ফুলের গন্ধ ও সৌরভে বংশের সুনাম বৃদ্ধি করবে এই হেনা আদরের পৌত্র; এই ছিল দাদির ঐকান্তিক প্রার্থনা। দাদির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। কামারুজ্জামান হেনার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় বাড়িতেই পিতৃব্য বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজসেবক কবি মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ সাহেবের কাছে। তারপর তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তাঁর এক ফুফা। হঠাৎ করেই তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে বদলি হয়ে যান।

ফলে কামারুজ্জামান হেনাকেও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যান। কামারুজ্জামান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ল’ পাশ করেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা শাখার সম্পাদক এবং ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানার চামরুল গ্রামের জোতদার আশরাফ উদ্দীন তালুকদারের কন্যা জাহানারা বেগমকে বিবাহ করেন। তিনি ছয় সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানগণ হলেন ফেরদৌস মমতাজ পলি (১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমি (১৯৫৭), এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (১৯৫৯), এএইচএম এহসানুজ্জামান স্বপন (১৯৬১) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (১৯৬৪)। তাঁর বড় পুত্র অ্যাডভোকেট খায়রুজ্জামান লিটনও পিতার মতই রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। এ কথা স্বীকার্য যে, চারপুরুষ রাজনীতিতে এমন পরিবার বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris