শনিবার

১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

রাজশাহীর মেয়ে ডাঃ সোমা ঢাকায় খুন! স্বামী পরিচয়দানকারী রাকিবুল রিমান্ডে

Paris
Update : শনিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২১

আরা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের একটি ভাড়া বাসা থেকে রাজশাহীর মেয়ে ইন্টার্নি চিকিৎসক সিরাজুম মুনিরা সোমার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন। পুলিশের ধারণা, সোমাকে হত্যার পর তার হাত-পা-মুখমণ্ডল স্ককটেপ দিয়ে মোড়ানো হয়। সোমাকে হত্যার অভিযোগে রাকিবুল আজাদ নামে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

রাজশাহীর মেয়ে সিরাজুম মনিরা সোমা। বাবা আতাউর রহমান রাজশাহীতে প্রাণিসম্পদ বিভাগে চাকরি করেন। আর মা হোসনে আরা বেল পুকুর হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সোমা ছিলেন বড়। তার ছোট ভাই একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের স্বপ্ন ছিল সোমা বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবেন। কিন্তু সব স্বপ্ন ধুলোয় মিলে গেল সোমার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। সোমার বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। যে ছেলে বিয়ে করেছে বলে দাবি করেছে সে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অথচ তারা একসঙ্গে থাকত। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।

মেয়ে এমবিবিএস পাসও করল। কিন্তু মেয়ে আমার মানুষের সেবা করার সুযোগ পেল না। যে আমার মেয়েকে খুন করেছে, তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। জানা যায়, বানেশ্বর নাদের আলী গার্লস কলেজ থেকে ২০০৯ সালে সোমা এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ২০১২ সালে ডাক্তারি পড়তে চীনে চলে যান। সেখান থেকে এমবিবিএস পাশ করে ২০১৮ সালে দেশে ফেরেন। এরপর বিএমডিসি থেকে পরীক্ষায় পাশ করে ২০২০ সালের মার্চ থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন। সোমা থাকতেন খিলক্ষেত এলাকায়। সোমার বাবা বলেন, দেশে ফেরার পর মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। মেয়ে বলল, ইন্টার্ন শেষে কোথাও জয়েন করে বিয়ে করবে। এরইমধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খিলক্ষেত থেকে ফাহাদ নামে এক বাড়িওয়ালা একজন ফোন করে বলেন, আপনার মেয়ে মারা গেছে, আপনি এসে নিয়ে যান।

সোমা কীভাবে মারা গেল জানতে চাইলে বাড়িওয়ালা জানায়, যে ছেলের সঙ্গে থাকত সে এসে জানিয়েছে, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে ফিরে দরজা ভেঙে ঢুকেছে। এরপর দেখতে পেয়েছে সোমার মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে পেচানো। তার দুই হাত ও দুই পা স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা ছিল। এরপর তাকে কোলে নিয়ে রাকিব অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জ্ঞান ফিরে বিষয়টি তিনি বাড়িওয়ালাকে জানান। বাড়িওয়ালা পরে মেয়ের বাবা ও পুলিশকে খবর জানান। খবর পেয়ে পুলিশ খিলক্ষেত আম বাগান এলাকার ওই বাসা থেকে স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় সোমার মরদেহ উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে রাজশাহী থেকে ছুটে যান বাবা আতাউর রহমান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের চিকিৎসক তাকে জানিয়েছে, মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে, হত্যাকারী কে? একইসঙ্গে ২৬ জানুয়ারি দুপুরে খিলক্ষেত থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন সোমার বাবা।খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্সী ছাব্বির আহম্মদ জানান, ইন্টার্ন করা অবস্থায় ওই হাসপাতালেরই ইন্টার্ন চিকিৎসক রাকিবুল আজাদের সঙ্গে মনিরার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে খিলক্ষেত এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন তারা। মনিরাকে খুন করার অভিযোগে রাকিবুল আজাদ নামে ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের রহস্য উদঘাটনে আজাদকে তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মনিরার মা হোসনে আরা বলেন, ছোটবেলা থেকে মনিরার স্বপ্ন ছিল বড় চিকিৎসক হবে। তাই চীনে গিয়ে পড়াশোনা করে আসে। সামনে, লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু খুন হওয়ায় তার আর হলো না। তাই মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে খিলক্ষেতের আম বাগানের দুই রুমের ওই বাসাটি ভাড়া নেন সিরাজুম মনিরা ও রাকিবুল আজাদ। বাড়িওয়ালাকে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন।

জানতে চাইলে বাড়িওয়ালা ফাহাদ শুক্রবার বলেন, দুই রুমের ওই বাসাটি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নেন। দুজনেই নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দেন। মাঝে-মধ্যে ঝগড়া লাগত। তবে কাউকে কিছু বুঝতে দিতো না। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে কেউ না আসায় আমরা জানতে চাইতাম। করোনার দোহাই দিয়ে তারা বিষয়টি উড়িয়ে দিতো। বাড়িওয়ালা বলেন, পুলিশ যখন লাশ উদ্ধারে আসেন, তখন দরজা খোলা ছিল। দরজা ভাঙা বলতে ছিটকিনি ওঠানো ছিল। ছেলের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না জানলেও কুষ্টিয়ায় তার বাড়ি বলে সে জানিয়েছিল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris