শাহজাহান শাজু, নিয়ামতপুর : নিয়ামতপুরে যৌতুকের দাবীতে এক গৃহবধুর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে প্রায় ১৫ দিন ধরে অবরুদ্ধ রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শাশুড়ীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গৃহবধুর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গৃহবধুর স্বামীর বাড়ি হাজির হয় পুলিশ। ঘটনার সত্যতায় স্বামী আব্দুর রাজ্জাক ও শ^াশুড়ী রহিমাকে আটক করে অবরুদ্ধ ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে নিয়ামতপুর থানা পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু বর্তমানে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় ১৬ বছর আগে হাজিনগর ইউনিয়নের চৌপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মমতাজের একমাত্র কন্যার সাথে বিয়ে হয় ভাবিচা ইনিয়নের আমইল গ্রামের (কার্নিপাড়া) বাসিন্দা মৃত আসির উদ্দীনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের (৩৫)। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবীতে স্বামী ও শ^াশুড়ী নির্যাতন করত গৃহবধুর উপর। কিন্ত সব নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর সংসারে থাকতে চেয়েছিল ওই গৃহবধু। কিন্তু সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর তার উপর চলে পাশবিক নির্যাতন। নির্যাতন শেষে ব্লেড দিয়ে গৃহবধুর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ঘটনা জানাজানি হলে মঙ্গলবার গভীর রাতে ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার সত্যতায় ওই রাতেই গৃহবধুর স্বামী ও শ^াশুড়ীকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরদিন বুধবার তাদের দু’জনকেই জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু সাংবাদিককে জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবীতে তাকে মাঝে মধ্যেই মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করত তার স্বামী। আর এ কাজে তাকে সহযোগীতা করত শ^াশুড়ী রহিমা। মাঝে মধ্যে দু’জনেই এক সাথে তার উপর চালাত পাশবিক নির্যাতন। ঘটনার রাতে এ নিয়ে আবার শুরু হয় তার উপর শারিরীক নির্যাতন। নির্যাতন শেসে স্বামী-শ^াশুড়ী দুজনেই ব্লেড দিয়ে তার মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে ফেলে তাকে। শুধু তাই নয় মায়ের বাড়ীর সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এমন কি এ ঘটনা বাবা বাড়ীর কাউকে জানানো হলে পরিনতি আরো খারাপ হবে বলেও হুমকি দিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
গৃহবধুর মা হাফিজা জানান, মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কয়েকদিন থেকে ব্যর্থ হন তিনি। শেষে মেয়েকে দেখার জন্য মঙ্গলবার মেয়ের বাড়ী হাজির হন। কিন্তু মেয়ের বাড়ীর লোকজন কেই তাকে বাড়ীতে ঢুকতে না দিলে পরিস্থিতির ভয়াবহতায় শংকিত হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে স্থানীয় পাড়া-প্রতিবেশীর সহযোগীতায় মেয়ের বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এরপর মেয়েকে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। মেয়ে ন্যাড়া হয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে বিছানায়। মেয়ের অবস্থা দেখে এবং তার নিকট সব কথা শুনে থানা পুলিশকে সংবাদ দেন তিনি।
ওসি হুমায়ন কবীর জানান, গৃহবধুর মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার গভীর রাতে অবরুদ্ধ ওই গৃহবধুকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গৃহবধুর উপর নির্যাতনসহ তর মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়ায় স্বমী আব্দুর রাজ্জাক ও শ^াশুড়ী রহিমাকে আটক করা হয়েছে। পরদিন বুধবার গৃহবধু নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে ওই মামলাই স্বামী ও শ^াশুড়ী দু’জনকেই আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।