শাহ্ আলম সেলিম, লালপুর : একাত্তরে মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন নাটোরের লালপুরের রোকেয়া বিবি। একজন নারী হিসেবে অমূল্য সম্পদ ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু আজও একাত্তরের নির্যাতিতা নারী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তিনি। এ বিষেয়ে আবেদন করছেন তবে স্থানীয় প্রসাশনের উদাসীনতার স্বীকার হন তিনি।
এখন ৬৬ বছর বয়সে জীবন চালান ইট ভেঙ্গে। সরকারের সামান্য সুহানুভূতি পাল্টে দিতে পারে তাঁর আসন্ন রার্ধ্যকের জীবন। এই বয়সে ইটের ভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে একাত্তরের নির্যাতিতা নারী রোকেয়া বিবি চোখের জলে তাঁর আকুতিই বলে দেয় জীবনযুদ্ধে বড়ই ক্লান্ত তিনি। ১৯৭১ সালে ২০ জুলাই নাটোরের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে হানা দেয় পাকিস্তানের সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা। তখন ১৭ বছর বয়সী রোকেয়া নরপিশাচদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন।
সেই দুর্বিসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে তাকে। তবে এখনো মৃক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি তাঁর। বেঁচে থাকার তাগিদে মাত্র ১৭০ টাকা হাজিরায় দিনমজুরিতে ইটভাটায় কাজ করেন রোকেয়া বিবি। এতে খুবই কষ্টে দিনযাপন করতে হয় তাকে। একাত্তরে নির্যাতিতা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সরকারীভাবে যোষণার পর সামান্য স্বস্তির মর্যাদাপূর্ণ জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা র্নিবাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন তিনি। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি রোকেয়া বিবির। স্থানীয় সংসদ সদস্য সম্প্রতি একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিলেও রোকেয়া বিবির স্বীকৃতি মেলাটা দূর্ভোগ মনে করেন তিনি। একাত্তরের লাখো নির্যাতিতা নারী তাদের অমূল্য ত্যাগ স্বীকার করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আগেই নির্যাতিতা রোকেয়া বিবির মুক্তিযোদ্ধো হিসেবে স্বীকৃতি চান তাঁর শুভাকাঙকীরা।
এ বিষয়ে রোকেয়া বিবি কথা বলতে গিয়ে শুধু চোখের জল ঝরতে দেখা যায় তাঁর। কোন কথায় বলতে পারেনি তিনি। এবিষয়ে রোকেয়া বিবির ভাই পানি ঝরা চোখে জানান, মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে গবেষণামূলক বিভিন্ন লেখায় রোকেয়ার নির্যাতনের কথা উঠে এসেছে। তবুও মুক্তিযোদ্ধো হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি রোকেয়া বিবির। এবিষয়ে লালপুর উপজেলা র্নিবাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যূতি বলেন, তার আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রোকেয়ে বিবি অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন বলে তিনি জেনেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুপারিশে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, ইতিমধ্যে তাকে একটি বাড়ী তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নামের যেন তালিকা হয়, এজন্য সংসদ সদস্য হিসেবে আমার যা করার তা আমি করবো। আশাকরি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা পাবেন তিনি এটাই প্রত্যাশা করি।