বুধবার

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি

Paris
Update : শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সোনাদিঘি সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে ১৪ দলের আয়োজনে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ১৪ দল রাজশাহীর সমন্বয়ক, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকায়, আমরা কেউ ভূবন মোহন পার্কে, কেউ রাজশাহী কলেজে, কেউ কোর্ট চত্বরে, কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনে গিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।

এটি হওয়া উচিত ছিল না। রাজশাহীতে অনেক আগেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত ছিল। সোনাদিঘি সংলগ্ন সার্ভে ইনস্টিটিউট ছিল জরার্জীন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল প্রথম মেয়াদে আমি মেয়র থাকাকালে নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে জরার্জীন ভবন থেকে সার্ভে ইনস্টিটিউটকে নওদাপাড়ায় নতুন ভবনে স্থানান্তর করি। এরপর থেকে পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউট পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সেখানে রাজশাহীর জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মিনার নির্মাণ করা হবে। মেয়র আরো বলেন, সার্ভে ইনস্টিটিউট পরিচালনা করে রাজশাহী জেলা পরিষদ।

আমি ও এমপি বাদশা ভাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছিলাম, বলেছিলাম, সোনাদিঘিকে নতুন করে সাজিয়ে তার হারানোর ঐতিহ্য ফিরে আনা হচ্ছে। সোনাদিঘির পাশে সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য উপযুক্ত স্থান। সেখানে আমরা শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চাই। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেক সময় একেক কথা বলেছেন, সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কথাও বলেছেন। সোনাদিঘিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন সিন্টি সেন্টার নির্মিত হচ্ছে। তার পেছনে সার্ভে ইনস্টিটিউটের স্থানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কোন যুক্তি নেই। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র লিটন বলেন, ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ নির্মাণের দাবি, জনগণের দাবি, জনগণের দাবি সামনে কেউ কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন না। রাসিক মেয়র আরো বলেন, মানববন্ধন থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বলতে চাই, আমরা রাজশাহীর মানুষ যখন একমত হয়েছি, একজোট হয়েছি, একসঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করবো ইনশাল্লাহ। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাজশাহীর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নির্মাণের জন্য ১৬ কোটি ৫০ লাখ বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

মেয়র আরো বলেন, শিগগিরই আমাদের মাঝে এমন একজন ব্যক্তি আসবেন, তাঁর সাথে প্রবীণ ভাষা সৈনিকেরা থাকবেন, তাদের নেতৃত্বে সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে শহীদ মিনারের প্রতীক কাঠামো আমরা তৈরি করবো এবং আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি সেখানে দলে দলে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করতে চাই। বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা। আমরা ১৪ দল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছি সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের জায়গাটি পরিত্যক্ত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জন্য সেটাই সঠিক স্থান বলে আমরা মনে করি। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করবোই। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যারা বাধা দিবে, রাজনৈতিকভাবে তাদের জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ব্যাপারে যেমন আমরা কোন আপস করি না, তেমনি শহীদ মিনারের ব্যাপারে কোন আপস নেই। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে চাই। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি, কিন্তু তিনি শোনেননি। এখন শুনছি সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হবে। আমরা এটি হতে দিবো না। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে মাননীয় মেয়র ও সংসদ সদস্যকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নে লিটন ভাই ও বাদশা ভাই কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় শেখ হাসিনা অনেক উন্নয়ন দিয়ে রাজশাহীবাসীকে পুরস্কৃত করেছেন। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে কষ্ট দিতে চাই না। সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হলে, সেখানে আমরা দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করতে পারবো। মানববন্ধন পরিচালনা করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, ওয়াকার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, বাংলাদেশ জাসদের রাজশাহী মহানগর সভাপতি নুরুল ইসলাম হিটলার। মানববন্ধন ১৪ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশ নেন।

এদিকে মানববন্ধনে বিভিন্ন স্তরের থেকে ও রুয়েট থেকে মহিদুল ইসলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল এসে মানবন্ধনে যোগ দেন। মিছিলের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শ্যাম দত্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, শাহমখদুম থানা বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পদক মহিদুল ইসলাম মোস্তাফা, মুখতাদীর আলী মাসুদ, ছাত্র লীগ সাংগঠনিক সম্পাদ ও আরো অন্যান্য নেতৃবৃন্দু উপস্থিত ছিলেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris