শুক্রবার

১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নেই ভারতীয় কেউ, আছেন বাংলাদেশের ড. ইউনূস ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ত্বের শক্ত প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা নাচোলে সাংবাদিক শিশিরের ইন্তেকাল গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ আদালতে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসাকে স্বামী দাবি করলেন মডেল মেঘনা রাজশাহীতে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় প্রাণ হারাতে হলো পিতাকে রাজশাহীতে কলেজ ছাত্রীর নগ্ন ছবি প্রস্ততকারী মুন্না পুঠিয়া থেকে গ্রেফতার পত্নীতলায় ভূমি অফিসের দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে দুদক ও ডিসিকে অভিযোগ রাজশাহীতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে সংবর্ধনা দেশের কম দরিদ্র বিবেচনায় রাজশাহী বিভাগ তৃতীয়তম

গাছে গাছে দুলছে সজিনা ডাঁটা ভালো ফলনে লাভবান কৃষক

Paris
Update : রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

ইউসুফ চৌধুরী : সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলেইফেরা (গড়ৎরহমধ ঙষবরভবৎধ), ইংরেজি নাম ড্রামস্টিক ট্রি আবার গবেষকদের মতে ‘মিরাক্কেল ট্রি’ (বিস্ময় বৃক্ষ বা অলৌকিক গাছ)। পুষ্টিবিদদের মতে, সজনে গাছ ৩০০ ধরনের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। সজনের বাকল, শিকড়, ফুল-ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। সড়ক-মহাসড়কের পাশে, ক্ষেতের আইল, পুকুর পাড় ও বাঁধের ধার, খাল-বিল ও নদীর ধার, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মাঠ, পাড়া-মহল্লায় বসতবাড়ির আঙ্গিনা, বিভিন্ন পতিত জমিসহ যে কোন ফাঁকা শুষ্ক জায়গায় সজনে গাছ লাগানো যায়। সজনে চাষে বীজ বা চারাও প্রয়োজন হয় না শুধু ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই ডাল থেকে শাখা-প্রশাখা হয়ে গাছে পরিণত হয়। অবহেলা অযত্নে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠে ফলে তেমন কোন খরচ হয় না। সজনে চাষে আলাদা কোন জমি বা বিশেষ কোন পদ্ধতি গ্রহণ, রাসায়নিক সার, পরিচর্যা বা বালাইনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। সারা বছর সজনে ডাঁটার ফলন পাওয়া যায় তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে বেশি। বাড়ির পতিত জমিতে পরিকল্পনা ছাড়াই বেড়ে ওঠা এসব গাছে বছরে একবারই সজনে ডাঁটা ধরে। আবার বারোমাসি নামে আরেক ধরনের সজনে গাছে বছরে তিন থেকে চার বার ফলন পাওয়া যায়। বিনা খরচে সজনে চাষ করে অধিক আয় পাওয়া যায়। তাঁরা নিজ উদ্যোগে সজনে গাছ লাগিয়ে থাকেন তবে কৃষি বিভাগও কৃষকদের জমিতে সজনের চাষ করতে উৎসাহিত করছেন। প্রতিটি গাছে গড়ে প্রায় ১৫-৩০ কেজি সজনে ডাঁটা হয়। স্থানীয়ভাবে বিক্রয়ের পাশাপাশি হাট-বাজার থেকে পাইকাররা সজনে ডাঁটা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানী করছেন। সজনের ডাঁটা ও পাতা বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
সজনে ডাঁটা অতিপরিচিত একটি সবজি যার পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে বহুগুণে। সবজি হিসেবে সজনে ডাঁটার ডাল, সজনে ডাঁটা দিয়ে আলু ঝোল, বড়ির ঝোল, মাছের ঝোল, চিংড়ি ঝোল, আম-আলু-সজনে ডাঁটার ঝোলসহ হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার তরকারি রান্না হয়। শুধু সজনের ডাঁটাই নয়, সজনের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। সজনে পাতাকে বলা হয় নিউট্রিশন্স সুপার ফুড। মুখে রুচি বাড়াতে সজনে পাতা ভেজে বা ভর্তা করে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সজনে ডাঁটা লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে এবং শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। সজনে ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন আছে। এটি হাড় গঠনে সাহায্য করে, শরীরের ব্যথা ও ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া রক্তে চিনির পরিমাণ কমায় ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলার সর্বত্রই প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিন (পুষ্টি ভান্ডার) খ্যাত সজিনা ডাঁটার প্রচুর পরিমাণে ফলন হয়েছে। প্রতিটি এলাকার গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে সজনে ডাঁটা ধরেছে। গাছের শাখা-প্রশাখায় নুয়ে পড়ে বাতাসে দুলছে সজিনা ডাঁটা। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও ডাঁটায় পরিপূর্ণ। গ্রীষ্মকালীন সবজির রাজা মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজিনা ডাঁটার স্থানীয় হাট-বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই হাট-বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হয় সজনে ডাঁটা। কৃষকেরা নিজেদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত বিক্রয় করে বাড়তি আয় করে থাকেন। নওহাটা পৌর এলাকার মাসুদ রানা বলেন, তার ৫টি গাছ আছে, গাছে থোকায় থোকায় ডাঁটা ধরেছে ফলনও অনেক হয়েছে। বাড়ির চারদিকে গাছ লাগিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকার সজনে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেয়েছিলেন। সজনে চাষ করা খুব সহজ তেমন খরচা ও ঝামেলাও নাই। সজনের গাছের ডাল থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা জমিতে সজনে চাষ করে না। বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করলে কৃষিতে সাফল্য বয়ে আনবে একই সঙ্গে অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে এবং পাশাপাশি পুষ্টির অভাব দুর হবে। তাই কৃষকদের সজনে চাষসহ বাড়ির চারপাশে সজনে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কাঁচা বাজারের তরকারী বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ১৫০/২০০ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়েছে। এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজিতে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। আমদানী বাড়ায় এর দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে সজনে ডাঁটার বেশ চাহিদা রয়েছে। পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, এখন প্রতি কেজি ডাঁটার পাইকারী দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে সজনে ডাঁটা ক্রয় করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। সারাদেশে সজনে ডাঁটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে ডাঁটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সজনে ডাঁটা সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আয়রণ সহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। সজনে ডাঁটা দেহের কোলেষ্টোরল নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পেটের সমস্যা সমাধান ও হজমে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। সজনে ডাঁটার সবজি ও পাতার শাক রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য সজনে ডাঁটা ঔষধি সবজি হিসেবেও গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও সজনে গাছের ছাল এবং পাতা রক্তামাশয়, পেটের পিড়া ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পবা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম বলেন, সজনে ডাঁটা একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি। অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। শুধু ডাল লাগিয়ে সজনে ডাঁটা বসত বাড়ীর আশেপাশে, রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে এমনকি মাঠের ফসলের আইলে চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার কৃষাণীদের কর্মক্ষেত্র তৈরী হবে। কৃষকদের বিনা পুঁজিতে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সজনে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ, পরিচর্যার বিষয়ে প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris