হঠাৎ করেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ অনেকটা পরিষ্কারভাবে সামনে এসেছে। ট্রাম্পের এই শুল্ক খেলা এখন সারা বিশ্বের সঙ্গে নয় বরং ‘আমেরিকা বনাম চীন’ বলেই মনে হচ্ছে। চীনা পণ্য আমদানিতে আরো শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বেশিরভাগ চীনা পণ্যের ওপর তাদের শুল্ক হার বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরো গভীর হলো। যদিও অনেক দেশের ওপর আরোপিত উচ্চ ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন তবুও সার্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক এখনো বলবৎ রয়েছে। কিন্তু চীন থেকে যেখানে আইফোন থেকে শুরু করে শিশুদের খেলনাসহ সবকিছু আমদানি করা হয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির প্রায় ১৪ শতাংশ যোগান দেয়, তাদের ওপর শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমন ঘটনায় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ভিডিও এবং মিমগুলোতে কিছু আমেরিকানকে ট্রল করা হয়েছে। মূলত ট্রাম্প প্রসাশনকে উপহাস করতেই এমন ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। যেখানে রয়েছেন ইলন মাস্ক থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। এক চীনা টিকটকারের তৈরি করা একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্থূলকায় আমেরিকানরা বিষণ্ন মনে অদক্ষভাবে কাপড় সেলাই করছে এবং পেছনে বাজছে চীনা সঙ্গীত। অন্যান্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, জেডি ভ্যান্স, ইলন মাস্কসহ হোয়াইট হাউসের অন্যান্য কর্মকর্তারা আইফোন যন্ত্রাংশ একত্রিত করছেন এবং কিছু ভিডিওতে স্নিকার্স তৈরি করছেন। প্রত্যেক ভিডিওতেই সবাইকে বিষণ্ন লাগছে এবং সকলেই স্থূলকায় ব্যক্তি। শুল্ক যুদ্ধের ওপর জোর দিয়ে, চীনের কর্মীদের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে কর্মীরা লাল ক্যাপ পরে আছেন এবং টুপির গায়ে লেখা, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’, যা আগে ৫০ ডলারে বিক্রি হতো, এখন এক মিমে ৭৭ ডলারে বিক্রি হতে দেখা গেছে—যেটিও ‘মেইড ইন চায়না’। আরেকটি মিমে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প ফোন হাতে নিয়ে কারো অপেক্ষায় ঘাম ঝরাচ্ছেন এবং একটি বুদবুদ ক্যাপশনে লেখা উঠছে, ‘কেন সে ফোন করবে না?’ এখানে সম্ভবত বোঝানো হয়েছে, শি চিংপিং শুল্ক ইস্যুতে ট্রাম্পকে ফোন করছেন না, অন্যদিকে ট্রাম্প শি-এর ফোনের অপেক্ষা করছেন। এই ট্রোলিং এমন সময় আসছে, যখন মার্কিন রাজনীতিতে চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছে। ট্রাম্পের অনুসারীরা চীনকে দোষারোপ করছেন মার্কিন চাকরি ও প্রযুক্তি চুরি করার জন্য। মার্কিন নেতারাও চীন সম্পর্কে উপহাসমূলক কথা বলেছেন। এই সপ্তাহে ফক্স নিউজে এক বিতর্কে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ‘আমরা চীনা কৃষকদের কাছ থেকে টাকা ধার করি যাতে তারা চীনা কৃষকদের তৈরি জিনিসপত্র কিনতে পারে।’ উল্লেখ্য, চীনের হাতে এখনো প্রায় ৭৬০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেক আমেরিকান এই ট্রোলিংকে হালকাভাবে নিয়েছেন। একজন লিখেছেন, ‘চীন কবে থেকে হাস্যরসিক হয়ে উঠল?’ আরেকজন বলেছেন, ‘ওরা যেই কাজ করে, সেটা দিয়েই আমাদের ট্রোল করছে—চমৎকার!’ তবে সবার প্রতিক্রিয়া এমন ছিল না। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ‘এটা তো শ্রমজীবী মানুষদের অপমান।’ আরেকজন প্রশ্ন করেছেন, ‘কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে উপহাসের কী আছে?’ সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া/
এফএনএস