স্টাফ রিপোর্টার : গতকাল রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলার আলুচাষি ও ব্যবসায়িরা হিমাগার মালিকদের হটোকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর ভাড়া কেজি প্রতি চার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে আট টাকা করাতে এই বিক্ষোভ করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেয়া কৃষক ও আলু ব্যবসায়ী আলী মাসুম, আব্দূর রাজ্জাক, আল মামুন, হাবিবুর রহমান হাবিব, আনারুল হোসেন, আলম, জিন্দার আলী জিন্না, আহাদ আলী, এরাজ আলী, আক্তার হোসেন, আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান রনি সহ অন্যরা বলেন, ২০২৪ সালের শেষের দিকে হিমাগারে আলুর বস্তা রাখার জন্য যখন বুকিং দিয়েছিলাম তখন পূর্ববর্তী হারে (প্রতি কেজি চার টাকা) হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে ভাড়া গ্ৰহণ করেছে। কিন্তু নতুন বছর পড়তেই হিমাগার মালিকপক্ষ কোন প্রকার নোটিশ না দিয়েই সেই ভাড়া দ্বিগুণ করেছে। কর্তৃপক্ষের এইধরণের সিদ্ধান্ত আলু চাষী ও ব্যবসায়ীদের জন্য একধরণের মরণ কামড়। কৃষক ও আলু ব্যবসায়ী আব্দূর রাজ্জাক বলেন, এবার আলুর আবাদ বেশি হবার কারনে হিমাগার মালিক কর্তৃপক্ষ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। আবাদ যখন কম হলে হিমাগার মালিক তখন ভাড়া কমিয়ে দেয়। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের বিপদগামী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করার পরেও, আমাদের সেই অনুরোধ তারা কর্ণপাত করেনি। তাই, আজ এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি আদায়ের পথ বেছে নিয়েছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের সামনে কর্তৃপক্ষ একটি বিশাল ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেখানে বড় বড় অক্ষরে লিখা আছে “হিমাগারের চেম্বার থেকে আলুর বস্তা খালাসের পর বস্তা ওজন করে আট টাকা হারে মোট কেজির উপর ভাড়া গ্ৰহণ করা হবে। ” আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের আলু যেসকল হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করে থাকে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সরকার হিমাগার, উত্তরা, আসমা, তামান্না, রহমান, রাজ, যমুনা-১, নাবিল, বেঙ্গল, আল মদিনা, পটেটো, বিসমিল্লাহ, হিমালয়, পদ্মা, মিলন ও নিগার হিমাগার সহ আরো বেশকিছু কোল্ড স্টোর। ক্ষুব্ধ কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি আলু সংক্ষণের জন্য আগে হিমাগারগুলোকে ৪ টাকা হারে ভাড়া দিতে হতো। এবার তা বৃদ্ধি করে ৮ টাকা করা হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই তারা দ্রুত আগের ভাড়া নির্ধারণের দাবি জানান। তা না হলে আগামীতে তারা আরো কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি মহাসড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবেন বলে হুশিয়ারি দেন বিক্ষোভকারিরা। ৬০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গেলবছর খরচ হতো ২৪০ টাকা; ভাড়া বৃদ্ধির পর সেটি এখন ৪৮০ টাকা লাগবে। একদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে চাষাবাদ খরচ তো অন্যদিকে দ্বিগুণ হচ্ছে সংরক্ষণের খরচ। আলুর দাম নিম্নগামী হবার কারণে, চাষী ও ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত লোকসানের মুখে পড়বে বলে মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। বিক্ষোভকারী আলুচাষী ও ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবেদককে আরো বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময় লেবার চার্জটাও কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের উপর চাপিয়ে দেয় হিমাগার কর্তৃপক্ষ। বস্তা প্রতি ২৫ টাকা হারে লেবার চার্জ দেয়া লাগে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিবদমান বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে কৃষক-ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সমিতির সাথে আলোচনা হলেও, ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা।