মচমইল থেকে সংবাদদাতা : টিনের বেড়ার একটি খুপরি ঘর। সেখান থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন অসুস্থ স্বামী-স্ত্রী। এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায় রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কসবা গ্রামে। স্বামী শমসের আলী (৫৯) ও স্ত্রী পারভীন বিবি (৪৫) ওরফে ফুরে। টাকার অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কসবা গ্রামে গিয়ে বিছানায় অসুস্থ স্বামী ও স্ত্রীকে কাতরাতে দেখা যায়। একে অপরের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন। সেখানে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। শমসের আলী জানান, তিনি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। শ্রমের টাকায় সংসার চালাতেন এবং স্তনক্যান্সারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাতেন। তবে দেড় বছর আগে বাম পায়ে আঘাত পান কাজ করা অবস্থায়। সে থেকে পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে তা ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসা করেও তা ভালো করা যায়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। পায়ের ক্ষত থেকে পচনের সৃষ্টি হলে চিকিৎসক ওই পা কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনলে পায়ের ক্ষতের চিকিৎসা করলে সেরে তোলা সম্ভব বলে জানিয়ে দেন আরেকদল চিকিৎসক। সে পরামর্শে ও ওষুধ সেবন করে বাড়িতে থেকে নিয়মিত ড্রেসিং করছেন। এরপর থেকে আর কাজ করতে পারেননি। বাড়িতে বিছানায় সময় পার করছেন। অপরদিকে স্ত্রী পারভীন বিবি ফুরে জানান, গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ওই সময়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং কেমোথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। মাত্র দুইটি থেরাপি নেওয়ার পরেই জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। চিকিৎসাও বন্ধ হয়। এরপর থেকে আর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি পারভীন বিবি ফুরের। এসময় বিছানায় পাশ থেকে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়ে কাঁদতে থাকেন। তিনি জানান, তিন মাস থেকে স্তনের ঘা ছড়িয়ে পড়েছে। অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করেন। ব্যাথা জাগলে সহ্য করতে পারেন না। ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে বলে জানান। এই কথা বলার সময়ে ব্যাথা জাগলে কান্নাকাটি শুরু করেন। বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করেন তিনি। পাশে থাকা স্বামী শমসের আলী মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
তাঁরা জানান, এখন দুইজনেই এখন শয্যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। শমসের আলী জানান, প্রতিদিন ওষুধ কেনা, ড্রেসিংসহ ১৫০০ টাকা খরচ হয়। খেতেই পারেন না তিনবেলা। এরপর চিকিৎসা খরচ। ঘরে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে জানান তাঁরা। এরপরেও বাঁচার আকুতি জানান। চিকিৎসা পেলে সেরে উঠতে পারেন এমন আশাও দেখছেন। দেশের লোকজন এগিয়ে আসলে বাঁচতে পারবেন বলেও আশা করেন। শমসের আলী জানান, তিনি সুস্থ থাকলে কাজ করে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারতেন, তবে এখন নিজেই রোগী। পারভীন বিবি ফুরে জানান, তিনি কিছুদিন আগে চলাফেরা করতে পারলেও এখন বিছানায় থাকছেন। রোগ নিয়েও আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারলেও এখন আর পারছেন না। উপার্জনের কোন সদস্য নেই পরিবারে। প্রতিবেশী হাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের দুর্দশা দেখে চোখে জল আসে। তাঁদের কান্নাকাটিতে প্রতিবেশীরা ঘরে থাকতে পারেন না। তিনি বিছানাগত দম্পতির চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের কাছে গেছেন কয়েকবার। বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে চিকিৎসার জন্য সামান্য পরিমাণ টাকা দিয়েছেন। তিনি তাঁদের ক্ষতস্থানের বীভৎস ছবি দেখেছেন।