শুক্রবার

১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন খালেদা জিয়া, ফিরবেন ঈদ করেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে : প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয় : জাতিসংঘ কৃষকের গলার কাঁটা উৎপাদিত আলু! ‘নতুন বাংলাদেশের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হত্যা চেষ্টার মামলায় জামিন নামঞ্জুর জাবের আলীকে জেলে প্রেরণ বিএনপি’র উদারতায় জামায়াতে ইসলামী এদেশে রাজনীতির সুযোগ পায় : রিজভী যমুনা রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু বিক্ষোভকারীদের দমাতে প্রাণঘাতি বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেয় সরকার : জাতিসংঘের প্রতিবেদন পত্নীতলায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নায়নে গরু বিতরণ

ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলাকালে হঠাৎ উড়ন্ত ড্রোন পড়ে ৪০ জন আহত

Paris
Update : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। গতকাল রোববার সকাল ৯টা ১১ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ৯টা ৩৫ মিনিটে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের। ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মোনাজাত মঞ্চ থেকে মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। বিশেষ মোনাজাতে আনুমানিক ২০ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা। টঙ্গীর ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর মিলগেট থেকে আবদুল্লাহপুর, রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া-টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক এবং ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত পুরো এলাকায় অসংখ্য মানুষ মোনাজাতে অংশ নেন। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল রোববার ভোর থেকে মুসল্লিরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে ছুটে এসেছেন। প্রথম পর্বের শুরায়ে নিজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান হেদায়েতি বয়ান করছেন। এখান থেকে যারা তিন চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে গিয়ে কী আমল করবেন এবং এখান থেকে যারা মহল্লায় ফিরে যাচ্ছেন তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবেন তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়। তাৎক্ষণিক বাংলায় অনুবাদ করে মাওলানা আব্দুল মতিন বয়ান বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহতমূলক কথা বলেন। বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা জুবায়ের। তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লি ছাড়াও আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আসা মুসল্লিরা জানান, পরিবহন বন্ধ থাকায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে গত শনিবার । রাতেই ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা। রাতে কামারপাড়া সড়কের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানেই ফজরের নামাজ আদায় করে হেদায়াতি বয়ান শুনেছেন। ভোর থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ বাস ও পিকআপে করে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। ইজতেমা ময়দানে এসেছেন নারীরাও। উড়াল সেতুর নিচে মহাসড়কের পাশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। সেখান থেকেই আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন। এদিকে, বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গণপরিবহন সংকটে পড়তে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। বিশেষত টঙ্গী থেকে উত্তরামুখী সড়কে গণপরিবহনের জন্য ভোগান্তি বেশি দেখা গেছে। গাজীপুর বা টঙ্গী থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দু-একটি বাস এলেও ভিড়ের কারণে ওঠার উপায় ছিল না। তাবলিগের দুই পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা আলাদাভাবে দুই পর্বে ইজতেমা করছেন। এবার মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা প্রথম পর্বে তাদের ইজতেমা দুই ধাপে করবেন। গতকাল রোববার আখেরি মোনাজাতে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপ।
ড্রোন পড়ে আহত ৪০ : বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত চলাকালে উড়ন্ত একটি ড্রোন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হঠাৎ নিচে পড়ে গেলে আতঙ্কে মুসল্লিরা ছোটাছুটি শুরু করেন। সে সময় পড়ে গিয়ে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতরা হলেন- রাজধানীর দক্ষিণ খানের আবুল কালাম (৬০); রামপুরার আব্দুল করিম (২৮); বাড্ডার সাইদুল ইসলাম (৩৮); নারায়ণগঞ্জের আল-আমিন (৩২), আনোয়ার হোসেন (৪৩), আমজাদ (৩০); টঙ্গীর ওবায়দুল্লাহ (৫২), কবির হোসেন (৪৬), নাজিম উদ্দিন (৪০), বাসেত (১৩), খোকন (৪৩), মোবিন (১৮), আয়নাল হক (২২), জহুরুল (২৮); টঙ্গীর পাগাড় এলাকার জাফর উদ্দিন (৩১), আরিচপুরের কবির হোসেন (৩০), আউচপাড়ার মকবুল হোসেন (৩৬); আব্দুল্লাহপুরের রায়হান (২৭), সোহাগ বানু (৬০); গাজীপুরের জয়নাল (৫৪), কাওসারুল আলম (২৮), গাজীপুরের তারগাছ এলাকার রাতুল (১৮); জয়দবেপুরের জয়নাল আবদেীন (২৪), জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকার মোশারফ (৩০), মাছিমপুর এলাকার কোরবান আলী (২৫); হবিগঞ্জের সিজিল (৬০); টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সাইফুল ইসলাম (৩০), সালামত (১৮), মোস্তাকিম (১০); গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনার আমজাদ সরকারের ছেলে জুয়েল (২৫); সিলেটের গোলাপগঞ্জের জহুরুল ইসলাম (৩১); ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার আলী নেওয়াজ (৩৮); নাটোরের আফতাব উদ্দিন (৪৩), মামুন হোসেন (২৯); চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমান (২২)। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে টঙ্গীর পাগাড় এলাকার জাফর উদ্দিন বলেন, ‘আমি মোনাজাত করছিলাম। হঠাৎ সামনে হইচই শুরু হলে মুসল্লিরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে গিয়ে আমি আহত হই।’ নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন এলাকার আয়রন মার্কেটের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৫০) বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে আমিও সরে পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পাই।’ টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাকিল বিন সিরাজ জানান, এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ড্রোন আতঙ্কে ছোটাছুটি করে দৌড়াতে থাকলে পড়ে গিয়ে আহতের ঘটনা ঘটে।’
মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ : ইজতেমায় যোগ দিতে আসা আরও একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট পাঁচজন মারা গেলেন। মৃত ব্যক্তির নাম হাজী আব্দুল গফুর। তার বয়স ৭৫। তিনি ভোলার চরফ্যাশন এলাকার বাসিন্দা। বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, “গত শনিবার মাগরিবের নামাজের আগে গফুর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।” একই দিন বেলা পৌনে ৩টার দিকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রামনগর ৩ নম্বর তেগরিয়া এলাকার দোস্ত মোহাম্মদেরও ছেলে মিজ আলী (৬০) হঠাৎ অসুস্থ্ হয়ে পড়েন। তাকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে হবিগঞ্জের বাহুবল থানার রাগবপুর এলাকার নওয়াব উল্লার ছেলে মো. ইয়াকুব আলী (৬০), সকালে খুলনার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) এবং দুপুরে শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার রাণী শিমুল এলাকার মো. আব্দুল্লাহর ছেলে ছাবেদ আলী (৭০) মারা গেছেন। ইজতেমা ময়দানেই তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হলো। ঢাকার একাংশ এবং ৪১ জেলার মুসল্লিরা প্রথম ধাপে অংশ নিয়েছেন। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপে ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিসহ ২২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। আট দিন বিরতি দিয়ে ভারতের মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, আখেরি মোনাজাতের শেষে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় সাত হাজার পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। খিত্তায় খিত্তায় মুসল্লিদের বেশে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মুসল্লিরা যাতে দ্রুত এবং নিরাপদে ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করতে পারে সেজন্য বাস, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবাহনের ব্যবস্থা রয়েছে।-এফএনএস

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris