যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে তাঁদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্পের এই আমন্ত্রণ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আইসিসি গত বছরের ২১ নভেম্বর এক ঘোষণায় জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের গাজায় পরিচালিত সামরিক অভিযানের জন্য নেতানিয়াহু, তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট এবং হামাসের নেতা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশেষত, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার নাগরিকদের ক্ষুধার মুখে ঠেলে দেওয়া এবং সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, এই পরোয়ানা কার্যকর করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সরকার এ অভিযোগকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যেই ট্রাম্পের এই আমন্ত্রণ ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অটল সমর্থনের প্রকাশ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল ইসরায়েলকে কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ারই ইঙ্গিত বহন করে না, বরং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। এদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির মধ্যেই নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা সংঘর্ষ কিছুটা হলেও থেমেছে। তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যে এই সফর ও আলোচনার বিষয়বস্তু কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, মিসরকে উচিত গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া। তাঁর মতে, ফিলিস্তিনিদের এমন স্থানে বসবাস করা উচিত, যেখানে তারা সংঘর্ষ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে মিসর, জর্ডান ও অন্যান্য আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, কারণ তারা গাজাকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল নজিরবিহীন সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার ফলে গাজায় ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি। অন্যদিকে, ইসরায়েলের মতে, হামাসের হামলায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জন জিম্মি হয়। বর্তমানে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ছয় সপ্তাহের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুসারে, প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। এই যুদ্ধবিরতির ফলে কিছু বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে ফিরে আসতে শুরু করেছেন, যদিও শহরটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরও ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস আমন্ত্রণ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি একদিকে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের প্রতিফলন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। গাজায় চলমান মানবিক সংকট, যুদ্ধবিরতি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণ কীভাবে গড়ে উঠবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।-এফএনএস