শুক্রবার

১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন খালেদা জিয়া, ফিরবেন ঈদ করেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে : প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয় : জাতিসংঘ কৃষকের গলার কাঁটা উৎপাদিত আলু! ‘নতুন বাংলাদেশের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হত্যা চেষ্টার মামলায় জামিন নামঞ্জুর জাবের আলীকে জেলে প্রেরণ বিএনপি’র উদারতায় জামায়াতে ইসলামী এদেশে রাজনীতির সুযোগ পায় : রিজভী যমুনা রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু বিক্ষোভকারীদের দমাতে প্রাণঘাতি বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেয় সরকার : জাতিসংঘের প্রতিবেদন পত্নীতলায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নায়নে গরু বিতরণ

দেশে ইনসাফ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলবে : ডা. শফিকুর

Paris
Update : শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ১৫ বছর পর শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে মাদ্রাসা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ ছিল।
প্রধান আতিথি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একমাত্র কোরআনের শাসন বাংলাদেশে ইনসাফ কায়েম করতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলবে। যুদ্ধ কতক্ষণ? যতক্ষণ না ইনসাফ কায়েম হয়। এই ইনসাফ দিতে পারে একমাত্র আল কোরআন। এই কোরআনের শাসন দিয়ে আমরা বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ন্যায়-ইনসাফের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য আমাদের লড়াই এখনও চালিয়ে যেতে হবে। আমরা ত্যাগ অনেক করেছি। আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবন খুব ছোট, কাজ অনেক বড়। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।’
শনিবার দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, ‘এই দেশে অনেকে শাসন করেছেন। আমাদের সন্তানেরা এত এত রক্ত কেন দিল? কারণ, তারা চেয়েছে এই সমাজ থেকে সব ধরনের দুঃশাসন এবং দুর্নীতির কবর রচিত হোক।’
সারাদেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘যারা এসব করছেন, বিনয়ের সাথে বলি এগুলো বন্ধ করেন। তবে যদি আমাদের এই বিনয়ী অনুরোধ কেউ না মানে, তাহলে আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সন্তানেরা শ্লোগান দিচ্ছে- আবু সাঈদ-মুদ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজশাহী, যেটাকে শিক্ষার ভিলেজ বলা হয়, শিক্ষার গ্রাম। আমি আশা করি, ৫ তারিখের (৫ আগস্ট) পর রাজশাহীতে কোনো চাঁদাবাজি হয় না। এখানকার মানুষ ভদ্র, বিনয়ী এবং সৎ। কেউ চাঁদাবাজি এখানে করে না, ঠিক না?’ এ সময় নেতাকর্মীরা ‘চাঁদাবাজি হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন। আমির প্রশ্ন করেন, ‘এখানেও চাঁদাবাজি হয়? এখানেও ফুটপাত দখল হয়? হাটবাজার, বালুমহাল, জলমহাল, যানবাহন স্ট্যান্ড, সবগুলোতে দখলদারি হয়?’ তখনও মাঠভরা নেতাকর্মীরা ‘হয়’ বলে আওয়াজ তোলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাহলে আমাদের শহিদদের রক্তের প্রতি এটা কি ভালোবাসা? এই কাজ যারা করেন, বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি এই কাজটা ছেড়ে দেন। আমাদের শহিদেরা কষ্ট পাবেন। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্য আছে, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ- ভাই, এই কাজগুলো করিয়েন না। আমাদের শহিদেরা আত্মা বড় কষ্ট পাবে। আমাদের জীবন্ত সন্তানেরা যারা শহিদ হওয়ার নিয়্যত করে রাস্তায় নেমেছিল, তারা কষ্ট পাবে। তাদেরকে কষ্ট দিবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আল্লাহর শক্তিতে বলিয়ান একটি জাতি গঠন করতে চাই। সে জাতি হবে সাহসী জাতি, বীরের জাতি। সে জাতি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করবে না। এটা করেনি বলেই বিগত ১৫টি বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের দুজন আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করেছে তাদের গুম করেছে। অসংখ্য ভাইকে খুন করেছে। চাকরি কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে দেশেও থাকতে দেয়নি। মানুষের কল্যাণে কাজ করার কারণে অনেকে জিন্দা শহিদ হয়ে আছে। হাত পা টুকরা-টুকরা। এই কষ্টের জীবন নিয়ে তারা বেঁচে আছেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়ে আজকের এই পরিবেশ দিয়ে গিয়েছে, আমরা তাদের প্রতি ঋণি এবং কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শোধ করতে হবে। কতজন আদম সন্তানকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে, সবকিছু অন্ধকারে রেখে অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। স্তুপে স্তুপে লাশ। ট্রাকের ওপর ছুড়ে মারা হয়েছে। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে লাশগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারব না।’
এমন সাহসী সন্তান থাকলে বাংলাদেশকে নিয়ে আর ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই মন্তব্য করে জামায়াত আমির বলেন, ‘সাংবাদিক বন্ধুরা প্রশ্ন করেছে- আপনাদের দলের কতজন শহিদ হয়েছে। আমরা বলেছি, যারা শহিজদ হয়েছে আমরা তাদের দলের মানুষ। তাদেরকে কোনো দলীয় পরিচয়ে আমরা তাদের সংকীর্ণ স্থানে নামাতে চায় না। তারা জাতীয় সম্পদ। তাদের আমরা মাথার ওপরে তুলে রাখতে চাই। এক হাত চলে গেছে, আরেক হাত নিয়ে যুদ্ধ করতে চায়। এমন সাহসী মানুষ থাকলে এই জাতির ওপর কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হবে না।’
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. মো. কেরামত আলী। আর সমাবেশ পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারী ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মো. সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris