তানোর থেকে প্রতিনিধি : রাজশাহীর বিএমডিএর রিজওয়ন অফিসের স্টোর কিপার রেজাউল করিম পরিকল্পিতভাবে মাস্টার রোল কর্মচারী ইলেক্ট্রিশিয়ান এরশাদকে তামার তার সরানোর কথা বলে চোর সাজিয়া মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে এরশাদ স্টোর কিপারের পরিকল্পনা মোতাবেক কারাগারে আছেন। গত ২২ ডিসেম্বর ঘটে তার চুরির নাটকের ঘটনা। এঘটনায় রাজপাড়া থানায় এরশাদকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর এরশাদ বিজ্ঞ আদালতে জামিনের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে জামিন নামুঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। আবার স্টোর কিপার স্বৈরাচারের দোসরকে খুশি করতে গত রবিবার রিমান্ডের আবেদন করেন। কিন্তু আদালত আসামীর জবানবন্দি শোনার পর রিমান্ড দেন নি। এদিকে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে স্টোর কিপার বদলি হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সফল হননি। এছাড়াও বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় বিএমডিএ রাজ ১৫০০ ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। সেই দাপটে কর্মচারী থেকে শুরু করে অফিসকে তটস্থ করে রাখতেন। কামিয়েছেন কাড়িকাড়ি টাকা। ফলে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তির দাবি তুলেছেন বিএমডিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
জানা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে এরশাদ অফিসের কাজ শেষ করে বিএমডিএর কোয়াটারে খাওয়া দাওয়া করছিল। এমন সময় স্টোর কিপার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ কয়েল তার সরিয়ে রাখতে বলে তার সরিয়ে দেয় স্টোর কিপার রেজাউল। নিজেই দারোয়ানের মাধ্যমে তার সরিয়ে রেখে এরশাদকে চোর সাজানো হয়। অফিসের সিসি ক্যামেরার ভিডিও চেক করলেই ধরা পড়বে । কিন্তু রেজাউল তার চুরির অপবাদ দিয়ে আনসার সদস্যদের দিয়ে ধরিয়ে দেয় এরশাদকে। আখ্যা দেয়া হয় চোর হিসেবে।
বেশকিছু কর্মচারীরা জানান, স্টোর কিপারের ঘরে থাকে তারসহ যাবতীয় মালামাল। এক টুকরো তার নিতে হলে স্টোর কিপার ছাড়া উপায় নাই। তাহলে এরশাদ কিভাবে চুরি করে। আসলে রেজাউল নিজেই চুরি করতেন। কিন্তু পরিকল্পনা করে এরশাদকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। কারন এর আগে বিগত ২০১৮ সালের দিকে রেজাউল গোদাগাড়ী ও গোমস্তাপুরে স্টোর কিপার হিসেবে চাকুরী করা অবস্থায় পাইপ চুরি করেন। মামলা হলেও ক্ষমতার দাপটে সবকিছু ধামাচাপা দেন। তিনি স্বৈরাচার সরকারের সময় ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। তার বিরুদ্ধে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী অবস্থান নিলে সে ওই অফিসে থাকতে পারত না বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন ।
সুত্র জানায়, এরশাদ দীর্ঘ প্রায় ১৪/১৫ বছর ধরে মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছে। সে বিএমডিএর কোয়াটারে থাকে। আর স্টোর কিপার রেজাউল ১৫০০ বিএমডিএর রাজ নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ইচ্ছে মত সবকিছু করেছেন। আবার মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা কে দিয়ে গত রবিবার রিমান্ডের আবেদন করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞ আদালতে এরশাদের বিরুদ্ধে চুরির সঠিক প্রমান না পাওয়া এবং তার জবানবন্দি শোনার পর না মুঞ্জুর করেন। এখান থেকেই বোঝা যায় এরশাদকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসিয়েছেন স্টোর কিপার।
এরশাদের স্ত্রী মুনজিলা বেগম জানান, ওই দিন বিকেলের দিকে ভাত খেতে বাড়িতে আসেন। এসময় স্টোর কিপার মোবাইল করে কর্মস্থলে আসতে বলেন। তার কথা মত অফিসে যায়। যাওয়ার পর তার চুরির সাজানো নাটকে আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার স্বামী নির্দোষ। সটিক তদন্ত করলেই চুরির আসল রহস্য বের হয়ে আসবে। আমি এর ন্যায্য বিচার চায়। স্টোর কিপার রেজাউলের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনার রুম থেকে কিভাবে তার চুরি হয়, তিনি জানান চুরি করেছে বলেইতো কর্মকর্তা মামলা করেছে। আপনি তখন কোথায় ছিলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, শহরে আসেন চা খাওয়াও হবে কথা বলাও হবে। পুনরায় মোবাইল করে জানতে চাওয়া হয় আপনি নাকি ১৫০০ রাজ বিএমডিএর নির্বাহী সদস্য পদে থেকে অনেকের উপর অবিচার এবং গোদাগাড়ী, গোমস্তাপুরে থাকা কালীন তার চুরি করেছিলেন, তিনি জানান, আমি স্যারে রুমে আছি পরে কথা বলছি।
মামলার বাদি রিজওয়ান অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে ফোন দিয়ে জানতে চাওয়া হয় স্টোর কিপারের রুম থেকে তার চুরি হল, আর মামলার আসামী হলেন মাস্টার রোল কর্মচারী এরশাদ এটা কিভাবে হয় তিনি জানান, এঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দু এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তারপর আসল অপরাধী বের হবে। তদন্তের আগে কিভাবে মামলা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে কোন সদ উত্তর দিতে পারেন নি। বিএমডিএর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও তার চুরির ঘটনার প্রধান তদন্ত কারী জিন্নুরাইনের মোবাইলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি জরুরি মিটিয়ে আছি।