শুক্রবার

১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন খালেদা জিয়া, ফিরবেন ঈদ করেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে : প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা উচিত নয় : জাতিসংঘ কৃষকের গলার কাঁটা উৎপাদিত আলু! ‘নতুন বাংলাদেশের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা হত্যা চেষ্টার মামলায় জামিন নামঞ্জুর জাবের আলীকে জেলে প্রেরণ বিএনপি’র উদারতায় জামায়াতে ইসলামী এদেশে রাজনীতির সুযোগ পায় : রিজভী যমুনা রেলসেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু বিক্ষোভকারীদের দমাতে প্রাণঘাতি বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেয় সরকার : জাতিসংঘের প্রতিবেদন পত্নীতলায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নায়নে গরু বিতরণ

সিরাজগঞ্জের হেনরীর সম্পদ জব্দের আদেশ

Paris
Update : রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর জমি, ফ্ল্যাটসহ ৪৫টি স্থাবর সম্পদ ও ১৬টি গাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও তার ১৯ ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ও যৌথ মালিকানাধীন চারটি কোম্পানির ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ শেয়ার অবরুদ্ধেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার (১২ জানুয়ারি) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের আদালত পরিদর্শক আমির হোসেন বলেন, “তার (হেনরী) বিরুদ্ধে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ এসব সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য আবেদন করেন।” দুদকের পক্ষে শুনানি করেন কৌঁসুলি রেজাউল করিম রেজা।
যেসব সম্পদ জব্দ : সাবেক এমপি হেনরীর জব্দ করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের মুজিব সড়কের ৭ তলা বাড়িসহ জমি, একই জেলার ভূতেরদিয়ারে জমিসহ বাড়ি, সদানন্দপুরে জমিসহ ফ্ল্যাট, রাজধানীর মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট ও সিরাজগঞ্জের রতনকান্দির বাহুবায় দুইতলা ভবন। এ সম্পত্তিগুলোর দলিলমূল্য ৫ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এছাড়াও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্নাত আরা হেনরীর নামে থাকা ১৯.৮২ একর জমি জব্দের তালিকায় রয়েছে। ৪০টি দলিলে কেনা এসব জমির দলিলমূল্য ১১ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। দুদকের আবেদনে জান্নাত আরা হেনরীর ৪ কোটি ২০ লাখ মূল্যের ১৬টি গাড়ির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অবরুদ্ধ ১৯ ব্যাংক হিসাব : দুদক বলছে, জান্নাত আরা হেনরীর নিজের ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে সঞ্চয়ী, চলতি, ডিবিএস, এসএনডি ও এফডিআরসহ বিভিন্ন হিসাবে ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৯২ টাকা রয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪-২২ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ১৮ বিধিমতে এসব হিসাব অবরুদ্ধ করা আবেদনে করেছে দুদক।
৪ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ : দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তে জান্নাত আরা হেনরীর নামে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত ৪টি লিমিটেড কোম্পানিতে মালিকানা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে, যার মালিকানা হস্তান্তর রোধ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে হেনরী অপটিক্যাল ফাইবার লিমিটেডে ৩৫ হাজার, এরআরএল ইকু ব্রিকস লিমিটেডে ৫০ হাজার, জেসমিন কনস-টেক লিমিটেডে ৩৪ হাজার, ইআরএলএ লিমিটেডে ১ জাহার ৫০০ শেয়ার রয়েছে। এসব বিনিয়োগের মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। দুদকের আবেদনে বলা হয়, জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ২২৩ টাকা আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩৫টি ব্যাংক হিসাবে দুই হাজার দুই কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৭ টাকা এবং ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনেরও প্রমাণ মিলেছে।
স্বামীসহ হেনরীর বিরুদ্ধে দুই মামলা : জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুর বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে’ ৭৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। দুদকের ঢাকা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ একটি এবং আরেকটি সহকারী পরিচালক শাহ আলম শেখ দুদকের পাবনা কার্যালয়ে হেনরীর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ দম্পতির ব্যাংক হিসাবে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও পেয়েছে দুদক। সেইসঙ্গে হেনরীর ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ মার্কিন ডলার লেনদেনের তথ্যও রয়েছে এজাহারে। দুদক বলছে, ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ ৫৭ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ২২৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন হেনরী। তার স্বামীর অবৈধ সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ২১৫ টাকা। এজাহারে বলা হয়েছে, হেনরী ‘অবৈধভাবে’ অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তির উৎস গোপন করতে ৩৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২ হাজার ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫৭৭ টাকা ও ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ মার্কিন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। আর হেনরীর ‘অপরাধলব্ধ অর্থ’ থেকে ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত’ সম্পদের মালিক হয়েছেন শামীম। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে ৩০৬ কোটি ৬৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬০ টাকার টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন হয়েছে। এরপর দুদকের আবেদনে গত ২৫ নভেম্বর হেনরী, তার স্বামী ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে হেনরীর বিরুদ্ধে গত ২০ অগাস্ট দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার থেকে স্বামীসহ তিনি গ্রেপ্তার হন। শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে আসা হেনরী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে সরাসরি সংসদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেন। যদিও সেই নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হেনরী সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। সেসময় ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য ঘটনায় তার নাম আলোচনায় আসে। হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক।-এফএনএস

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris