সোমবার

২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ

রাজশাহীর আবহাওয়া এগুচ্ছে আসহনীয় পর্যায়ে

Paris
Update : সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে পদ্মা পাড়ের রাজশাহী। রাতের আড়মোড়া ভেঙে সবাই যখন চোখ মেলেছে ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬ টার পর রাজশাহীতে সূর্যোদয় হয়েছে। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল পুরো রাজশাহী। দুপুরের পর আসে টিপটিপ বৃষ্টি। ঘন কুয়াশা আর টিপটিপ বৃষ্টি, দুইয়ে মিলে রাজশাহীর আবহাওয়াকে করে তুলে আসহনীয়। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমিয়ে দেয়। বেড়ে যায় শীতের দাপট। এতে নিম্নআয়ের মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাসে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়ছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের লোকজন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ১০ টায় ১৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেলা ১১ টায় ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এদিকে সূর্যের দেখা না মেলায়, রাস্তাঘাটে লোকজনের সমাগম দেখা গেছে। কুয়াশা ও সূর্যের লুকোচুরির সাথে সাথে মৃদু বাতাস বইতে থাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের বাইরে তেমন দেখা যায়নি। অপর দিকে কর্মজীবি ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চাদর , শুয়েটার, মাফলারসহ মোটা কাপড় পরিধান করে বের হতে দেখা গেছে। শহর ও হাট-বাজারে লোকজনের উপস্থিতি কমে আসায় প্রয়োজনীয় যাত্রী না পেয়ে অর্থ কষ্টে পড়েছে রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটোচালকেরা। শীতে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা ভাইরাস জ্বর আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ফলে শীতের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে শীত জেঁকে বসায় উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে ও হাট বাজারে শীতের কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। সাধারণত দুপুরের পর থেকে এসব জায়গায় বেচাকেনা শুরু হয়। তবে সকাল থেকেই কাজে নেমে পড়েছেন বিক্রেতারা। নগরের রানীনগর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কম্বল নিয়ে বসেছেন সাজু আহমেদ। তাঁর মতো সেখানে আরও কয়েকজন বিক্রেতা রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে বেচাবিক্রি হচ্ছিল। কৃষি শ্রমিক মোস্তফা জানান, সকালে উঠে জমিতে যাওয়ায় কষ্টকর। কিন্তু কাজ শুরু করলে তেমন শীত লাগেনা। শীত শুরুর পর থেকে এই প্রথম দিনভর কুয়াসা। সকালে ও বিকেল থেকে গাড়ীর লাইট জালিয়ে চলাফেরা করতে দেখা যায়।
তানোর থেকে প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর তানোরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও কুয়াশায় শীত জেঁকে বসেছে। সোমবার সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা দেখা দেয়। বৃষ্টির মতো কুয়াশাও ঝরেছে। দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে এসে এমন কুয়াশার দেখা মিলল। তবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই সকাল–বিকেলসহ রাতের তাপমাত্রা কম ছিল। তবে ঝলমলে রোদ ছিল। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রহিদুল ইসলাম বলেন, আজ সারা দিন আবহাওয়ার পরিস্থিতি এমনই থাকবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ও বিকেলেও তাপমাত্রা কম থাকবে। হঠাৎ তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। রোদ না ওঠায় মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যাঁরা বের হয়েছেন, মোটা ও গরম কাপড় পরে এসেছেন।
এলাকায় চায়ের দোকানে জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন চা খাচ্ছেন আর গল্প করেই দিনটি পার করছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। থানা মোড়ে কয়েকজন ডাব নিয়ে বসে আছেন। কোন ক্রেতার দেখা মিলছেনা। আমজাদ হোসেন নামের একজন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, আজ রোদ উঠবে না। চার্জার ভ্যান চালক মামুন সাধ্যমত গরম কাপড় পরে জীবিকার জন্য বের হয়েছেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন ভাড়া পাননি। মানুষ কম। শীতে একটু কমই মানুষ বের হয়। কয়েক দিন পর অভ্যস্ত হয়ে পড়লে হয়তো বের হবে মানুষ। আবার আলু রোপনের কাজ চলছে জোরালো ভাবে। যা দু চারজন বের হয় শীতের কারনে বের হননি। দুপুরের পর থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তবে থেমে থেমে।
নওগাঁ : নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে নওগাঁর পথঘাট। কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে যানবাহনগুলো। সোমবার সারাদিন দেখা মিলেনি সূর্যের। সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে গত দুই ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। গত দুই দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার পর শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই কুয়াশা ভেদ করে দেখা মিলেছে সূর্যের। তবে আজ বেলা গড়ানোর পরও কুয়াশায় কাটছে না। বৃষ্টির মতো ঝির ঝির করে ঝড়ছে কুয়াশা। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস যোগ হওযায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ঠাংভাঙ্গা মোড়ে এলাকার আফছার আলী বলেন, গত দুই থেকে খুব ঠান্ডা পড়েছে। তবে সকাল ৮টা ৯টা দিকে সূর্য উঠলেও আজকে সূর্যের দেখা নাই। বৃষ্টির মতো ঝির ঝির করে কুয়াশা পড়ছে। শুরুতেই যদি এত ঠান্ডা পড়ে তাহলে সামনের দিনে তো আরও বেশি ঠান্ডা হবে। এমনিতেই ঠান্ডায় কোন কিছু করা যাচ্ছে না। হাত-পা নিঃস্তেজ হয়ে যায়। নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আজ সকাল ৯টায় জেলায় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গেলো ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এ জেলার তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া শীতের তাপমাত্রা আগামীতে বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানান তিনি।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris