কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা খাইবার পাখতুনখোয়া, পাঞ্জাব ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে দলে দলে যাত্রা শুরুর পর দেশটির সরকার তাদের রুখতে বেশ আক্রমণাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলোতে। সরকার বলছে, যে কেউ ইসলামাবাদে প্রবেশের চেষ্টা করলে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। বিদেশি অতিথিদের সফরের সময় পিটিআইয়ের এই শক্তি প্রদর্শনকে সরকার ‘সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। গতকাল সোমবার দেশটিতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর রাষ্ট্রীয় সফরে আসার কথা রয়েছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি গত রোববার বেলারুশ থেকে আসা অগ্রগামী প্রতিনিধি দলকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এ সময় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রতিবাদকারীরা প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে, রাজধানী ইসলামাবাদের রেড জোনকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এই শহরটিতেই দেশের প্রধান সরকারি দপ্তর ও কূটনৈতিক আবাসনগুলো অবস্থিত। পিটিআইয়ের হাজার হাজার লোককে ভুল বোঝানো হচ্ছে দাবি করে মোহসিন নাকভি গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীর অধিবাসী ও তাদের সম্পদ রক্ষায় যথাযথ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী ইসাক দার পিটিআইয়ের ধর্মঘটের ডাক নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এটি দেশের বিরুদ্ধে একটি সুচিন্তিত ষড়যন্ত্র। এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী আয়াতুল্লাহ তারার বলেছেন, একটি বিষয় পরিষ্কার যে পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা তাদের নেতা ইমরান খানকে জেল থেকে মুক্ত করতে চান না। তিনি বলেন তার কাছে তথ্য আছে যে পিটিআইয়ের শীর্ষ থেকে নিম্ন সারির নেতৃবৃন্দরা ইচ্ছে করেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। পিটিআইয়ের নেতাদের ইমরান খানকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া তিনি রাস্তাঘাট আটকে দেওয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির জন্য পিটিআইকেই দায়ী করেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল পিটিআইকে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিয়ে নাশকতা সৃষ্টির জন্য জন্য দায়ী করেছেন। গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইমরান খানকে আলাদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইমরান তা না করে তার দলকে ব্যবহার করে সরকারের ওপর তার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। আহসান ইকবাল বলেন, ইমরান খানের মুক্তির বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। তাকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তার আগে সরকার তাকে মুক্ত করতে পারবে না।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিক্ষোভকারীরা গতকাল সোমবার রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত রোববার পুলিশি বাধায় ইসলামাবাদে ঢুকতে ব্যর্থ হয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত ডাক’ এর আহ্বানে গত রোববার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশে যোগ দিতে গাড়িবহর নিয়ে ছুটে আসে সমর্থকরা। খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে যুক্ত হন ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও। পিটিআইয়ের এ বিক্ষোভকে বেআইনি ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। এর আগে ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা। বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত রোববার শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। এসময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। এ সময় শত শত সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছে।যেহেতু চূড়ান্ত বিক্ষোভে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে রাজধানীতে থাকার এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান। গতকাল সোমবার ইসলামাবাদের ডি চক এলাকায় সমবেত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা। তবে আজও শক্ত প্রতিরোধের মুখোমুখি হচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। বিশেষ করে আজ তিন দিনের সরকারি সফরে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের ইসলামাবাদে পৌঁছার কথা রয়েছে। সে উপলক্ষে রাজধানীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়্ াহয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইসলামাবাদে ঢুকার সবগুলো রাস্তা। ৭২ বছর বয়সী ইমরান খান দুর্নীতির অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অবশ্য আইনি সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনও পাকিস্তানে জনপ্রিয়।-
এফএনএস