বুধবার

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শস্যবীজের ঊর্ধ্বমুখী দামে বিপাকে কৃষক

Paris
Update : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪

বাজারে শীতকালীন শস্যবীজের চাহিদা বাড়লেও সাম্প্রতিক বন্যা ও নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতায় ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব ধরনের শস্যজাতীয় বীজপণ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আসন্ন শীতকালীন মৌসুমে শাক-সবজির আবাদ কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের শেষে এখন শীতকালীন মৌসুমের মসলাসহ বিভিন্ন শস্যের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিগত সময়ের দেশের বাজারে আমদানি সংকটে শস্যবীজের সরবরাহ কম। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের বন্যায় কৃষকের নিজস্ব বীজভাণ্ডার নষ্ট হয়েছে। ফলে রবি মৌসুমের শুরুর প্রথম থেকেই প্রায় সব ধরনের শস্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে ধান, সরিষা, ধনিয়া, কালিজিরা, মরিচ, বাদামসহ ডালজাতীয় শস্যবীজের দাম সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে। কৃষি বিভাগ এবং বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে শস্যবীজের দাম। পাইকারি পর্যায়ে ১০ দিন আগেও প্রতি কেজি সরিষাবীজ ৮০-৮২ টাকা বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি সরিষাবীজ বিক্রি হচ্ছে ৯৬-৯৭ টাকা কেজি দরে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে বাদামের দাম কেজিপ্রতি ৩-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৮-১৪০ টাকায়, মরিচ ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ১৮০-১৮৫ টাকায়, ধনিয়া প্রায় ৩৫ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায়, কালিজিরা ১৫-২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৬৫ টাকায়। আগাম শস্য রোপণের জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি বাজারে বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় বাজারে ওসব শস্যের দাম বেড়ে গেছে। সূত্র জানায়, কৃষকরা রবি মৌসুমে সরিষা, মরিচ, বাদাম, ধনিয়া, হলুদ, ভুট্টা, গম, সয়াবিন, তিল, তিসি, সূর্যমুখী, মসুর, ছোলা, বার্লি, মাষকলাই, মুগ, খেসারি, ফেলন, মটর, অড়হরসহ বিভিন্ন শস্য রোপণ করেন। ওসব শস্যের বীজের অধিকাংশই কৃষক পর্যায়ে মজুদ থাকে। তবে পাইকারি বাজারে বেশি চাষ হওয়া শস্যগুলো বীজের লেনদেন হয়। রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সরিষা, ধনিয়া, মরিচজাতীয় শস্য চাষাবাদ হওয়ায় ওসব পণ্যের দাম বাড়ছে। উৎপাদন মৌসুমে বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি চাষের পরিমাণ কমার শঙ্কা রয়েছে। তবে রবি মৌসুমে দেশে বিভিন্ন শস্য আবাদ হলেও দেশীয় চাহিদার কারণে বিশ্ববাজার থেকে প্রায় শতভাগ শস্যই আমদানি করতে হয়। তার মধ্যে ভারত থেকেই দেশে সবচেয়ে বেশি শস্য আমদানি করা হয়। এবার বন্যা, দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ পূজার বন্ধের কারণে আমদানি প্রক্রিয়ায় ধীরগতি থাকায় দেশে সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে মসলাপণ্যের দাম বাড়ছে। তবে বর্তমানে আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সরবরাহ বাড়ছে। সূত্র আরো জানায়, দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার অতিবৃষ্টি, বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও উপকূলীয় এলাকার ৪৬টি উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে বসতবাড়িতে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে দুই পর্বে প্রণোদনা ও বীজ সরবরাহ করছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে বোরো উফশী জাতের সমলয়ে চাষাবাদ ব্লক প্রদর্শনী স্থাপনে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বোরো বীজের জন্য (উফশী জাতের) ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, বোরো বীজ ও সারের জন্য ১৫ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার এবং বসতবাড়িতে শীতকালীন সবজিবীজ ও নগদ সহায়তায় ১৪ কোটি ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে অধিদপ্তরের অনুমোদন পেলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছাড়াও দেশব্যাপী রবি মৌসুম সামনে রেখে বোরো ধানসহ শীতকালীন ফসলের বীজ, সার ও কৃষি প্রণোদনা বাড়ানো উচিত বলে কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন। কারণ বিভিন্ন ফসলের বাজারদর বেশি থাকলে স্বাভাবিকভাবে দেশীয় উৎপাদন বাড়ে। অর্থাৎ কৃষক নিজ উদ্যোগে বাড়তি চাষ ও চাষাধীন জমি পরিচর্যার মাধ্যমে বাড়তি ফসল উত্তোলনের চেষ্টা করে। কিন্তু শস্যবীজের দাম বেশি হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় থাকে। ফলে বীজের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে দাম বেশি থাকলেও সরবরাহ সংকট ফসল উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। কারণ বাড়তি দাম সত্ত্বেও কৃষক সময়মতো বীজ না পেলে চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সর্বশেষ দেশীয় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমদানি কম হওয়া, সরবরাহ সংকটে দাম বেড়ে যাওয়ার পর সর্বশেষ বন্যার কারণে কৃষকের নিজস্ব বীজভাণ্ডার বিনষ্ট হওয়ায় চলতি রবি মৌসুমে শীতকালীন ফসল উৎপাদন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরে বেশকিছু মসলা, ডাল ও বাদামজাতীয় শস্য সরবরাহ কম হয়েছে। তাছাড়া আমদানির পরিমাণও ছিল কম। যে কারণে শীত মৌসুম চলে আসায় শস্যবীজের চাহিদা ও দাম দুটোই বেড়েছে। বীজের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগ্যশস্যের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। তবে রোপণ মৌসুমের শুরুতে দাম বাড়লেও পুরোদমে শীত শুরু হলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে। অন্যদিকে কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারি প্রণোদনার ওপর দেশের কৃষক শতভাগ নির্ভর করে না। কৃষক নিজ উদ্যোগে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষক নিজে বীজ সংগ্রহ করে। দেশের দুটি কৃষি অঞ্চলে বন্যার কারণে এ বছর কৃষকের নিজস্ব বীজ সরবরাহ তুলনামূলক কম। তাছাড়া শস্যবীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে কম দামে ভোগ্যশস্যের মাধ্যমে চাষাবাদের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ কারণে আগামী মৌসুমে রবিশস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে বীজ সরবরাহ ও কৃষকদের আগের তুলনায় বাড়তি প্রণোদনা জরুরি। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় এ বছর ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যায় অনেক জেলা-উপজেলায় পানি ঘরের ছাদ পর্যন্ত স্পর্শ করেছে। ফেনীতে বন্যার পানি কয়েক দিন পর্যন্ত ছিল। তাতে কৃষকের বীজের মজুদ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। প্রতি বছর রবি মৌসুমে ১২টি ফসলের প্রণোদনা ও বীজসহায়তা দেয়া হয়। এ বছর প্রণোদনা ও বীজ সরবরাহ আগের বছরের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। সময়মতো কৃষক বীজ সরবরাহ না পেলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রবিশস্য উৎপাদন নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে।-এফএনএস


আরোও অন্যান্য খবর
Paris