স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর : রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষককে বেধড়ক পিটিয়েছে বিএনপির নেতা নাজমুল গনি পিন্টু ওরফে পিন্টু মেম্বারের ক্যাডার বাহিনী। এ ঘটনায় এলাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও সাধারন জনগনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। আহত দুই সহকারী শিক্ষককে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে জানাগেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ভালুকগাছী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. মোখলেস উদ্দিন জানান, গত ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে বিরাদহ বাজারে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে ব্যবহারের জন্য ভালুকগাছী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঢোল-বলা, সাঁইরেন নিতে বিএনপির কর্মী সমর্থককে পাঠান ভালুকগাছী ইউনিয়ন বিএনপি’র সহসভাপতি নাজমুল গনি ওরফে পিন্টু মেম্বার। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় এবং বিদ্যালয়ের ঢোল-তবলা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ভালুকগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম এবং মো. নূর মোমিন। ঢোল-তবলা নিতে আসা বিএনপি কর্মী সমর্থকরা তাদের নেতা পিন্টু মেম্বারকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবগত করলে তাদেরকে বিদ্যালয় থেকে চলে আসতে বলে বিএনপি নেতা নাজমুল গনি পিন্টু মেম্বার। পরে সেদিনেই বিকেল আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে বিএনপি নেতা নাজমুল গনি পিন্টু মেম্বারের বাহিনীর ১০/১৫ সদস্য ভালুকগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষকদের অশালীন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষকরা তাদের শান্ত হওয়ার জন্য বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী দুই শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম ও মো. নূর মোমিনকে সকলে মিলে এলোপাথাড়ি ভাবে পেটাতে থাকে। এসময় শিক্ষকদের বাঁচাতে এগিয়ে যান বিদ্যালয়ের দপ্তরী মো. মোখলেস উদ্দিন। তিনি শিক্ষকদের মারতে বাঁধা’র সৃষ্টি করলে তাকেও গলাধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় পিন্টু মেম্বারের বাহিনীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভালুকগাছী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী বিএনপি’র এক ত্যাগী কর্মী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার আগেই পিন্টু মেম্বার মানুষের সাথে যে দুর্ব্যবহার ও হুমকি -ধামকি সহ অশালীন আচরণ শুরু করায় স্থানীয় ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারগণ তার আচরনে বিব্রত। শিক্ষকদের সাথে একজন সিনিয়র নেতার এমন আচরনে দলের ইমেজ দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও জানান এলাকার ত্যাগী বিএনপির নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ দলীয় স্বার্থে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তিকে দলের সকল কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি দিয়ে এলাকায় শান্তি – শৃংঙ্খলা বজায় রাখতে উনারা কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।
বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ৫ আগস্ট এ দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে পিন্টু মেম্বার ভালুকগাছি হাই স্কুলের অফিস সহায়ক/দপ্তরি নিয়োগের জন্য চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে আসছে এবং উক্ত পদে তার নিজ ভাতিজা রিফাতকে নিয়োগের জন্য স্কুল কমিটির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন। ওই ব্যাক্তি আরও জানান যে, বিএনপি নেতা পিন্টু মেম্বারের ভাতিজা রিফাত নেশাগ্রস্থ ছেলে তাকে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া কোনো ভাবেই উচিত হবে না।
এবিষয়ে মারপিটের কথা স্বীকার করে ভালুকগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি অন্যায় কিছু বলিনি, কেন আমাকে শিক্ষার্থীদের সামনে লাঞ্চিত করা হলো, আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আল্লাহ হয়তো আমার ভাগ্যে এই ঘটনা লিখে রেখেছিলো। এই বিষয়ে আমার আর কোন অভিযোগ বা আপত্তি নেই। এবিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত স্কুল শিক্ষকদের বক্তব্যের বর্ননায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ওসমান গনি ওরফে পিন্টু মেম্বারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায় নি।
এবিষয়ে ভালুকগাছী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদ্যালয়ের ঢোল- তবলা, সাঁইরেন নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের মাঝে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে, শিক্ষার্থী অভিভাবকের সাথে শিক্ষকদের ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টি আমরা নিজেরা বসে সমাধান করে ফেলেছি জানিয়ে এই বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি তিনি। এবিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না বা কোন অভিযোগ পাননি বলে জানান।