জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ভুল নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। এনআইডি সংশোধনের আবেদন করে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর ইসির অফিসে অফিসে ঘুরছেন। যদিও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বলছে এনআইডি সেবা সহজ করার লক্ষ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর এনআইডি সেবা সহজ করতে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি সচিব। বর্তমানে ভুল এনআইডি নিয়ে প্রায় ৫ লাখ নাগরিক ভোগান্তি পোহাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এনআইডিতে ভুল থাকার কারণে অনেক ভুক্তভোগী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছে না, অনেকে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। আবার কেউ কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন পারিবারিক সম্পদের অধিকার থেকেও। কারো কারোর বেতন-ভাতাও বন্ধ রয়েছে। গত ৫ জুন পর্যন্ত এনআইডির অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১টি এবং প্রক্রিয়াধীন আবেদন ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৩টি। ওই সময় মোট আবেদন ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৪টি। তবে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা কমে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫০টিতে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াধীন আবেদনের সংখ্যা কমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫৮১টিতে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মোট সংখ্যা ৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৩১টিতে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, ইসি সচিবালয় এনআইডি সেবা সহজ করার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত। তাছাড়া ইসি সচিবালয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রতিদিন কতজনকে সেবা দেয়া হলো তা অফিস বোর্ডে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাছাড়া হারানো এনআইডির ক্ষেত্রে বাদ দেয়া হচ্ছে জিডির কপি দাখিলের নিয়ম। একই সাথে ইসির মাঠপর্যায়ে নিজস্ব ওয়েবসাইট করার পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে, যাতে নাগরিকরা ওয়েবসাইট থেকে সেবা পাওয়ার সব তথ্য জানতে পারেন। সূত্র আরো জানায়, এনআইডি সেবা ত্বরান্বিত করতে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। ঝুলে থাকা আবেদন স্বল্পসময়ের মধ্যে শূন্য পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সব কর্মকর্তাকে ইসি নির্দেশনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের আবেদন সাত ক্যাটাগরিতে নিষ্পত্তি করে। এর মধ্যে ক ক্যাটাগরির ১৫ হাজার ১৪০, ক-১ ক্যাটাগরির ১ হাজার ২৮৪, খ ক্যাটাগরির ৭৭ হাজার ৪০৩, খন্ড১ ক্যাটাগরির ৬ হাজার ৪৮৭, গ ক্যাটাগরির ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩০৪, গ-১ ক্যাটাগরির ৮ হাজার ৮২১, ঘ ক্যাটাগরির ৮ হাজার ২২১টি আবেদন জমা পড়ে আছে। আর এখনো ২৪ হাজার ৯৭১টি আবেদনের ক্যাটাগরি করা হয়নি। প্রক্রিয়াধীন আবেদনগুলোর মধ্যে সেন্ড ব্যাক টু সিটিজেন (তথ্যের ঘাটতিজনিত) ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার ২৩০টি, তদন্তে প্রয়োজন রয়েছে এমন আবেদন ৭৩ হাজার ৭২৫টি, শুনানির অপেক্ষায় ২২ হাজার ৬৭১টি এবং অতিরিক্ত তথ্যের ঘাটতিজনিত ৩৪ হাজার ৯৫৫টি আবেদন আছে। অর্থাৎ বর্তমানে মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার ৯৩১টি আবেদন সংশোধনের জন্য রয়েছে। এদিকে এর আগে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব শফিউল আজিম জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন সেবা সহজ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনবান্ধব করার জন্য। সে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এনআইডি সেবা সহজ করার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনলাইনে মিটিং করা হয়েছে।-এফএনএস