শুক্রবার

১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচারকের অভাবে কাটছে না লাখ লাখ মামলার জট

Paris
Update : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পর্যাপ্ত বিচারকের অভাবে দেশের আদালতগুলোতে লাখ লাখ মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে। আর মামলাজট নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেই। নির্বাহী বিভাগ থেকে ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর ১৫ লাখ ৭০ হাজার মামলা নিয়ে পৃথক হয় বিচার বিভাগ। এখন ওই বিভাগের ওপর এখন সোয়া ৪৩ লাখ মামলার পাহাড়। আইন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে মামলাজট নিরসনে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিচারিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে। অভিযোগ রয়েছে, বিগত সময়ে বিচার বিভাগকে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২১ সালে সারা দেশে বিচারাধীন মামলা ছিল ৩৭ লাখ। এরপর মামলাজট তো কমেইনি বরং এই সোয়া তিন বছরে বেড়েছে ৬ লাখ। জট না কমিয়ে বরং ভূতুড়ে মামলা দিয়ে জট বাড়ানো হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিলো ৪৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৫টি। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ২৭ হাজার ৮৬ এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৩টি। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলছে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩৬২টি মামলা। এর মধ্যে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৮ দেওয়ানি এবং ৩ লাখ ১০ হাজার ৬১৪টি ফৌজদারি মামলা। সূত্র জানায়, মামলার বিচার নিষ্পত্তিতে কোনো কোনো বিচারপ্রার্থীকে তিন যুগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিচার বিলম্বের কারণে মামলা পরিচালনার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ভোগান্তি। কিছু কিছু মামলার বাদী বিচার শেষ হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছেন। আবার বিচার হলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলার অনেক তথ্যপ্রমাণ হারিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো মামলার সাক্ষী মারা গেছেন। কিছু মামলার সাক্ষীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে বিচার শেষে সাজার হার কমে যাচ্ছে। শুধু বিচার বিলম্বের কারণে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার লাভের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সূত্র আরো জানায়, আইন কমিশন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনতে গত বছর একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জটের মূল পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। তা হচ্ছে- পর্যাপ্ত বিচারক না থাকা, বিশেষায়িত আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ না হওয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, জনবলের অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো। তাছাড়া অন্য কারণগুলো হলো- মামলার সুষম বণ্টন না হওয়া, প্রশাসনিক শৈথিল্য, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না হওয়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহির অভাব, আইনজীবীর আন্তরিকতার অভাব, দুর্বল মামলা ব্যবস্থাপনা, জমিজমা-সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণের অভাব, প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় মামলা নিষ্পত্তিতে ব্যবহারিক জটিলতা, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, ক্রমাগত শুনানির অভাব, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, নকল সরবরাহে অনিয়ম, উচ্চ আদালত কর্তৃক নথি তলব, সংশ্লিষ্ট মামলার আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন, মোকদ্দমা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ইত্যাদি। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে পদ সৃষ্টি করে কমপক্ষে ৫ হাজার বিচারক নিয়োগ করা হলে জট কমিয়ে মামলার সংখ্যা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব। তবে একসঙ্গে এত বিচারক নিয়োগ করলে তাদের গুণগত মানেরও অবনতি ঘটতে পারে। অবশ্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০ বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে মতামত দেওয়া হয়। এদিকে উচ্চ আদালতের একাধিক আইনজীবীর মতে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় যে পরিমাণ বিচারক ও আদালত থাকার কথা তার কোনোটাই নেই। বরং ভৌতিক মামলা দিয়ে মামলার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে। এই পাহাড়সম মামলাজট নিরসনে মহাপরিকল্পনা দরকার। মূলত বিচার বিভাগকে অকার্যকর করে রাখতে চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বতী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারে একটি কমিশন গঠন করেছে। আশা করা যায় বিচারপতি নিয়োগ আইন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠনসহ বিচার বিভাগের প্রয়োজনে প্রকৃতপক্ষে জরুরি বিষয়ে এ কমিশন সুপারিশ করবে।-এফএনএস

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris