শুক্রবার

১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁর এক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গড়েছেন কয়েক কোটির টাকার সম্পদ

Paris
Update : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সুমন আলী, নওগাঁ : অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন কাজ না করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর এক ভুমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই চাকরি করেই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটির টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। থাকেন কোটি টাকার ৫তলা বিলাসবহুল বাড়িতে। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি লিখিত অভিযোগ পাওযায় তদন্ত শুরু করেছেন জেলা প্রশাসন। অভিযুক্ত ওই ইউনিয়ন ভুমি সহকারি কর্মকর্তা নাম মৌদুদুর রহমান কল্লোল। বর্তমানে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ-এনায়েতপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
জানা গেছে- ১৯৯৮ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি উপ-সহকারী পদে যোগ দেন মৌদুদুর রহমান কল্লোল। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপরই কপাল খুলে যায় এ কর্মকর্তার। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর যখন যে ইউনিয়নে ভৃমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেখানে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। জমি খারিজ, খাজনা, নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে গেলেই তাকে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা। আর সেই টাকা না দিলে হয় না কোন কাজ। এমনকি টাকা দিলে হয় মৃত ব্যাক্তির নামেও জমির খারিজ। শুধু তাই নয় টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি ব্যক্তি নামে নামজারী করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আর এই ভাবেই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটির টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁ শহরের স্টাফ কোয়াটারের বিপরীতে প্রায় ৩কাঠা জমি ওপরে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল ৫তলা বাড়ি। সেই জমির দাম প্রায় ৭০ লাখ টাকা এবং আরও প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছেন সেই বাড়ি নির্মাণ। এছাড়াও সদর উপজেলার চকদেব মৌজায় ২৫ দশমিক ৩০৫ শতক জমি আছে। সেই জমির দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা। চকপ্রাচী মৌজায় আছে ৪১ দশমিক ৫ শতক। জমির দাম প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাক। চকবাড়িয়া মৌজায় ৮ দশমিক ৩৫ শতক জমি রয়েছে। দাম প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। খাগড়া মৌজায় রয়েছে ২৩৪ দশমিক ৫ শতক। দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা। বাঙ্গাবাড়িয়া মৌজায় রয়েছে ৮ দশমিক ২৫ শতক। দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। আরজি-নওগাঁ মৌজায় ১৭ দশমিক ৬৬ শতক জমি আছে। দাম প্রায় ১ কোটি টাকা। এছাড়াও শহরের নওজোয়ান টাওয়ারে তার স্ত্রীর নামে প্লট আকারে জমি রয়েছে। যার দাম প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
নওগাঁর সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারের চা বিক্রেতা ভুক্তভোগী আলম হোসেন বলেন, ৪ শতক জমি খারিজ করতে গেলে কল্লোল তার কাছে থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মাত্র ৩০০ টাকার চেক দেন। তিনি আরও বলেন- কল্লোল যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন সামনে একটা কটা রাখতেন। সেই কটার মধ্যে টাকা ছেড়ে দিতে হয়। তারপর চেক দেন। একই বাজারের সবজি বিক্রেতা (প্রতিবন্ধি) ফজলুর রহমান বলেন, তার সাড়ে তিন কাঠা জমি খারিজ করতে গেলে কল্লোল তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে লোকজন ধরেও ৭হাজার টাকা নেয়। ইকরতাড়া এলাকার রাজু সরদার বলেন- ১০ শতক জমি খারিজ করতে আসলে ১৩ হাজার টাকা নিয়ে চেক দিয়েছে ১৮০ টাকার। টাকা বেশি নেওয়ার বিষয়ে কিছু বললে খারিজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। শুধু আমি না যে কেউ তার কাছে জমির জন্য কোন কাজে গেলে তার সাথে এমন করতেন তিনি। নওগাঁ পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের আলম মণ্ডল বলেন- সোয়া ২ কাঠা জমি খারিজ করতে আসছিলাম কল্লোলের কাছে। এসময় তিনি ৫০ হাজার টাকা লাগবে না হলে খারিজের কাজ হবে না বলে জানান। পরে আর জমির খারিজ করা হয়নি। সদর উপজেলার দোগাছী এলাকার মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন- প্রথম দিন খাজনা দিতে গেলে বলে মৃত ব্যক্তি নামে খাজনা নেওয়া যাবে না। সেদিন ঘুরে আসার পর অন্য একজনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গেলে খাজনাও নেয় এবং খারিজের জন্য ১০ হাজার টাকাও নেয়। টাকা হলে সব কিছুই সম্ভব তার কাছে।
নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কায়েস উদ্দিন বলেন- শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কল্লোলকে জানালে তারা সার্ভে করে জানতে পারেন যে জায়গাটি সরকারি। পরে কল্লোলকে ম্যানেজ করে সরকারি জায়গাটি ওই দখলকারী ব্যক্তি অন্য মানুষের কাছে বিক্রি করেন। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় তারা আমার বাড়িতে এসে বিভিন্ন ধরণের হুমকিও দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন- কল্লোলের কাছে কোন সাধারন মানুষ জমি খারিজ, খাজনা, নামজারিসহ কোন কাজে গেলে তাদেরকে জিম্মি করে টাকা নিতেন। আর এইভাবই কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন তিনি। তার বাড়িতে গেলে কখনো মনে হবে না তিনি যে বেতনে চাকরি করেন সেই বেতনে এমন বাড়ি বানানো সম্ভব।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মৌদুদুর রহমান কল্লোল কোন ভুল নিউজ না করে নিজেদের মধ্যে বসে সমাধানের কথা বলেন। এ বিষয়ে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: সোহেল রানা বলেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মৌদুদুর রহমান কল্লোলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত একজন সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদনে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris