স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় রাজশাহীতে দুই হাতে জোড়া পিস্তল নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করা শীর্ষ সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেলকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেল রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি। তিনি নগরীর চণ্ডীপুর এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। গত ৫ আগস্ট রুবেলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত এক ডজন নেতা-কর্মী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। রুবেল আগে থেকেই একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক আইনেও মামলা রয়েছে। র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফিরোজ কবির জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে রুবেল কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকার দিকে আসছেন। পরে র্যাব-১০ যাত্রাবাড়ী ও র্যাব-৫ যৌথ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজের ওপর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল শিক্ষার্থী আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে র্যাব জানিয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, যেখানে গ্রেপ্তার হয়েছে, সেখানে কোনো মামলা থাকলে আদালতের মাধ্যমে রুবেলকে রাজশাহীতে আনা হবে। আর ওখানে কোনো মামলা না থাকলে সরাসরি রাজশাহীতে আনা হবে। রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার আসামি রুবেল। এখানে এনে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। নিজ এলাকা ছাড়াও নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ছিল রুবেলের দুর্র্ধষ ক্যাডার বাহিনী ও শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট। এই ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। হাফ ডজন মামলার আসামি হয়েও ২০২৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ অক্টোবর হাসিনা সরকারের পতনের দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে তৎকালীন মেয়র লিটনের নির্দেশে একটি শক্তিশালী শুটার বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। ওই শুটার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রুবেল। ওই দিন দুপুরে তালাইমারী এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা নগরীর সাহেববাজারের দিকে এগোতে থাকে। তারা শাহ মখদুম কলেজ এলাকায় পৌঁছালে রুবেলের নেতৃত্বে শুটার বাহিনী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুবেল মাথায় হেলমেট পরে দুটি পিস্তল দুই হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে গুলি ছুড়ছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব আনজুম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলারও আসামি জহিরুল ইসলাম রুবেল। তবে হাসিনা পালানোর পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রুবেলও গা ঢাকা দিয়েছিলেন। এদিকে ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাজশাহী নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া মহল্লা থেকে রুবেল ও তাঁর এক সহযোগীকে পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, চারটি গুলি ও ১২ হাজার ইয়াবাসহ আটক করেছিল কাশিয়াডাঙ্গা থানা-পুলিশ। ২০১৩ সালের মে মাসে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিহত হন মহানগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সারোয়ার হোসেন ডাবলু। ডাবলু শীর্ষ সন্ত্রাসী রুবেলের ভাই ছিলেন। টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগ কর্মী মাহফুজুর রহমান মাহফুজের (৩০) সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন যুবলীগ কর্মী মাহফুজ। ওই ঘটনার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় অক্টোবরে মাহফুজকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানান, ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে রুবেলের মায়া বাহিনী মাহফুজকে হত্যা করে। যদিও পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রুবেল হত্যা মামলাটি আপোশ করাতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।