অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা পাওয়া যাবে না। এ কারণে অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ওপর নির্ভর করতে হবে। আর এ কারণে রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে বলেও তাগাদা দিয়েছেন তিনি। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘অর্থ আইন, ২০২৪-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে আনীত পরিবর্তন’ এর ওপর আলোচনায় এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ করে ফাঁকি দেওয়া যায় না। কিন্তু আমাদের পরোক্ষ করে ঝামেলা আছে। কষ্ট দিয়ে কারও কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করবেন না। এসময় কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, করদাতাদের মনে যেন ভীতি তৈরি না হয়। তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন। এই মুহূর্তে অর্থের প্রয়োজন উল্লেখ করে সরকারি অর্থের অপচয় কমানোরও আহ্বান জানান উপদেষ্টা। বিদেশি ঋণে ঝুঁকে না পড়ে নিজস্ব উৎস থেকে অর্থের সংস্থান করতে জোর দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, জোর করে কারও কাছ থেকে কর আদায় করা হবে না। এখন থেকে জুলুম নয়, করদাতাদের স্বস্তি দেওয়া হবে। এনবিআরের আইনগুলোকে ব্যবসাবান্ধব করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের অনুরোধ করছি। জণগণের কাঁধে ঋণের বোঝা চাপছে, অথচ এনবিআর কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এখান থেকে বের হতে হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, করদাতাদের দেওয়া রাজস্ব বিভিন্নভাবে অপচয় হয় এমন কথা প্রচলিত আছে। এখান থেকে বের হতে হবে এনবিআরকে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. লুৎফুল আজীম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের মাঝে আয়করের সংস্কার প্রয়োজন। এ সময় তিনি অটোমেশনের পাশাপাশি কর কর্মকর্তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণেও জোর দিয়ে বলেন, এখানে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে। উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করবো নিজেরা নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে। তবে লক্ষ্য করতে হবে আমরা যেন পরমুখাপেক্ষী না হই। পরমুখাপেক্ষী হওয়ার বিপদ অন্তর্বর্তী সরকার টের পাচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি খরচ ও অন্য ব্যয় নির্বাহে অর্থ প্রয়োজন। সরকার যেন কোনো অর্থের অপচয় না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমাবো না। আমাদের ঘাটতি বাজেট থাকে। বাজেটের বড় অংশ বাইরে থেকে ঋণ হিসেবে আনতে হয়। দিন দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করবো নিজেরা নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে। তবে এটা ঠিক যে নিজেদের অর্থে হবে না, বাইরে থেকেও অর্থ আনতে হবে। তবে লক্ষ্য করতে হবে আমরা যেন পরমুখাপেক্ষী না হই। তিনি বলেন, একটা কথা আছে আপনার হাতটা যদি আমার পকেটে থাকে, আমি ডান দিকে গেলে আপনিও যাবেন। আমি বায়ে গেলে আপনিও বায়ে যাবেন। সেটা কিন্তু হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। দাতা সংস্থারা যেদিকে বলে যেতে, অবশ্য আমরা চেষ্টা করছি নিজেরা অ্যাসল্ট (প্রতিউত্তর) করতে। ডান দিকে যেতে বললে আমার যাওয়ার কথা বাঁদিকে, বাঁদিকে গেলে আমার যাওয়ার কথা ডান দিকে। সেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমরা চাই না তাদের ওপর নির্ভরশীল হতে। প্রকল্পগুলো মাঠ পর্যায়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় না। ফলে অর্থের অপচয় হয় জানিয়ে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, যেটা দরকার তার ভিত্তিতে যেন প্রকল্প আসে। এনবিআরের আইনকে ব্যবসাবান্ধব করার ঘোষণা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা যথেষ্ঠ রাজস্ব আদায় করতে পারছি না। আমরা ঘাটতি বাজেট করছি। পরবর্তী প্রজন্মের ওপর বেশি বেশি ঋণের দায় চাপিয়ে দিচ্ছি। করদাতারা তাদের দেওয়া করের অপচয় দেখতে চায় না। প্রতি বছর বড় অংকের টাকা আমরা কর ছাড় দেই। এটার বড় অংশ ঠিক করলে কর আদায় বাড়বে। আমরা সঠিকভাবে কর আইন প্রয়োগ করতে চাই। সবাইকে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের পরিচিতদেরও অনলাইনে রিটার্ন দিতে আহ্বান করবেন। আমাদের আইন-কানুন ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। ২০১২ সালে আমরা মুসক আইন করেছি, অথচ ১২ বছরে তার ইংরেজি ভার্সন হয়নি। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুতি নিতে পারবেন কীভাবে?-এফএনএস