স্টাফ রিপোর্টার : গত ৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দেশের সড়কগুলো ছিল পুরোটাই ট্রাফিক পুলিশ শুণ্য। ঐসময় দেশের অধিকাংশ গুরুত্ব সড়কগুলোতে দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বেশকিছু সংগঠণের সদস্যরা। রাজশাহী নগরীতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কঠোরতার কারণে পূর্বের ন্যায় চালকরা বাধ্য হয়েছিলেন সড়ক আইন মেনে গাড়ি চালাতে। উপরন্তু হাজারে মাত্র দু-একজন বাইকার চোঁখে পড়তো; যারা কিনা হেলমেটবিহীন বাইক চালানোর অপচেষ্টা করতো। কিন্তু, গত ১২ আগস্ট থেকে সড়কে পুণরায় ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরু করলেও সড়কগুলোতে তেমনভাবে ফেরেনি শৃঙ্খলা। চালকদের ভেতর তেমন একটা মান্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা সড়ক আইন মেনে গাড়ি চালানোর বিষয়টি। আইন অমান্যতার কারণে মাঝেমধ্যেই নগরীর বিভিন্ন সড়কে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনাকাঙ্খিত গাড়ির জটলা।
অন্যদিকে, নগরীর রাস্তাগুলোতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে হেলমেটবিহীন মটরসাইকলে চালানোর প্রবণতা। বিগত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলকারি বাইক চালকদের মাথায় লক্ষ্য করা যায়নি হেলমেট। হেলমেটবিহীন বাইকার এর সংখ্যা এখন অনেক। শতকরা প্রায় ৫০জন বাইকার গাড়ি চালানোর সময় মাথায় হেলমেট ব্যবহার করছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ বলেন, আগের মতো এখন আর বাইকারদের গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্সসহ অন্যান্য অত্যাবশকীয় কাগজপত্র যাচাইবাছাই করা সম্ভব হচ্ছে না। কেনো করা হচ্ছে না প্রশ্নের জবাবে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে অকপটে স্বীকার করেন, ৫ আগস্টের ভয়াবহতা আর প্রশাসনের উপর ক্ষোপ ঝাড়ার বিষয়টিকে। যার কারণে, আইন অমান্য করে যারা হেলমেটবিহীন বাইক চালাচ্ছেন তাদেরকে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ খুব একটা বাঁধাপ্রদান করছেন না বলে জানান অনেকেই। বিষয়টির সাথে আইন অমান্য করার প্রবণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে; ঠিক তেমনিভাবেই বাইকারের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ছে গাণিতিক হারে বলে মন্তব্য দায়িত্বরতদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোটরবাইক রাইড করার পূর্বশর্ত হলো মাথায় হেলমেট পরা। কারণ, মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে (দুর্ঘটনায়) মাথায় ইমপ্যাক্ট (সংঘর্ষকালে এক বস্তুর উপর অন্যবস্তুর অভিঘাত/ আঘাত) আসে সবার আগে। হেলমেটের সাথে জড়িয়ে আছে মহামূল্যবান মাথার সুরক্ষার প্রশ্নটি। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন’য়ে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ উইসকন্সিন হসপিটালস অ্যান্ড ক্লিনিকস’য়ের চিকিৎসক নাথানিয়েল পি. ব্রুকস বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে মোটসাইকেলে দুর্ঘটনার সময় মোটরসাইকেল-হেলমেট পরা থাকলে ‘সার্ভিকাল স্পাইন’ বা খুলি থেকে গলার পেছনে বা ঘাড় পর্যন্ত মেরুদন্ডে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমায়।” গবেষণায় আরও দেখা গেছে ‘সার্ভিকাল স্পাইন ইনজুরি’ বা সিএসআই হওয়ার সম্ভাবনা কমানোর পাশাপাশি আংশিকভাবে ‘সার্ভিকাল ভারটেব্রা’ বা মেরুদন্ডের কশেরুকা ফাটার ঝুঁকিও কমায়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৫৩২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৭ জন এবং আহত ১ হাজার ৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৯০৯ জন, অর্থাৎ ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশেরই বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছর মধ্যে। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আই মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ও সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সংগঠণটির আরো একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৫ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই মারা গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭৮ জন।
হেলমেট ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই কাজে ট্রাফিক পুলিশ পূর্বের ন্যায় কেনো তৎপর নয়? জানতে চাইলে নগর ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হেলেনা আকতার বলেন, দেশের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনো পুরোদমে অনূকুলে আসেনি। এছাড়া আমরাও দাপ্তরিকভাবে পূর্বের ন্যায় কাজ করতে পারছিনা। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুরোটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয় এখনো মেরামত করা হয়নি। হারিয়ে যাওয়া (লুন্ঠিত হওয়া) যানবাহন সংক্রান্ত মামলার নথি, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট-কম্পিউটার সহ অন্যান্য লজিস্টিক সার্পোট আগের মতো নেই। তাই কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে আমরা নিয়মিত কাউন্সিলিং করছি। উপর থেকে নির্দেশ আসা মাত্রই আমরা আবারো যাচাই বাছাই ও আইনী পক্রিয়ায় ফিরে যাবো।