পবা প্রতিনিধি : “ইঁদুরের দিন হবে শেষ, গড়বো সোনার বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যে রাজশাহীর পবায় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান উপলক্ষে নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দির্ঘদিন যাবত নওহাটা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগন ইঁদুর নিধন অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করছে। এছাড়াও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন দেওয়ান উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী ও কৃষকদের মাঝে ইঁদুর নিধন বিষয়ে করণীয় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রচারণার মাধ্যমে উৎসাহিত করছে। ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মলিহা রোজ জানান, ‘ইঁদুর মাঠের ফসল, খাদ্য শস্য, ঘরের কাগজ ও আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র নষ্ট করে থাকে। তাই সম্পদ রক্ষায় দ্রুত ইঁদুর ধ্বংস করতে হবে। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এন. এ. নাহিয়ান জানান, ‘ইঁদুর ছোট প্রাণি হলেও আমাদের অনেক ক্ষতি ও সম্পদ নষ্ট করে। তাই ইঁদুর জাতীয় শত্রু। এদেরকে যদি নিধন করি তাহলে আমাদের জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সহায়ক হবে। ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিদ আজাদ সাফি ও রাফিউন নুর রাফিদ জানান, ‘ইঁদুর কাঁটাকাটি করে এটা তার প্রকৃতিগত স্বভাব। দাঁত ছোট রাখার জন্য এরা প্রতিনিয়তই কাঁটাকাটি করে। যদি ইঁদুর কোনকিছু না কাটে তাহলে তার দাঁত অনেক বড় হয়ে যাবে। ইঁদুর কাঁটাকাটি করে যতটুকু ভক্ষণ করে তার চেয়ে দশগুণ কেটে নষ্ট করে। তাই ইঁদুরের উপদ্রব সহ আপদ-বালাই রুখতে এদের নিধন করতে হবে। উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইঁদুরের প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি, দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। অল্প বয়সে যে কোন পরিবেশে বাচ্চা দিতে পারে। একজোড়া প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুর বছরে প্রায় তিন হাজার বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। ইঁদুর নিধনে সবাই সচেতন হলে ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে সম্পদ রক্ষা পাবে।’অতিরিক্ত কৃষি অফিসার তন্ময় কুমার সরকার বলেন, ‘ইঁদুর একটি জাতীয় সমস্যা, প্রাণীটি অতি ক্ষুদ্র হলে কি হবে, এদের ঘ্রাণ ও শ্রবণ শক্তি প্রবল। বছরে আমাদের অনেক খাদ্যশস্য নষ্ট করে থাকে। ক্ষেত-খামারের ফসল ও বসতবাড়ির সম্পদের ক্ষতি রোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং পরিবেশের স্বার্থে সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। ইঁদুরের শত্রু বেজি, বিড়াল, সাপ, পেঁচা, শিয়াল, চিল, গুঁইসাপ এদের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উপদ্রব দিন দিন বাড়ছে।’ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসনিম বলেন, ‘ইঁদুর এমন একটি প্রাণী যে সবসময় মানুষের ক্ষতি করে এবং প্লেগ রোগসহ বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যই ইঁদুর নিধন করতে হবে। ইঁদুর মানুষের ক্ষতি ছাড়া কোন উপকারেই আসেনা। ইঁদুর নিধনের প্রক্রিয়াগুলো সর্ম্পকে কৃষক ও সাধারণ মানুষকে জানতে হবে। এসময় তিনি ইঁদুর দ্বারা বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ক্ষয়-ক্ষতি, জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে ইঁদুরের ক্ষতির প্রভাব, ইঁদুর নিধন পদ্ধতি এবং ইঁদুর থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন।’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের আয়োজনে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কৃষি অফিসার তন্ময় কুমার সরকার, নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ওমর আলী, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন দেওয়ান, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক সাবিনা সুলতানা, বিথী রানী ঘোষ, কামরুন্নাহার লায়লা, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাম্মেল হক, আব্বাস আলী প্রমুখ।