স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নাল উদ্দিন (৬০) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে শনিবার (১৮ মে) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগের রাজশাহী মহানগর এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, নয়নালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহাবুল আলম। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন- মহানগর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর, রেজায় করিম বুলবুল ও সেলিম রেজা বাইরন। এছাড়া মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক ও জনপদ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী ইউনিয়ন, স্যানিটারি মিস্ত্রি শ্রমিক লীগ, গ্যাস শ্রমিক লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সদর দপ্তর ও ওপেন লাইন শাখা, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়ন, জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রমিক লীগের শাহ মখদুম থানা শাখার নেতারা অংশ নেন। কর্মসূচিতে মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, যেখানে নয়নালের লাশ পাওয়া গেছে, সে স্থানটি সংরক্ষিত। নিরাপত্তাপ্রহরীরা অনুমতি না দিলে কেউ ঢুকতে পারে না। এমন একটি সংরক্ষিত এলাকায় লাশ পাওয়ার পরেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও কাউকে আটক করেনি। নয়নাল অসহায় গরিব ছিলেন বলে তার পরিবার বিচার পাচ্ছে না। তাহলে আমাকে মেরে ফেলা হলেও কি আমার পরিবার বিচার পাবে না? এভাবে কি চলতে পারে? মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী বলেন, ১২ ডিসেম্বর লাশ উদ্ধার হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৮ বা ৯ ডিসেম্বর নয়নালের মৃত্যু হয়েছে। লাশ পচে যখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল তখন সেখানে কেন ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল? ম্যানহোলে এক কোমরেরও কম পানি ছিল। একটা সুস্থ মানুষ কীভাবে সেই পানিতে পড়ে মারা গেল? ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার কোনো ফুটেজ কেন পাওয়া যায়নি? এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? আমরা মনে করি নয়নালকে হত্যা করা হয়েছে। মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি মাহাবুল আলম বলেন, প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি যখন তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসেন, শুধু তখনই প্রধান ফটক খোলা হয়। অন্য সব সময় বন্ধ থাকে। প্রভাবশালী ব্যক্তি বসলে নেতাকর্মীরা নিরাপত্তাপ্রহরীর অনুমতি সাপেক্ষে সেখানে ঢুকতে পারেন। তাহলে অনেক মানুষ সেখানে থাকার কথা। তার ভেতর একটা লোক ম্যানহোলে পড়ে গেলেও অন্য কেউ দেখার কথা। কেউ দেখতে পায়নি কেন? ১০ ফুট গভীরতার ওই ম্যানহোলে কোমরসমান পানি ছিল। সেখানে নয়নাল পড়ে গেলেও তার দাঁড়িয়ে থাকার কথা। সে কীভাবে এ পানিতে ডুবে মারা গেল? আর মাথায় আঘাতটাই বা কীভাবে হলো? আজ আমাদের কারো বাড়ির ম্যানহোলে এমন ঘটনা ঘটলে লাশ উদ্ধারের সময়ই চৌদ্দগোষ্ঠীকে ধরে নিয়ে যেত। রিমান্ডের পর রিমান্ড হতো। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যও আটক করেনি কেন? কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যতদিন পর্যন্ত নয়নালের মৃত্যুর সঠিক কারণ বেরিয়ে না আসবে ততদিন পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। এর মধ্যে আগামী ২৬ মে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর সকালে মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের ম্যানহোল থেকে নয়নালের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নয়নালের বড় বোন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। সম্প্রতি নয়নালের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ কর্মী নয়নালের মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ওপর থেকে ম্যানহোলে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন মহাগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুর রহমান। তবে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। তার ভাষ্যনুযায়ী, স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয়েছে নয়নালের। তাই এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।