সোমবার

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Norway

মান্দায় আত্রাই নদীর বাঁধে ভাঙন মহাদেবপুরে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

Reporter Name
Update : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মান্দা প্রতিনিধি
নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদের উভয়তীরের চার স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১৫০০ পরিবার। তলিয়ে গেছে এক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। এরইমধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নদের পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধের বেশকিছু এলাকা চরম ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মেরামতের একটানা কাজ করছে শ্রমিকেরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সরজমিনে দেখা গেছে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকাল থেকে আত্রাই নদে পানি বাড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদের পানি বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার পর্যন্ত এ নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে। নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আত্রাই নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের অন্তত ১০০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, এরইমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বস্তায় বালু ভর্তি করে মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে।
আত্রাই নদীর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত : নওগাঁর মহাদেবপুরে অত্রাই নদীর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেরিবাঁধ এলাকার কয়েকশ’ একর জমির ফসল, কলাবাগান, মন্দির পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেঁসে গেছে কয়েকটি পুকুরের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের রঞ্জনীতলা প্রহ্বল্লাদের বাড়ির কাছে এই ভাঙ্গন দেখা দেয়। দ্রুত এটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ১৫ থেকে ২০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এই ভাঙ্গনের ফলে নদীর মেইন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এই ভাঙ্গা স্থান দ্রুত মেরামত করা না হলে মেইন বাঁধও ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলা কমপ্লেক্সের পিছনে পশ্চিম দিকে রেইনট্রি তলা থেকে দোহালী পর্যন্ত এক কিলোমিটার দীর্ঘ আত্রাই নদীর পূর্বপাড়ের এই বেরিবাঁধ স্থানে স্থানে ভেঙ্গে যানচলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছিল। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব আধা ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি চোঁয়াতে থাকে। এরই জের ধরে এই বাঁধ আজ ভেঙ্গে যায়। এই এলাকার ইটভাটা মালিক হুমায়ুন কবির জানান, বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি দ্রুত এলাকায় ঢুকলে তার তিনটি পুকুর উপচে যায়। এতে তার চাষ করা লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেঁসে গেছে। এ ছাড়া বিশাল এলাকাজুড়ে কলার বাগান পানিতে ডুবে গেছে। সেখানকার মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জিত কুমার জানান, বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে মন্দির পুরো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান জানান, মহাদেবপুর পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। তবে তারা শুধুমাত্র মেইন বাঁধের মেইনটেনেন্স করেন। বেরিবাঁধগুলো দেখার দায়িত্ব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের। মহাদেবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন বাঁধ ভাঙ্গার কথা স্বীকার করে জানান, বাঁধটা এমনিতেই বড় আকারে ভেঙ্গেছে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার কিছু করার নেই। সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল জানান, বাঁধ ভাঙ্গার খবর পেয়ে সাথে সাথেই তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত এখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গা স্থান মেরামতের ব্যবস্থা করবেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি দ্রুত এই ভাঙ্গা স্থান দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিঞা জানান, তার এলাকায় আত্রাই নদীর পূর্বপাড়ের কয়েক কিলোমিটার এলাকা মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে। গ্রাম পুলিশ ও মেম্বাররা সার্বক্ষণিক বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছেন। ছোট খাট ভাঙ্গা স্থানে মাটি ফেলে মেরামত করছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris