রবিবার

১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

১৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

Norway

৭ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস, চারঘাটের ওসি প্রত্যাহার

Reporter Name
Update : সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চারঘাট প্রতিনিধি

রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এক গৃহবধূর কাছে তিনি সাত লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন, এমন একটি অডিও গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর রাতেই তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র মো. রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে চারঘাট মডেল থানার ওসির ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও স্থানীয় গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে।

ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে দেন ওই নারী। এর সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি রেকর্ডও সংযুক্ত করা হয়েছে। একই অনুলিপি সরাসরি ও ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে।

গৃহবধূর নাম সাহারা বেগম। তিনি চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কালু বেশ কিছুদিন ধরে কারাগারে। জেলা ডিবি পুলিশের ওসি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। কালু গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এতে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জেরে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাহারা বেগম।

লিখিত অভিযোগে সাহারা বলেছেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গেলে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের শয়নকক্ষে ডেকে নেন ওসি মাহবুবুল আলম। প্রথমে ওসি তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। এরপর কথা বলতে শুরু করেন।

ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁর কথা ছাড়া কারও কথা শুনি না।’ চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে মামলা দেওয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’ এরপর গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’

এরপর ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছ। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।’ ওসি আরও বলেন, ‘মুক্তা (চারঘাটের মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা) অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদক ব্যবসা) করবে।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকের আবারও সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। কথা সব ভেঙে বলব না। কথা সব হয়ে গেল; যদি আতিকের বদলি চাও ২ লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’ চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুলকে আরও বলেন, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ— ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই ওপরে কাজ করবে।’ অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

অডিও ফাঁস হবার পর মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাহবুবুল বলেন, অডিও রেকর্ডটি আমি এখনো শুনিনি। তবে যে ধরনের অভিযোগের কথা বলছেন সে ধরনের কথা ওই মহিলার সাথে আমার হয়নি। ওসিকে রাতে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করার পর রবিবার সকালে এ বিষয়ে জানতে তাকে আবার একাধিক ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তিনি ফোন কেটে দেন। পরে চারঘাট মডেল থানাতে গেলেও থানা থেকে সকালে ওসি বের হয়ে গেছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসাবে কাজ করেন। চারঘাট এলাকায় তাঁর সোর্সের মাধ্যমে অনেক মাদক র‌্যাব-পুলিশ জব্দ করেছে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তিনি সদস্য পদে নির্বাচন করেন। এরপর থেকে এলাকার মুক্তা, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ বাঁধে। এর জের ধরে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করায় তারা। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ও গণমাধ্যম মুখপাত্র মো. রফিকুল আলম বলেন, ওই নারীর লিখিত অভিযোগ তাঁরা এখনো হাতে পাননি। আজ পেতে পারেন। তবে অভিযোগের সঙ্গে দেওয়া অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য তদন্তের স্বার্থে ওসিকে চারঘাট মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris