চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
পরিবেশ আইন না মেনেই আবাসিক এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের পাইকোড়তলা-টিকরামপুর রোডে গড়ে উঠেছে অটোরাইস মিল। এসব অটোরাইস মিলের কালো ছাই উড়ে যাচ্ছে মিলের আশেপাশে থাকা বসতবাড়িতে। এমনকি ঘরের মধ্যেও পৌঁছে যাচ্ছে ছাই। খাবারে ও পথচারীর চোখে-মুখে ছাই পড়ার কারনে বিড়ম্বনায় পড়েছে স্থানীয়রা। একাধিকবার মিল মালিককে বললেও দূরে ছাই না ফেলে রাস্তার ধারে ফেলে রাখা হচ্ছে। এমনকি ছাই যাতে না উড়ে তাই পানি দেয়ার অনুরোধ করলেও তা করেননা মিল মালিক। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। জানা যায়, শাপলা অটো রাইস মিল মালিক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও তাতে কোন সুরাহা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নবম শ্রেণীর ছাত্রী সাদিয়া আফরিন জানায়, গত দেড় বছর থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি। তখন থেকেই বাড়ির বিপরীত দিকে রাস্তার অপর দিকে থাকা অটোরাইস মিলের ছাই উড়ে আসে। এমনকি বাড়ির খাবারে ছাই পড়ে যায়। দরজা-জানালা কিছু খুলে রাখতে পারিনা। বারবার বলা হলেও আমাদের কথায় কোন গুরুত্ব দেন না মিল মালিক। পথচারী তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা ব্যবহার করে শহরে যাওয়া-আসা করি। কিন্তু এখানে আসলেই আগে ভাবি, কিভাবে দ্রুত অটোরাইস মিল পার হব। কারন চোখে-মুখে, শরীরে ও পোশাকে ছাই উড়ে পড়ে যায়। আবাসিক এলাকায় শহরের মধ্যে কিভাবে এমন কাজ করতে পারে, বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হয় না। আমরা এর প্রতিকার চাই।
নাহিদ, সাকিব, আরিয়ানসহ কয়েকজন স্কুলছাত্র প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। তারা জানায়, এই রাস্তা দিয়ে একবার গেলে কাপড়চোপড় না খুলে ঝাড় না দিলে থাকা যায় না। স্কুলড্রেস প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হয় অটোরাইস মিলের ছাইয়ের কারনে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই এলাকার মানুষজন এমন কর্মকান্ডে অতীষ্ট। আমরা অটোরাইস মিলের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু আমরা চাই, তা যথাযথ নিয়ম মেনে চলুক। ছাইগুলো দূরে কোথাও ফেলতে পারে। কিন্তু তা করেনি। রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এমনকি যাতে না উড়ে যায় তাই পানি দিতে বললোও দেয় না।
গৃহবধূ সায়েমা খাতুন জানান, রান্না করার সময়েও ছাই উড়ে হাঁড়িতে পড়ে যায়। বাড়ির পাশে থাকা ছাই নিয়ে কোন বিপদে আছি শুধু আমরাই জানি। অনুরোধ প্রতিবাদ করে কোন লাভ নাই। কারন অটোরাইস মিল মালিক অনেক প্রভাবশালী লোক। তাই প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না। এবিষয়ে কথা বলতে শাপলা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, পরিবেশ আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় অটোরাইস মিল স্থাপন করা যাবে না। এমনকি এতে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনপ্রকার অনুমোদনও দিবে না। ছাই উড়িয়ে এভাবে পরিবেশ নষ্ট করা পরিবেশ আইন পরিপন্থী কাজ। আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রওশন আলী জানান, জেলা শহরের মধ্যে পরিবেশ নষ্ট করে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করলে ও অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।