শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী সিটিতে নির্বাচনী মাঠ কাঁপাচ্ছেন নারীরা

Paris
Update : শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন। মেয়র প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী বা সমর্থক হয়ে এবারের নির্বাচনী মাঠে দৌড়ঝাঁপে পুরুষদের তুলনায় এগিয়ে আছেন নারীরা। নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই লক্ষ্য করা গেছে মহিলা কর্মীদের পদচারণার আধিক্য। সকাল বিকেল আর সন্ধ্যাকালীন সময়েও হাতে লিফলেট নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে পাড়ামহল্লায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন মহিলারা। আর বিকাল হলে নির্বাচনী প্রচারণায় একেকটি ওয়ার্ডে স্বস্ব প্রার্থীদের হয়ে মাঠে কাজ করছেন হাজার হাজার নারী। প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে চার থেকে পাঁচ জন কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলে তাদের হয়ে নির্বাচনী কর্মকান্ডে প্রতিদিন অংশগ্রহণ করছে হাজারখানেক নারী। এছাড়াও ওয়ার্ডভিত্তিক নানা কর্মীসভা, মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠকগুলোতেও মহিলাদের উপস্থিতির সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন ভোটার রয়েছেন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এরমধ্যে এবার ৩০ হাজার ১৫৭ জন তরুণ-তরুণী প্রথম ভোটার হয়েছেন। গত বছর মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার। সাধারণ মানুষের কথায় রাজশাহী সিটিতে নির্বাচনী মাঠ কাঁপাচ্ছেন নারীরা।

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের উপস্থিতি বেশি কেনো জানতে চাইলে বেশ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী জানান, পুরুষরা সুযোগ পেলেই কিছুটা ফাঁকি দেবার চেষ্টা করে। এছাড়া অনেকেই আছেন দায়সারা গোছের কাজ করেই চম্পট দিচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ থেকে। পক্ষান্তরে মহিলাকর্মীরা নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথার্থভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনমূর্খী কর্মকান্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণের আধিক্যতার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাসাবাড়িতে গিয়ে প্রার্থীর প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করার ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে মহিলা ভোটাররা প্রাধান্য বেশি দেন। দলবদ্ধ পুরুষের বহর দেখলে অনেকেই বাসাবাড়ির দড়জা খুলতে চান না। তাই মহিলাকর্মীরাই প্রচার প্রচারণায় বেশি প্রাধান্য পান বলে মন্তব্য প্রার্থীদের। তবে, মহিলাদেরকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন পুরুষরাই। এছাড়াও প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে রাস্তা পারপারের সময়ে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখছেন পুরুষরা। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে মহিলাদের দলবদ্ধ হয়ে রুটিং মাফিক কাজ করার প্রবণতা এবারের সিটি নির্বাচনে সবার নজর কেড়েছে ।

সরেজমি দেখা গেছে দুপুরের তপ্ত রোদ আর বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে পিচঢালা গরম সড়কের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে প্রতীক আর প্রার্থীর জন্য প্রচার প্রচারণায় অংশ গ্রহণের বিষয়টি নগরবাসির মন কেড়েছে। রাসিকের ১৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুলসুম আরা, জেসমিন, সীতা রাণী জানান, বৃষ্টিহীন এই অসহনীয় গরমে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত সময় পার করলেও দল, প্রতীক আর পছন্দের প্রার্থীর জন্য সেই কষ্টকে খুব বেশি কষ্ট মনে হচ্ছে না। তাছাড়া বছরজুড়ে নানাবিধ সরকারি সুযোগ সুবিধা আর নাগরিক সেবা গ্রহণের বিপরীতে পাঁচ বছর পর পর এমন কষ্ট করাটা একপ্রকার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বলেই মনে করি আমরা। এটাও সত্য যে, অন্য সময়ের চাইতে এবারের গরমের তীব্রতা অনেক বেশি।

এদিকে, ১৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মরিয়ম, ছবি, নাসিমা, হ্যাপিসহ আরো অনেকেই জানান, লিটন ভাইয়ের দলীয় প্রতীক নৌকা আর কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে মাঠেঘাটে কাজ করতে একধরণের আনন্দ উদ্দীপনা আমাদের মাঝে কাজ করছে। যদিওবা এবারের বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মাঝেমধ্যে কষ্টের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলেও দলের জন্য সেটুকু কষ্ট সহ্য করাটা আমাদের জন্য এব প্রকার চ্যালেঞ্জ বলেই আমরা মনে করি। গরমের তীব্রতা থেকে কর্মীদের রক্ষার্থে দল ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দশটা অবদি নির্বাচনী মাঠে কাজ করার জন্য। আবার দ্বিতীয় ধাপে বিকেল ৪:৩০ কিংবা ৫ টার পর থেকে সন্ধ্যা অবদি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন মহিলারা বলেও জানান তারা।

নগরীর ১৬, ১৭, ২১ ও ২৩ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখাগেছে, প্রতিদিন হাজারো মহিলা দলবদ্ধ হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও পাড়ামহল্লার বাসাবাড়ি গিয়ে বিতরণ করছে প্রার্থীদের প্রচারমূলক লিফলেট। কোথাওবা দলবদ্ধ হয়ে দিচ্ছে শ্লোগান। তবে, প্রধান সড়ক পাড়াপাড় হবার সময় অনেকেই পড়ছেন বিপাকে। দ্রুতগতিতে চলন্ত যানবাহনের কারনে মাঝেমধ্যেই কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে মহিলাকর্মীদের। ওয়ার্ডভিত্তিক পাড়ামহল্লা কমিটি গঠণে মহিলাদের অগ্রাধিকারের বিষয়টিও তুলে ধরেণ অনেকেই। ১৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবি, আনোয়ারা ও শিল্পীসহ অন্যান্যরা জানান, এই গরমে নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে একটু কষ্ট হলেও নিজনিজ প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে এতটুকু কষ্ট তো করতেই হবে। আমরা সেটিই করছি। কারণ, নিজেদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হলে গরমের এই কষ্টগুলো ম্লান হয়ে যাবে আনন্দে ।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris