শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচারকের কাছে এসপির ফোন আদালত অবমাননা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ: হাইকোর্ট

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

এফএনএস

উচ্চ আদালতের বিচারকের কাছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) ফোন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, বেশি স্বচ্ছতার জন্য কন্টাক্ট (যোগাযোগ) করে? এটি পেশাগত অসদাচরণ। আদালত অবমাননার শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মানিকগঞ্জের মো. রুবেল হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের বেঞ্চ এ কথা বলেন। তদন্তে আরও সময় চেয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, অধিক তদন্তের জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আরও ৯০ দিন চাচ্ছেন। পুলিশ সুপার ফোন কল করেন। আদালতের জন্য এটি বিব্রতকর। উনি কি এটি করতে পারেন? এদিকে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৭ জুলাই দিন ঠিক করেন আদালত। এই সময় পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। আদালতে এদিন আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি। ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে ২ মার্চ জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে ৫ মার্চ হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নীপতি। আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৪ মার্চ রুল দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে কেস ডকেটসহ আদালতে উপস্থিত হন এসআই মাকসুদুর। শুনানি নিয়ে গত ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। পুলিশ সুপারের নিচে নন-পিবিআইয়ের এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি অধিক তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। অধিক তদন্তের সময় চারটি বিষয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে বলা হয়। এরমধ্যে বাদী যখন সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার করেন, তখন বর্তমান অভিযুক্তকে (সোহেল) জড়িত করে অথবা এজাহারে বাদী সই করেছিলেন কি না, নির্যাতন বা ভয়ভীতি দেখিয়ে সোহেলের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে কি না, তাও তদন্ত করতে বলা হয়। একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশে তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই মাকসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এ নির্দেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ৬ এপ্রিল ওই অংশটুকু আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। তবে হত্যা মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বহাল থাকে। আগের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বলেন, হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। কয়েকজন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। মামলার বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলের ডিজিটাল এভিডেন্স (সেল, কললিস্ট ইত্যাদি) সংগ্রহ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তসহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মামলার তদন্তে আরও সময়ের প্রয়োজন। এসময় তদন্তের জন্য আরও ৯০ কার্যদিবস সময় বর্ধিত করার আরজি জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। তখন আদালত বলেন, অধিক তদন্তের জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আরও ৯০ দিন চাচ্ছেন। পুলিশ সুপার ফোন কল করেন। আদালতের জন্য এটি বিব্রতকর। উনি কি এটি করতে পারেন? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বলেন, কোর্টের মর্যাদা সবচেয়ে বড়। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ও আদালতের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। আদালতের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, তা বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনে রয়েছে। কোর্টের মর্যাদা সমুন্নত না রাখলে আমাদের মূল্যায়নও থাকবে না। পুলিশ সুপার কোর্টকে ফোন করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছেন। আদালতের উদ্বেগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ২৪ ঘণ্টায় এক তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেন। আদালত ৬০ দিন সময় দিলেও অধিক তদন্তের প্রতিবেদন দিতে পারলেন না। শুনানি নিয়ে আদালত ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন পরবর্তী শুনানির জন্য বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে বলে জানান আদালত।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris