শনিবার

২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৮ জন আহত ৯ শতাধীক

Paris
Update : শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

এফএনএস
ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অনন্ত ২৮৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ভারতের চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে ছিল, আর এই লাইন দিয়ে ইয়েশভান্তপুর-হাওরা এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দেশটির দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা এ তথ্য জানায়। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়। রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগর বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সেসময় ঐ লাইন দিয়ে হাওরা এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনটির তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগর বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি’র মূল দুই লাইন দিয়ে মুখোমুখি পার করার কথা ছিল। হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওরা এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়। অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে ইয়েশভান্তপুর-হাওরা এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমন্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। দ্য হিন্দু পত্রিকা বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেনটি ব্যবহার করে থাকেন।
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি থেকে যা জানা গেছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে ট্রেনের চারটি বগি উল্টে থাকতে দেখা যায়। কয়েকটি বগি একটি আরেকটির ওপরে উঠে আছে। কিছু বগি বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মালবাহী ট্রেনের ওপরে একটি ট্রেনের ইঞ্জিন উঠে থাকতে দেখা যায়। রেললাইন সহ আশেপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাটপড় এলোমেলোবাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালীন কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়। দুর্ঘটনায় অনেকেরই হাত বা পা কাটা পড়েছে বলে বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া কারো কারো জীবন বাঁচানোর জন্য হাত, পা কেটেও বের করতে হয়েছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মানুষ বলছেন যে বগির ভেতর থেকে এখন আর কোনো আওয়াজ আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে যে বগির নিচে আর কেউ চাপা পড়ে নেই। তবে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। উদ্ধারকাজ চালাতে ও আহতদের চিকিৎসায় ভারতের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব গত শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শীঘ্রই বোঝা যাবে।’ এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’ প্রাথমিক অবস্থায় দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা হতাহতদের উদ্ধারকাজে সহায়তা করছিলেন। আহত যাত্রীদের হাসপাতালে নিতে সাহায্য করছিল স্থানীয় বাস কোম্পানিগুলো। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সেসময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ঐ দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। টুইটে তিনি লেখেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। ভুক্তভোগীদের সহায়তা দেওয়া হবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এ দুর্ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেছেন। রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রূপি করে দেওয়া হবে। এছাড়াও গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris