বুধবার

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইমরানকে গ্রেপ্তার পর উত্তাল পাকিস্তান

Paris
Update : বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

এফএনএস
পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও খাইবার পাকতুনখাওয়া প্রদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর সৃষ্ট রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। পাঞ্জাব সরকারের অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০ কোম্পানি সৈন্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কাজ করবে সেনাবাহিনী। এদিকে ব্যাপক ধরপাকড়ও চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) আইনজীবী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। তবে ইমরানের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেছেন। তবে তার আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদনের আগে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে তাকে যে কায়দায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা অন্যায় হয়েছে এবং সেটির ফয়সালা আগে চাচ্ছেন।
অগ্নিগর্ভ পাকিস্তান : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন তার সমর্থকরা। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে ঢুকে পড়ে এবং লাহোরে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বাসায় হামলা চালায়। বিক্ষোভে এখনো পর্যন্ত তিনজন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। বিবিসি উর্দু সার্ভিস জানিয়েছে, পেশাওয়ারে দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসছে প্রতিবাদ করার জন্য। গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খানকে দুর্নীতির এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

এর পরই পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। লাহোর আর করাচিতে পুলিশ মি. খানের সমর্থকদের লক্ষ্য করে জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাস ছেড়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে পেশাওয়ারেও। তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের কর্মীরা সেনাবাহিনী সদরদপ্তরের এক নম্বর গেটে পৌঁছায়। এ সময় একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গেটের বাইরে পিটিআই কর্মীরা ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা জোর করে গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক খালিদ চৌধুরী বলেন, মুরি রোডে একটি সিকিউরিটি পোস্টে আগুন ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী লাহোর ক্যান্টনমেন্টে কর্পস কমান্ডার হাউজের বাইরে জড়ো হয়। বিবিসির ফারকান এলাহি বলেন, লাহোর ক্যান্টনমেন্ট কয়েকটি পুলিশ ভ্যানে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। ইসলামাবাদের রাস্তায় শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানী থেকে বের হওয়া ও ঢোকার প্রধান মহাসড়কটি অবরোধ করে রেখেছিল। পিটিআই সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জল কামান ছুঁড়েছে। মানুষ রাস্তার সাইন উপড়ে ফেলেছে এবং রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচলের ব্রিজ ভেঙে ফেলেছে, বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করেছে এবং পাথর ছুঁড়েছে। সে সময় ঘণ্টাখানেকের মত ওই এলাকায় থাকা বিবিসির সংবাদদাতা সেখানে পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তাদের দেখেননি। খানের সমর্থকরা বেশ কিছু শহরে সুরক্ষিত সেনা ছাউনির বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করায় তারা ক্ষুব্ধ। ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে,’ বলছেন ফরিদা রওদাদ।

‘আমরা আর কী করতে পারি? পাকিস্তানে আর কী করার আছে? আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কখনো কোনো কথা বলিনি, বললে হয়ত ভালো করতাম!’ তিনি বলেন, ‘এখন একটা নৈরাজ্য চলুক, বিশৃঙ্খলা ঘটুক। ইমরান না থাকার মানে পাকিস্তানে আর কিছু নেই। ক্ষমতা হাতে নেবার মতো আর কেউ এখানে নেই।’ টুইটারে পোস্ট করা লাহোরে বিক্ষোভের ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের বাসভবন জনতা ঢুকে পড়েছে এবং আসবাবপত্র ও বাসার ভেতরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। রয়টার্স খবর দিচ্ছে প্রধান বন্দর শহর করাচিতে বিক্ষোভকারীরা প্রধান সড়ক অবেরাধ করে রেখেছে।
রয়টার্স বলছে দক্ষিণ পশ্চিমের কোয়েটা শহরে ইমরান খানের সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে ছয়জন পুলিশ কর্মকর্তা সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গত ১৫ মার্চ লাহোরে তার বাসভবনে এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইমরান খান বলেন সরকার তাকে কারাগারে বন্দি রাখতে চায় যাতে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন মঙ্গলবার ইসলামাবাদে আদালত চত্বর থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত মি. খান আজ আদালতে হাজিরা দেন। তিনি বলছেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গত বছর এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরাখাস্ত করা হয়। সেসময় থেকে তিনি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবছর আরও পরের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবার কথা। পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপির বৈধতা দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমরান খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। ইমরান খান কোনোরকম আইনভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করার আগে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন তিনি তার বিরুদ্ধে নেয়া যে কোন পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত আছেন। ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হবে কি হবে না এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী তার লাহোরের বাসভবনে এর আগে বেশ কয়েক বার তাকে আটক করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাতে বারবার বাধা দিয়েছে ইমরান খানের সমর্থকেরা। চলতি বছরের মার্চ মাসেও ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছিল দেশটির পুলিশ। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডন তখন তাদের খবরে জানায় যে ইমরান খানের দলের এক নেতা এই অভিযান বন্ধ করার জন্য পিটিশন দায়ের করলে আদালত পুলিশের অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আমির মির বিবিসিকে তখন বলেছিলেন লাহোরের একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যাতে ঠিক মতো হতে পারে সেজন্য পুলিশ ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের অভিযান স্থগিত করে। এর আগে ইমরান খান বলেন যে তার বাসভবনে আধাসামরিক বাহিনীর এই অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী বেআইনিভাবে বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে ইমরান খান বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব তখন বলেছিলেন যে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশ অনুসারে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল। তিনি তখন অভিযোগ করেছিলেন যে গ্রেপ্তার এড়াতে ইমরান খান তার দলের কর্মী, নারী ও শিশুদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। গত নভেম্বর মাসে সমাবেশ চলাকালে তাকে হত্যার চেষ্টার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে দায়ী করেন ইমরান খান। তাকে হত্যা চেষ্টায় গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছিলেন ইমরান খান। সামরিক বাহিনী ওই অভিযোগ অস্বীকার করলে ইমরান খান মঙ্গলবার আদালতে যাবার আগে এক ভিডিও বার্তায় জোর দিয়ে আবারও ওই অভিযোগ তোলেন। ‘আমার মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। ওই ব্যক্তি আমাকে দুবার হত্যার চেষ্টা করেছে। আর যখন তদন্ত হবে আমি প্রমাণ করবো যে ওই ব্যক্তি আমাকে হত্যা করতে চেয়েছেন এবং তার সাথে পুরো এক বাহিনী জড়িত। সবাই জানে যে কে তিনি। আমার প্রশ্ন হলো- একটি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কি এফআইআর করার কোনো অধিকার নেই?’- ভিডিওতে এমন বক্তব্য দেন তিনি। প্রায় সাত মিনিটের ওই ভিডিওতে নানা অভিযোগ করেন ইমরান খান। এরপরই তাকে আদালত চত্বর থেকে আটক করা হয়। ইমরান খান তাকে হত্যার চক্রান্ত করার জন্য সেনা বাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ করার পর সোমবার সামরিক বাহিনী তাকে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ করার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দেয়। সূত্র : জিও নিউজ, আল জাজিরা, বিবিসি ও অন্যান্য


আরোও অন্যান্য খবর
Paris