শুক্রবার

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বসন্ত উৎসব আর ভ্যালেন্টাইন-ডে পালন হলো উচ্চমূল্যের ফুল দিয়ে!

Paris
Update : বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গতকাল রাজশাহী মহানগরীতেও পালিত হলো বসন্তবরণ উৎসব। ‘বসন্ত আর ভ্যালেন্টাইন ডে’ একইদিনে হওয়াতে আনন্দঘণ পরিবেশ যেনো বৃদ্ধি পেয়েছিল সমানতালে। দুটো দিবসের আনন্দ অনেকাংশেই নির্ভর করে প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা আর ভালবাসা জানানোর। তাই স্বাভাবিক কারনেই গতকাল মঙ্গলবার (১৪.২.২৩) নগরীজুড়ে ছিল ফুলের বিকিকিনির মহোৎসব। এছাড়াও পহেলা বসন্ত পালন করতে ছেলে-মেয়েদের সাজসোজ্জাতেও ছিল ভিন্নতা। হলুদ-লাল আর সাদা শাড়ির পাশাপাশি মেয়েদের হাতে ও মাথায় ছিল ফুল আর ফুলের মালা ও ডালার ছড়াছড়ি। ছেলেরাও পড়েছিল হলুদ আর লাল পাঞ্জাবি। শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল উপচে গড়া ভিড়।
এবারের বসন্ত উৎসব আর বিশ্ব ভালবাসা দিবসে অন্যান্য বছরে চাইতে ফুলের বিক্রি ছিল তুলনামুলক অনেক কম বলে জানান বিক্রেতারা। সাধারণ সময়ের চাইতে গতকাল ফুলের দাম ছিল কয়েকগুণ বেশি বলেও জানান ক্রেতারা। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন, শুধুমাত্র গোলাপের দামটা একটু বেশি। আর অন্যান্য ফুলের দাম খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি। অন্যদিকে, ক্রেতারা বলছেন বিশেষ দিনগুলোতে বিক্রেতারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো হাকান ফুলের দাম। তাই হয়তো এবার ফুলের বিক্রি তুলনামূলক কম বলে মন্তব্য ক্রেতাদের।
নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আরডিএ মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পার্শ্বে প্রায় ১৫ জন বিক্রেতা ফুলের পসরা বসিয়ে বিক্রি করেছেন ফুল। গতকাল গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতিটি একশ টাকা করে। জিপশি আর একটি গোলাপ ফুলের বান্ডেল বিক্রি হয়েছে দোকান ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। মাঝারি একটি ফুলের ডালা বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। এছাড়া স্পেশাল ছোট্ট একটি ফুলের ডালা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকায়। গ্যাডোলিয়াস ফুলের একটি স্টিক বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা করে। গতকাল জারবেরার দাম ছিল প্রতিটি ৩০ টাকা। রজনিগন্ধার একটি স্টিক বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা করে। গাদাফুলের দর ছিল একশ টাকা ‘শ’। চন্দ্রমল্লিকা প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়।
ফুলের দাম এতো বেশি কেনো জানতে চাইলে সাহেব বাজারের ফুল বিক্রেতা উজ্জল ও খোরশেদ আলী জানান, যশোরের গদখালি এলাকা থেকে রাজশাহী শহরের অধিকাংশ ফুল বিক্রেতা ফুল কেনেন। এবার চাষিরা ফুলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া, আমরা যে ফুলগুলো সেখান থেকে কিনে আনি সেগুলো অবিক্রিত থেকে গেলে আমাদের লোকসানের পাল্লা ভারি হয়ে যায়। রাজশাহী শহরের উপকন্ঠে যদি যশোরের মতো ফুলের চাষ করা যেতো তবে ফুলের দাম সারাবছরই কম থাকতো। এছাড়া বিক্রেতারা আরো বলেন, গেল করোনা আর রমজান মাস মিলে প্রায় তিন বছর আমরা তেমন ভাবে ফুলের ব্যবসা করতে পারিনি। এবারও প্রায় একই অবস্থা। এবার জাতীয় কোন দুর্যোগ না থাকলেও ক্রেতা সমাগম তুলনামূলক অনেক কম। একই দিনে বসন্ত আর ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হওয়াতে একজন ক্রেতা একবার ফুল কিনে দুটো দিবস একসাথে পালন করেছে। এছাড়াও, বিশেষ এই দিনগুলোতে অনেকেই ফুলের ব্যবসা করেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। যার কারনে এবার ক্রেতা সমাগম অনেক কম হয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বিশেষ দিবস আসলেই বিক্রেতারা নানা অযুহাতে ফুলের দাম বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। এটা এক ধরনের সুযোগের সদ ব্যবহার বলে মন্তব্য ক্রেতাদের। এই দিবসগুলো সাধারণত শিক্ষার্থীরাই বেশি পালন করে থাকে। তাই বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের কয়েকগুণ দাম বৃদ্ধি পেলে আনন্দ-উল্লাসে পরে চরম ভাটা। বেশ কয়েকজন বিক্রেতা প্রতিবেদককে জানান, রাজশাহী শহরে সারাবছরই ফুলের রয়েছে পর্যাপ্ত চাহিদা। যশোর থেকে ফুল কিনে এনে ব্যবসা করাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রাজশাহীতে যদি বাণিজ্যিক ভাবে ফুলের চাষ করা হতো তাহলে কম মূল্যে ক্রেতারা ফুল কিনতে পারতো। ব্যবসায়িরা আরো জানান, রাজশাহী শহরে প্রতিসপ্তাহে যশোর থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার ফুল কেনা হয়। নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে অনেকেই ফুল কম কেনেন। রাজশাহীর মোহনপুর, দারুশা ও নওদাপাড়ার কয়েকটি নার্সারিতে বাণিজ্যিক ভাবে ফুলের চাষ করা হলেও বিক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় সেগুলো যতসামান্যই বলা চলে। রাজশাহীতে রয়েছে বাণিজ্যিক ভাবে ফুল চাষের চমৎকার একটি সম্ভাবনা বলেও মন্তব্য ফুল বিক্রেতাদের।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris